বিদ্যালয়ের জমি দখলে আবারও হামলার চেষ্টা

৫০টি গাছ নষ্ট করে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

সিলেটের ক্যাথলিক ডায়োসিসের বিদ্যালয়ের জমি দখলের জন্য গতকাল রাতে আবারও চাপাতি দিয়ে পাহারাদারদের ওপর হামলার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু, পুলিশের টহল থাকায় হামলাকারীরা চাপাতি ফেলে পালিয়ে যায়। বিদ্যালয়ের জমি দখলের চেষ্টায় এবার দিয়ে চতুর্থবারের মতো এমন ঘটনা ঘটলো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লাগানো প্রায় ৫০টি গাছ কেটে নষ্ট করাসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের ওই জায়গাটি আজ পরিদর্শন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)।

পাহারাদার আলাউদ্দিন ও মামুন আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে যখন বিদ্যুৎ চলে যায় তখন ২-৩ জন চাপাতি নিয়ে আমাদের বাসস্থানের কাছে অবস্থান নেয়। তখন দূর থেকে এক প্রতিবেশী তাদের অবস্থান বুঝতে পারে। আমরাও দুষ্কৃতিকারীদের ওই বাড়িতে প্রবেশ করার চেষ্টার শব্দ শুনতে পাই। এ সময় ওই প্রতিবেশী আমাদের জোরে ডাক দিলে আমরাও চিৎকার করি এবং দুষ্কৃতিকারীরা দুটি চাপাতি ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যাই। বিদ্যুৎ না থাকায় আমরা কাউকে চিনতে পারিনি।’

মামুন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা তারা প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে এই হামলা চালিয়েছিল।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক রিপটন পুরকায়স্থ বলেন, ‘তাৎক্ষণিক আমিসহ আমাদের পুলিশের লোকজন স্থানটি পরিদর্শন করে এবং চাপাতিগুলো উদ্ধার করে নিয়ে যায়।’

অন্যদিকে, আজ সকালে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন দলে ছিলেন- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ ওএমআই, বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল করিম চৌধুরী ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিকাল স্টাডি বিষয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক প্রমুখ।

পরিদর্শন শেষে শরীফ জামিল বলেন, ‘সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ৫০টি গাছও নষ্ট করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এ কাজ করা হয়েছে। এখানে বিদ্যালয় হবে। শিক্ষার্থীরা পরিবেশ রক্ষার শিক্ষাগ্রহণ করে ভবিষ্যৎ জীবনে তার প্রয়োগ করবে। কিন্তু, কিছু দুষ্কৃতকারী পরিবেশ আইনের তোয়াক্কা না করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে লাগানো প্রায় ৫০টি গাছ নষ্ট করেছে। বিষয়টি শুধু পরিবেশবাদী নয়, সাধারণ মানুষজনের জন্য দুঃখজনক। করোনাকালের নির্জন স্থানে গাছ নষ্ট করার পেছনে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

বাপার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফাদার যোসেফ গমেজ ওএমআই বলেন, ‘আমাদের আশঙ্কা হলো বিষয়টি অন্যদিকে মোড় দিতেই দুষ্কৃতকারীদের এই হিংস্র আয়োজন। যেন সেই সুযোগে তারা বিদ্যালয়ের জমি দখল করতে পারে।’

গাছ নষ্ট করা ও চাপাতি নিয়ে আক্রমণের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য মামলার প্রথম আসামি ইছরাক আলির মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তারা ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের প্রধান বিশপ বিজয় এন ডি ক্রুস বলেন, ‘বিদ্যালয়ের নামে ২.৪৫ একর জমি সিলেট ক্যাথলিক ডায়োসিসের নামে কেনা হয়েছে। ২০১৭ থেকেই আমাদের উপর মামলা করে এবং ভয়ভীতি সৃষ্টি করে। অবশেষে গত ১৯ সেপ্টেম্বর তারা সেখানে জোরপূর্বক সাইনবোর্ড টানাতে চায়। পরে দুষ্কৃতকারীরা পিলার দিতে চায়। না পেরে তারা চারা গাছ উপড়িয়ে নষ্ট করে। পুলিশ থাকা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত দুষ্কৃতকারীরা গতকাল রাতে পাহারাদারদের ওপর চাপাতি দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা করে। চতুর্থবারের মতো আমরা হামলার শিকার হলাম। এখন আমরা আতঙ্কে আছি। তাই পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা দাবি করছি।’

যোগাযোগ করা হলে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জ্যোতির্ময় সরকার পিপিএম জানান, আমরা দুজনকে আটক করেছি।

গতকাল রাতে আবার হামলা হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।

আরও পড়ুন: 

Comments

The Daily Star  | English

ICT case: Hasina charged with crimes against humanity

ICT prosecution pressed formal charges against Sheikh Hasina in a case filed over crimes against humanity committed during July mass uprising

1h ago