চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা ধরে রাখার আহবান বিদায়ী পিএসসি চেয়ারম্যানের

আগে মমতা ও সততা, এরপর দক্ষতা: ড. মোহাম্মদ সাদিক

ড. মোহাম্মদ সাদিক। ছবি: সংগৃহীত

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) প্রতি তরুণ ও চাকরিপ্রার্থীদের যে আস্থা তা ধরে রাখার আহবান জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির বিদায়ী চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। যারা সরকারি চাকরি করছেন তাদের মানুষের সেবা করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি বা দেশসেবার জন্য তিনটি জিনিস দরকার- মমতা, সততা ও দক্ষতা। তবে, প্রথম দুটি থাকলে দক্ষতা এমনিতেই তৈরি হয়ে যাবে। আর মানুষের জন্য মমতা না থাকলে, সততা না থাকলে শুধু দক্ষতা দিয়ে দেশ ও মানুষের বেশি কাজে আসে না।’

পিএসসি থেকে বিদায়ের আগে মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ সাদিক এ কথা বলেন।

২০১৬ সালের ২ মে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ সাদিক। এর আগে ২০১৪ সালের ৩ নভেম্বর থেকে কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। গতকাল চেয়ারম্যান হিসেবে তার শেষ কর্মদিবস ছিল।

শেষ কর্মদিবেস পিএসসি চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন বিদায়ী চেয়ারম্যান। ছবি: সংগৃহীত

পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে সবচেয়ে বড় অর্জন কী মনে করেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাদিক ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পিএসসির প্রতি তরুণ ও চাকরিপ্রার্থীদের আস্থা অনেক বেড়েছে। গ্রামের একজন কৃষকের সন্তানও মনে করেন, ভালো করে লেখাপড়া করলে কোনো তদবির ছাড়া চাকরি হবে। এই যে আস্থা, এটি একটি বিরাট বিষয়। আমি মনে করি, আমার সময়ে সেই আস্থার জায়গাটা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। এই কাজে আমার সহকর্মী থেকে শুরু করে সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে যারা ছিলেন তারা কোনদিন তদবির করেননি।’ 

মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমি চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিসিএস পরীক্ষার কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। এমনকি তৈরি হয়নি বিতর্কিত কোনো প্রশ্নপত্র।’

কীভাবে এটি সম্ভব করলেন জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘একটি পরীক্ষার জন্য আমরা আট-দশ সেট প্রশ্নপত্রও করেছি। পরীক্ষার আগে লটারি করে ঠিক করা হয়েছে কোন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। এরপর সেটা সব বিভাগীয় কমিশনারকে জানানো হয়েছে। ফলে, কোন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে আগে কারোরই জানার সুযোগ ছিল না। এমনকি পিএসসিরও কারোও না। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ এটি বড় সাফল্য ছিল।’

মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘এমন এক সময়ে আমরা সেটা করেছি যখন দেশের নানা পরীক্ষায় নিয়মিত প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। কিন্তু, বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। প্রশ্নকারক, মডারেটর, পরীক্ষক, পরিদর্শক, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলাদা আলাদা বৈঠক করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হতো। সবার সহযোগিতায় এটা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া, মৌখিক পরীক্ষার ক্ষেত্রেও ছিল সতর্কতা। পরীক্ষার দিন সকালে বোর্ড নির্ধারণ করা হতো। ফলে, কে কোন বোর্ডে পরীক্ষা দেবে তা জানার সুযোগ ছিল না’।

বিসিএসের দীর্ঘসূত্রতা কিন্তু পুরোপুরি কমেনি? এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘প্রতি বছর বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হয়েছে। দীর্ঘসূত্রতা কমানোর নানা উদ্যোগ ছিল। এতোগুলো ক্যাডারের পরীক্ষা আমাদের নিতে হয়, যা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এক শিক্ষা ক্যাডারেই অসংখ্য ধরনের পদ। ফলে, সময় কমিয়ে আনাটা চ্যালেঞ্জ ছিল। আর আমরা মূলত মার্চ পর্যন্ত কাজ করতে পেরেছি। করোনা না আসলে সবকিছু আরও এগিয়ে যেত। অনেক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারিনি।’

গত পাঁচ বছরের নিয়োগগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘৩৬তম বিসিএস থেকে ৪০তম বিসিএস পর্যন্ত পাঁচটা বিসিএস হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার ক্যাডারের চাকরির সুপারিশ করেছি। এটা বিরাট সংখ্যা। এর আগে কখনোই এতো নিয়োগ হয়নি। করোনার মধ্যেও আমরা দুই হাজার ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। আর বিসিএস পাস করেছে অথচ ক্যাডার পায়নি এমন সাড়ে ৯ হাজার প্রার্থীকে নন-ক্যাডার পদে পদায়ন করা হয়েছে। এটি করা হয়েছে ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত। এর মধ্যে শুধু আমার মেয়াদেই নিয়োগ দিয়েছি সাড়ে ৭ হাজার।’

নন ক্যাডারের নিয়োগটিকে বিশেষ সাফল্য হিসেবে উল্লেখ করে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এক বিসিএস থেকে যখন আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ দিলাম, যখন হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নিয়োগ পেল সবার আগ্রহ আরও বাড়লো। তরুণরা মনে করলো, লেখাপড়া করে বিসিএস উত্তীর্ণ হলে একটি চাকরি হবেই। আর এর ফলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যোগ্য কর্মকর্তা পেয়েছে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।’

ইংরেজিতে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টির বিষয়টি উল্লেখ করে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগে বিসিএসের পরীক্ষা বাংলা ও ইংরেজি দু’ভাবেই দেওয়া যেত। কিন্তু, পরে ইংরেজি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। ৩৮তম বিসিএস থেকে বাংলার পাশাপাশি আবার ইংরেজি চালু করেছি। কারণ আমাদের দেশে অনেক তরুণ আছে যারা ইংরেজিতে পরীক্ষা দিতেই পছন্দ করে।’

মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘আমরা যেসব প্রার্থীদের নিয়োগ দিয়েছছি এরা দেশকে দারুণ সেবা দেবে বলে আমার বিশ্বাস। কারণ ভাইভা নিতে গিয়ে মনে হয়েছে আমাদের তরুণেরা অনেক বেশি সৎ, নির্লোভ। আমি তাদের বলব, সরকারি চাকরিতে তিনটি জিনিসের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সততা, মমতা এবং দক্ষতা। প্রথম দুটি থাকলে দক্ষতা অর্জন করে ফেলা যায়। কিন্তু যদি সততা ও মমতা না থাকে সেই দক্ষতা খুব বেশি কাজে লাগে না।’

শরিফুল হাসান, ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Please don't resign: An appeal to Prof Yunus

A captain cannot abandon ship, especially when the sea is turbulent

2h ago