নাও ভাড়া করি ঘর ভাঙি নিয়া যামো সেই টাকাও নাই

Lucky_Tista_20Sep20.jpg
যে কোনো সময় তিস্তা ভাঙনে বিলীন হয়ে যেতে পারে লাকী বেগমের বাড়ি। ছবি: স্টার

পাড় ভেঙে তিস্তা এগিয়ে এসে লাকী বেগমের উঠানে দাঁড়িয়েছে। দোচালা টিনের ঘরের দরজা থেকে পাঁচ হাত দূরে ফুঁসছে তিস্তা। কখন ঘরটা ভাঙনে হারিয়ে যাবে সেই শঙ্কায় আশরাফুল ইসলাম ও লাকী পালা করে সারা রাত জেগে থাকেন।

লাকী বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হামার তো আর টাকা-পইসা নাই যে, হামরা নাও ভাড়া করি ঘর ভাঙি নিয়া যামো। জীবনের মায়া ছাড়ি স্বামী, ছওয়া-পোয়া নিয়া নদীরপাড়ত থাইকবার নাগছি। ওমারগুলার যার যার টাকা-পইসা আছে তাই তাই নাও ভাড়া করি বাড়ি-ঘর ভাঙি নিয়া যাবার নাগছে। রাইতোত হামরা নিন পারির পাই না। কখন হামার ঘর সুদধায় বাস্তুভিটা কোনা ভাঙি নিয়া যায় তিস্তা। ছওয়া দুইকনা রাইতোত নিন্দায়। মোর স্বামী অ্যাকবার পাহারা দেয়, মুই অ্যাকনা পাহারা দ্যাং।’

বিয়ের পর থেকে লাকী বেগম লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা গোবর্ধান এলাকায় তিস্তা পাড়ে বসবাস করছেন। আশরাফুল দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। শারীরকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন আর কাজ করতে পারেন না। তিস্তায় জাল পেতে মাছ ধরেন লাকী, সেই মাছ বিক্রি করে সংসার চলে তাদের।

লাকী আরও বলেন, ‘মোর নামটাই শুধু লাকী। আসলে মুই কোনোদিন লাকী হবার পাং নাই। মোর সারা জীবনটাই কাটি যাবার নাগছে দুকখে দুকখে। মোর কপালোত কোনদিনই সুখ আইসবার নয়। তিস্তা নদীর বগলোত মোর ঘর, কখন অ্যালা ভাঙি যায়! এই ঘরটাও যদি মোর তিস্তার পেটোত যায়, তাক হইলে গাছতলা ছাড়া হামার আর যাওয়ার জাগা থাইকবার নয়।’

আশরাফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, তার স্ত্রী লাকী বেগমের আয়েই সংসার চলছে। জালে মাছ ধরা না পড়লে সেদিন অনাহারে থাকতে হয়। তিন শতাংশ জমির মধ্যে এক শতাংশ ইতোমধ্যে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

‘সবাই ঘর-বাড়ি ভাঙি নিয়া যাবার নাগছে। হামরায় খালিত পড়ি আছি নদীর কাচারোত। ঘর কোনা যে সরামো সেই টাকায় হামার হাতোত নাই। ফির নৌকা ভাড়া কোনটে পাই’— বলেন আশরাফুল।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

42m ago