আইকনিক নায়ক-গায়ক জাফর ইকবাল

বাংলা সিনেমার স্টাইলিশ নায়কদের তালিকার প্রথমদিকের একজন অভিনেতার নাম জাফর ইকবাল। ৭০ ও ৮০’র দশকে দর্শকদের মনে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন অনেকটা নীরবেই চলে যায় তার জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকী।
জাফর ইকবাল। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সিনেমার স্টাইলিশ নায়কদের তালিকার প্রথমদিকের একজন অভিনেতার নাম জাফর ইকবাল। ৭০ ও ৮০'র দশকে দর্শকদের মনে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এখন অনেকটা নীরবেই চলে যায় তার জন্ম কিংবা মৃত্যুবার্ষিকী।

আজ আইকনিক নায়ক জাফর ইকবালের জন্মদিন। ১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বোন কণ্ঠশিল্পী শাহানাজ রহমতুল্লাহ এবং বড় ভাই সংগীত পরিচালক আনোয়ার পারভেজ। তাদের কেউই আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই।

একটি সিনেমার দৃশ্যে জাফর ইকবাল এবং ববিতা। ছবি: সংগৃহীত

খ্যাতিমান অভিনেত্রী ববিতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'তার অনেক বিষয় আমাকে মুগ্ধ করতো। সে যেমন ছিল সুদর্শন, অভিনয়ে ছিল সাবলীল, তার কণ্ঠ, ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন সচেতনতা, রুচিবোধ সবকিছু দারুণ। খুব ভালো ইংরেজি গান গাইতে পারতো। গিটার বাজিয়ে ওর কণ্ঠে  ইংরেজি গান শোনাটা সেই সময়ে স্বপ্নের একটি মুহূর্তের মতো। তার মতো সম্পূর্ণ নায়ক আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে খুব কম।'

সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বয়সে আমার বড় হলেও বন্ধুর মতো মিশতাম তার সঙ্গে। একজন ফ্যাশন আইকন ছিলেন তিনি। তার ফ্যাশন আমরা অনুসরণ করতাম সেই সময়ে। রুচিবোধ থেকে শুরু করে তার ব্যক্তিত্ব ছিল নজরকাড়া। প্রেমিক নামের একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন জাফর ভাই। সেখানে আমাকে অভিনয় করতে বলেছিলেন। সারারাত ধরে তার ধানমন্ডির বাসায় বুঝিয়েছিলেন অভিনয় করার বিষয়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত অভিনয় করা হয়নি। মেয়েরা তাকে অনেক পছন্দ করতো। খুব সচেতন হয়ে ড্রেসআপ করতেন। তার লিপে আমার কণ্ঠের অসংখ্য গান ব্যবহার হয়েছে।'

জাফর ইকবাল অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম 'আপন পর'। খান আতাউর রহমান পরিচালনা করেছিলেন ছবিটি। ১৯৬৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটিতে তার নায়িকা ছিলেন কবরী। এই ছবির 'যা রে যাবি যদি যা' গানটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় সেই সময়ে। ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে 'সূর্য সংগ্রাম' ছবিতে ববিতার বিপরীতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া 'মাস্তান' ছবির বদৌলতে ড্যাশিং নায়কের পরিচিতি পান জাফর ইকবাল। রোমান্টিক নায়ক হিসেবে পরিচিতি পান 'নয়নের আলো' সিনেমার মাধ্যমে।

সর্বমোট ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন জাফর ইকবাল। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য কিছু সিনেমা হলো- অবুঝ হৃদয়, ভাই বন্ধু, অবদান, প্রেমিক, সাধারণ মেয়ে, ফকির মজনু শাহ, দিনের পর দিন, বেদ্বীন, অংশীদার, মেঘ বিজলী বাদল, নয়নের আলো, সাত রাজার ধন, আশীর্বাদ, অপমান, এক মুঠো ভাত, গৃহলক্ষ্মী, ওগো বিদেশিনী, প্রেমিক, নবাব, প্রতিরোধ, ফুলের মালা, সিআইডি, মর্যাদা, সন্ধি, বন্ধু আমার, উসিলা ইত্যাদি।

ববিতার সঙ্গে জুটি হয়ে ৩০টি সিনেমায় অভিনয় করেন জাফর ইকবাল। বাস্তব জীবনে এই জুটির প্রেমের কথা সেইসময় আলোচনা হতো। তবে ব্যক্তিজীবনে জাফর ইকবাল বিয়ে করেছিলেন সোনিয়া নামের একজনকে। এই দম্পতির দুই ছেলে সন্তান রয়েছে।

গায়ক হিসেবেও তিনি ছিলেন অনন্য। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ১৯৬৬ সালে বন্ধুদের নিয়ে 'রোলিং স্টোন' ব্যান্ড গড়েছিলেন। এলভিস প্রিসলি তার খুব প্রিয় ছিল। সংগীত পরিচালক ভাই আনোয়ার পারভেজের সুরে 'বদনাম' ছবির 'হয় যদি বদনাম হোক আরও' গানটি দিয়ে চলচ্চিত্র প্লেব্যাকে অভিষেক হয় তার। সুরকার আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া শ্রোতা প্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে 'সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী হয়ে কারো ঘরনি', 'তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন', 'হয় যদি বদনাম হোক আরও'। ৮০'র দশকে 'কেন তুমি কাঁদালে' শিরোনামে একটি অডিও অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছিল তার।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ২৫ বছর উদযাপন অনুষ্ঠানে 'এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কি আছে' গানটি গেয়েছিলেন জাফর ইকবাল। পরে রফিকুল আলমও এই গানটি গেয়েছিলেন।

নায়ক, গায়ক, মুক্তিযোদ্ধা জাফর ইকবাল অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। ১৯৯১ সালে ২৭ এপ্রিল মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

6m ago