নিয়োগ-পদোন্নতিতে প্রভাবসহ বহুবিধ দুর্নীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন ড্রাইভার মালেক

১৯৮২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) একটি প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন আবদুল মালেক ওরফে বাদল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক আবদুল মালেক। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) একটি প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে যোগ দেন আবদুল মালেক ওরফে বাদল।

তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে তদবিরের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায়ের পাশাপাশি জাল নোটের ব্যবসা চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে ঠকানোর অভিযোগ রয়েছে।

গত ২০ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি ডিজিএইচএসের মহাপরিচালকের গাড়িচালক ছিলেন। র‍্যাবের একটি দল তাকে রাজধানীর দক্ষিণ কামারপাড়ার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।

তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, পাঁচটি গুলি, দেড় লাখ জাল বাংলাদেশি টাকা, একটি ল্যাপটপ ও একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, আবদুল মালেক ১০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের মালিক।

ডিজিএইচএস’র কয়েকটি সূত্র থেকে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ড্রাইভার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছিলেন আবদুল মালেক। তিনি এই সমিতির নাম ব্যবহার করে প্রভাব খাটাতেন।

প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ এলাকার দক্ষিণ কামারপাড়ায় তার সাততলা দুটি আবাসিক ভবন আছে। ওই ভবনগুলোতে ২৪টি ফ্ল্যাট আছে। এর মধ্যে একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় থাকতেন তিনি।

এ ছাড়াও, রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি প্লটের মালিক আবদুল মালেক। ধানমন্ডিতে সাড়ে চার কাঠা জমির ওপর তার একটি ভবন নির্মাণাধীন আছে। দক্ষিণ কামারপাড়ায় ১৫ কাঠা জমির ওপর তার একটি ডেইরি ফার্মও আছে।

সূত্র জানায়, মালেক কেবল ডিজিএইচএস’এ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও পদোন্নতিতে প্রভাব খাটাননি, তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তার মেয়ে, মেয়ের স্বামী, ভাই ও ভাগনেসহ অনেককে চাকরিও পাইয়ে দিয়েছেন।

তার ছোট মেয়ে নওরিন সুলতানা বেলি, ভাই আবদুল খালেক ও ভাগনে আবদুল হাকিম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ করছেন। তার মেয়ের স্বামী রতন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ক্যান্টিনের ম্যানেজার ও আরেক ভাগনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার গাড়িচালক।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও মালেক ডিজিএইচএসের ডাক্তারদের পদোন্নতি ও বদলিতেও প্রভাব খাটানোর ক্ষমতা রাখতেন বলে জানা গেছে।

আবদুল মালেককে গ্রেপ্তারের পর এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, মালেক ডিজিএইচএসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একজন ‘নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি’ ছিলেন।

মালেকসহ অন্যদের সম্পদের বিবরণী চেয়েছে দুদক

২০১৯ সালে মালেকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে মালেকের চারটি বাড়ি সম্পর্কে তারা জানতে পারে।

অনুসন্ধানের পর, ১৫ সেপ্টেম্বর দুদক মালেক ও তার স্ত্রীকে তাদের সম্পদের বিবরণী জমা দিতে বলেন।

দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত জানান, ২০১৯ সাল থেকে মালেকসহ ডিজিএইচএসের ৪৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুদক তদন্ত করছে। এর মধ্যে ১২ জনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই দুদক দুর্নীতির মামলা করেছে।

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দুদক মালেকের চারটি বাড়ির সন্ধান পায়।’

দুদক সচিব আরও জানান, যদি তার পরিচিত আয়ের উৎসের বাইরে ধন-সম্পদের প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে মালেকের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ

১৫ সেপ্টেম্বর দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ডিজিএইচএসের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ২০ জনের কাছে সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছেন। প্রত্যেককে নোটিশ প্রাপ্তির ২১ কার্যদিবসের মধ্যে বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

যাদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়েছে, তারা হলেন— স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি ও তার স্ত্রী রিফাত আক্তার; ইপিআই’র ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী খাদিজা আক্তার; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়িচালক মো. আবদুল মালেক ও তার নার্গিস বেগম; গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান এবং তার স্ত্রী বিলকিচ রহমান ও রেহেনা আক্তার (ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের স্টাফ নার্স); রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ইমদাদুল হক ও তার স্ত্রী উম্মে রোমান ফেন্সি; জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) মো. মাহমুদুজ্জামান ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন; শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী ফিরোজা বেগম; স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কামরুল হাসান ও তার স্ত্রী উম্মে হাবিবা; গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের স্টেনোগ্রাফার-কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম; বরিশাল বিভাগীয় পরিচালকের (স্বাস্থ্য) কার্যালয়ের সহকারী প্রধান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মীর রায়হান আলী এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন।

আরও পড়ুন:

শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভার গ্রেপ্তার

Comments

The Daily Star  | English
EC turns a blind eye to polls code violations

Nomination submission deadline won’t be extended: EC

The deadline for the submission of nomination papers ended at 4:00pm today

20m ago