ভাগ্য বদলের জমি!

২০১৮ সালের আগস্টে সাবিহা বেগমের (ছদ্মনাম) বাড়ি কিনে নিতে চায় স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।

২০১৮ সালের আগস্টে সাবিহা বেগমের (ছদ্মনাম) বাড়ি কিনে নিতে চায় স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল।

সাবিহা বলেন, ‘তারা আমাকে বলেছিল যে, সরকারের এই জমিটি প্রয়োজন এবং বিক্রি না করলে তারা জমিটি দখল করে নেবে। আমি তাদের হুমকিতে ভয় পেয়ে যাই, তবে তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি। কারণ আমার মাথা গোজার আর কোনো জায়গা নেই। কয়েক দিন পর তারা বিরাট দলবল নিয়ে এসে আমাকে আমার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে।’

জমির বাজার দর হিসেবে তার চার ডেসিম্যাল জমির দাম অন্তত দুই লাখ টাকা হলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা।

সাবিহা তার জমিটি সরাসরি সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারলে অন্তত ছয় লাখ টাকা পেতেন। তার পরিবর্তে জমিটি চলে যায় ভূমি দস্যুদের কবলে। আর তারা এই জমিটি সরকারের কাছে বিক্রি করে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার টাকা লাভ করে।

সরকারি নথি অনুসারে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের অধীনে বাস্তবায়নাধীন সিঙ্গেল মুরিং পয়েন্ট প্রকল্পের জন্য মহেশখালী কালারমারছড়া ইউনিয়নের সোনাপাড়া গ্রামে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়।

এর জন্য ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। যার ফলে সাবিহাসহ অন্তত ৪০০ দরিদ্র পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়। এই জমির আনুমানিক বাজারমূল্য ১৪ কোটি টাকা এবং জমি অধিগ্রহণ মূল্য ৪২ কোটি টাকা।

স্থাবর সম্পত্তি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল আইন- ২০১৭ এর অধীনে সরকার জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জমির বাজারমূল্যের তিনগুণ দাম প্রদান করার কথা রয়েছে।

সোনাপাড়ার মতো কক্সবাজারের আরও ২০টি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জেলা ভূমি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও সাংবাদিকরা জোটবদ্ধভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিচ্ছে।

জমি অধিগ্রহণে অনিয়মের প্রতিবাদে গঠিত ‘জাগ্রত ছাত্রসমাজ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ফজলে আজিম মো. সিবগাত উল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই সিন্ডিকেট তাদের বাধ্য করেছে কম দামে জমি বিক্রি করতে।

সাবিহার মতো অন্তত ৪০০ পরিবার বাড়িঘর বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালে সেগুলো ভাঙচুর করা হয়।

সিবগাত উল্লাহ বলেন, ‘জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় জনগণের হয়রানি ও ভোগান্তির দিকে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে আমরা অনেকবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছি। প্রতিকার পাওয়ার বদলে আমরা পেয়েছি প্রভাবশালীদের হুমকি আর উগ্রবাদে সম্পৃক্ত থাকার দায়ে মিথ্যে মামলায় আসামি হিসেবে নিজেদের নাম।’

উচ্ছেদের শিকার হওয়া এই মানুষগুলো এ ঘটনায় জড়িত প্রভাবশালীদের নাম বলতেও ভয় পেতেন।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি তদন্ত প্রতিবেদনের অনুলিপি প্রকাশ পেয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের কাছে এই প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি রয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ এবং তার বড় ভাই নোমান শরীফ এই ইউনিয়নে ছয় জনের সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছেন।

তবে, তারা দুজনেই এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

যোগাযোগ করা হলে দুদকের তদন্ত সম্পর্কে জানেন না জানিয়ে ওসমান শরীফ বলেন, ‘আমি আসলে এ সম্পর্কে জানি না। আমি জমি দখলের কোনো সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পর্যন্তই এই সিন্ডিকেট সীমাবদ্ধ নয়। এর সিঁড়ি আরও অনেক ওপর পর্যন্ত।

জোট

দুদকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের জমি অধিগ্রহণ শাখা, জেলার শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় সাংবাদিক এবং দালালদের একটি জোট গঠিত হয়েছে কক্সবাজারের সরকারি জমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করে নেওয়ার জন্য।

গত সোমবার কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র এবং কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবর রহমানের ১১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও ১৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা জব্দ করেছে দুদক। একই দিন নোমান শরীফের নামে থাকা একটি অ্যাকাউন্টে চার লাখ টাকা জব্দ করেছে দুদক।

এর আগে, ১ সেপ্টেম্বর সাবেক কাউন্সিলর জাভেদ মো. কায়সার নভেলের অ্যাকাউন্ট জব্দ করে দুদক। যেখানে পাওয়া যায় প্রায় ১০ কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার এই প্রতিষ্ঠানের হাতে আসে নভেলের নামে থাকা ৭৫ লাখ টাকার ডিপোজিট স্কিম এবং মুজিবুর রহমানের নামে থাকা পাঁচ কোটি টাকার জমির দলিল।

চট্টগ্রাম দুদক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জেলার রাঘব বোয়ালদের সমন্বয়ে এটি একটি বিরাট জোট। তারা জমি অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়ায় সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে। আমরা এই জোটকে চিহ্নিত করেছি এবং এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত স্থানীয় কাউন্সিলরদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছি। অবশ্যই আইন অনুযায়ী আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মুজিবর রহমান ও জাভেদ মো. কায়সার নভেলের ফোনে বারবার চেষ্টা করেও গত সপ্তাহে বন্ধ পাওয়া যায়।

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, সরকার কক্সবাজার জেলা জুড়ে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১টি প্রকল্পের জন্য প্রায় ২৮ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করছে।

এর মধ্যে রয়েছে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এলএনজি টার্মিনাল, ইস্টার্ন রিফাইনারি ডিপো, অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, ট্যুরিজম পার্ক, সাবমেরিন বেস, রেল ট্র্যাকস, শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, বিমানবন্দর সম্প্রসারণ এবং খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প।

কার্যক্রমের পরিধি বড় হওয়ায় ২০১৮ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পাঁচটি পদ সৃষ্টি করে।

তবে দুদকের তদন্তে প্রকাশিত হয়েছে যে, প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার পরিবর্তে এই কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে কম দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য করার জন্য একটি সিন্ডিকেট গঠন করেছিল। যাতে সেগুলো তিন থেকে পাঁচ গুণ দামে সরকারের কাছে বিক্রি করা যায়।

গত ফেব্রুয়ারিতে জমি জরিপকারী তিন জনের বাড়ি থেকে ৯৩ লাখ টাকা জব্দ ও মো. ওয়াসিম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-১৫। তার কাছে তিনটি ডায়েরিও উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে দুদক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের চট্টগ্রাম অফিসের এক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা এই মামলার তদন্তের জন্য ১১ বস্তারও বেশি নথি বিশ্লেষণ করেছেন। যা র‌্যাব ওই দালালদের কাছ থেকে জব্দ করেছে।

দুদক গত জুলাই মাসে দালাল সেলিম উল্লাহ এবং আগস্টে সালাউদ্দিন ও কামরুদ্দিনকে বিপুল পরিমাণ নথিসহ গ্রেপ্তার করে। এসব নথি থেকে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা এবং প্রত্যেকের প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণের বিবরণ জানা যায়।

তিন দালালের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়রি থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মজিবর রহমান, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা দেওয়ান মওদুদ আহমদ, মমিনুল হক ও রেজাউল করিম, অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বিজয় কুমার সিংহ এবং জেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী আবুল কাশেমের নাম পাওয়া গেছে।

এ ছাড়াও কক্সবাজারের তিন সাংবাদিকের নাম পাওয়া গেছে তালিকায়। তাদের মধ্যে দুজন টেলিভিশন এবং একজন একটি জাতীয় দৈনিকে কাজ করেন।

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের আটককৃত সমস্ত নথি তদন্তের জন্য দুদকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় সরকার অন্তত ১৩টি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। র‌্যাব গত বছর এই সিন্ডিকেট সম্পর্কে অভিযোগ পেয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘অভিযোগ অনুসারে আমরা ভূমি অধিগ্রহণ অফিসের আশপাশে গুপ্তচরবৃত্তি শুরু করি এবং এই জালিয়াতির বিষয়টি নিশ্চিত হই। ১৯ ফেব্রুয়ারি আমরা একজন ভূমি জরিপকারীকে আটক করে তার বাসভবন থেকে নগদ ৯৩ লাখ টাকা জব্দ করেছি।’

দুদকের তদন্ত অনুসারে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এক হাজার ২১২ একর জমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন দেওয়ান মওদুদ আহমেদ।

তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, তিনি তার অফিসে ১২ জন দালাল এবং জরিপকারীদের একটি সিন্ডিকেট গঠন করেছেন।

সিন্ডিকেটের একজন দালাল মুহিবুল্লাহ গত দুই বছরে তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু, তার কোনো ব্যবসা বা অন্য কোনো আয়ের উৎস নেই।

টাকার ভাগ

দালাল কামরুদ্দিনের ডায়েরি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৮ সালে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বিজয় কুমার সিংহ এবং ১৪ জন জরিপকারীকে তিনি এক কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দিয়েছেন।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, কমিশন হিসেবে তাদের এই অর্থ দেওয়া হয়েছে।

আরেক দালাল মো. সালাউদ্দিন সাত জন জরিপকারী, কানুনগো (ভূমি অফিসের কেরানি) এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা বিজয় কুমারের হাতে দিয়েছেন তিন কোটি ৪৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

দুদক সূত্র জানায়, একটি ডায়রিতে সেলিম উল্লাহ লিখে রেখেছেন যে, জেলা প্রশাসনের অফিস সহকারী আবুল কাশেমকে ছয় লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে ও ভূমি জরিপকারী ফরিদকে ৬২ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল আফসার ‘এডভাইস’ প্রদানের দায়িত্বে ছিলেন।

দুদকের কর্মকর্তারা জানান, অধিগ্রহণ করা জমির দামের দুই শতাংশ না পেলে আশরাফুল আফসার কোনো এডভাইস দিতেন না। গত ফেব্রুয়ারিতে র‌্যাবের হাতে এক জরিপকারী ও ৯৩ লাখ টাকা জব্দ হওয়ার পর থেকে তিনি ৫৭০টি চেকের জন্য কোনো এডভাইস দেননি।

দুদক পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, ডায়েরিতে যাদের নাম আছে, গত ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো লেনদেন হয়নি। কাকতালীয়ভাবে লেনদেনের তারিখগুলো চেক প্রদানের তারিখ এবং ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার এডভাইস দেওয়ার তারিখের সঙ্গে মিলে যায়।

কোনো জমির মালিক জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকারের কাছ থেকে পাওয়া চেক জমা দিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের কাছে এর সত্যতা সম্পর্কে জানতে চায়।

তখন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এডিসি একটি এডভাইস ফর্ম জারি করেন, যেখানে চেক নম্বর লেখা থাকে এবং যা চেকটি বৈধ কি না তা প্রত্যয়ন করা থাকে।

আশরাফুল আফসার দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি তদন্তের মাধ্যমেই তা প্রকাশিত হবে।’

বর্তমানে হাতিয়া উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মরত মোহাম্মদ রেজাউল করিম দ্য ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেছেন যে, তিনি এসবের সঙ্গে জড়িত নন এবং ডায়েরিতে তার নাম কীভাবে এলো, তা তিনি জানেন না।

মন্তব্য জানার জন্য জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবুল কাশেমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া সম্ভব হয়নি।

বিজয় কুমার সিংহ বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনে কর্মরত। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে সালাউদ্দিন তার অফিসে আসতেন এবং সে কারণেই তাকে চেনেন বলে স্বীকার করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘তিনি (সালাউদ্দিন) তার জমির দাম বুঝে নিতে আসতেন। কিন্তু, আমি জানতাম না যে সে একজন দালাল। তার ডায়েরিতে যদি আমার নাম লেখা থাকে তাহলে সে সম্পর্কে তাকেই জিজ্ঞাসা করুন, সেই বলতে পারবে কেন আমার নাম লিখেছে।’

বর্তমানে লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার ইউএনও হিসেবে কর্মকর্তা আছেন মমিনুল হক। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, দালালরা তার নাম ব্যবহার করেছে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার কাজটিতে শতভাগ স্পষ্টতা নিশ্চিত করে করার চেষ্টা করেছি এবং আমার নামে ওঠা অভিযোগটি একেবারেই মিথ্যা।’

সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার ইউএনও হিসেবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন দেওয়ান মওদুদ আহমদ। তিনি জানান, যেটা নিয়ে তদন্ত চলছে সে সম্পর্কে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।

জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হলে দুদক তদন্ত করতে পারে এবং তা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ ব্যাপারে তার সঙ্গে দুদক যোগাযোগ করলে তার অবস্থান পরিষ্কার করে জানিয়ে দেবেন বলেও যোগ করেন মওদুদ আহমেদ।

গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারে বেশ কয়েক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে ব্যাপক আইনি ঝামেলা তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে মহেশখালীতে।’

তিনি জানান, সেখানকার অধিবাসীরা জমি কিনেছেন কিন্তু মিউটেশন করাননি। অনেক পরিবারের জমি আলাদা করা ছিল না। ভূমি অধিগ্রহণ অফিস থেকে যখন তাদের কাছে এসব কাগজপত্র চাওয়া হতো, তখন তারা এটিকে হয়রানি মনে করত।

তিনি আরও জানান, অল্প সময়ে আর স্বল্প জনবল নিয়ে অনেক বেশি কাজ করতে গিয়ে নথিগুলো সঠিকভাবে রক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।

দালালদের জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে, সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় পরে কথা বলবেন বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বার বার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি এবং টেক্সট ম্যাসেজের জবাবও দেননি।

গত বৃহস্পতিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকসুদুর রহমান পাটোয়ারী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর তারা ভূমি অধিগ্রহণ  কর্মকর্তাদের বদলি করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ শুরু করেছেন।

তিনি দুদকের তদন্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, অর্থের এই জাতীয় লেনদেন হলে, তা একটি ফৌজদারি অপরাধ এবং জড়িত বলে প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, ‘আমি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছি, যদি এরকম কিছু ঘটে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি আরও জানান, জেলা ভূমি অফিসের আশপাশে ঘোরাঘুরি করা দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

13h ago