নারায়ণগঞ্জে ৩ কারণে বিস্ফোরণ: জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি

নারায়ণগঞ্জে মসজিদে বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ছবি: স্টার

নারায়ণগঞ্জের বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের জন্য তিনটি কারণ উল্লেখ করেছে তদন্ত কমিটি। এগুলো হলো- গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ, মসজিদে থাকা বিদ্যুৎ সংযোগের স্পার্ক ও যৌথভাবে তিতাস ও মসজিদ কমিটির অবহেলা।

বিস্ফোরণের ১৪ দিন পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিনের হাতে ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববি।

তদন্ত প্রতিবেদন জমাদানের সময় সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন- তদন্ত কমিটির সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) টি এম মোশারফ হোসেন, ডিপিডিসির পূর্ব জোনের নিবার্হী প্রকৌশলী গোলাম মোর্শেদ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির উপ-মহাব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম।

এ সময় জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি দশ কার্য দিবসে তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, মসজিদ কমিটিসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট ও তাদের দেওয়া সুপারিশ বিবেচনা করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এতে তিতাস গ্যাসের লিকেজ থেকে গ্যাস নির্গত হয়ে মসজিদের ভেতরে জমা হয় এবং বিদ্যুতের স্পার্ক থেকে আগুন ও বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া, তদন্তে মসজিদ কমিটির গাফিলতি থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে।’

এএসপি টিএম মোশারফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৪০ পাতার মূল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু সংযুক্ত ছিল।’

বিস্ফোরণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে গ্যাসের লিকেজ পাওয়া গেছে। আগে থেকে গ্যাস জমে থাকায় বিদ্যুতের শটসার্কিট থেকে এ দুর্ঘটনার ঘটার অন্যতম কারণ। আর তিতাস ও মসজিদ কমিটির অবহেলাজনিত বিলম্বকেও আমরা কারণের মধ্যে এনেছি।

এ ছাড়াও, ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কোনো ঘটনা না ঘটে সেজন্য ১৮টি সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কাউকে গ্রেপ্তারে সুপারিশ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, ‘না। আমরা ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, এটার প্রাতিষ্ঠানিক কী কী দুর্বলতা ছিল এবং আমার কিছু সুপারিশ করেছি। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। তদন্তে বিস্ফোরণের জন্য এককভাবে কাউকে দায়ী করা হয়নি। তাই মামলা তার মতো করেই এগিয়ে যাবে।’

উল্লেখ্য, গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে পৌনে ৯টায় সদর উপজেলার পশ্চিম তল্লা এলাকায় বাইতুস সালাত জামে মসজিদে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে মসজিদের মুয়াজ্জিন, ইমাম, শিশু, শিক্ষার্থী, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ফটো সাংবাদিকসহ ৩৯ জন দগ্ধ হন। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে গত শুক্রবার রাত থেকে এখন পর্যন্ত ৩১জন মৃত্যুবরণ করেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এখনো ৫ জন আইসিউতে ভর্তি আছেন।

এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহেরা ববিকে প্রধান করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। আর এ কমিটিকে ৫ কর্ম দিবসের (১০ সেপ্টেম্বর) মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু, ১০ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা না দিয়ে কমিটি আরও সাত কার্য দিবস সময় বাড়িয়ে নেয়।

আরও পড়ুন:

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

5h ago