‘একসটারা চুলা হামরা চোকির উপর রাখিয়াও রান্না করির পাই’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের বন্যাকবলিত কালমাটি গ্রামের গৃহবধূ মোসলেমা বেগম (৩০) ঘরে ও উঠানে হাঁটু সমান পানি। এর মধ্যেই রান্না ঘরের একটু উঁচু জায়গায় এক্সট্রা চুলা রেখে রান্না করছিলেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘হামারগুলার সবার বাড়িত একসটারা চুলা আছে। বান আইসবার আগোত হামরা এই চুলা ঠিকঠাক করি থই। একসটারা চুলা হামরা চোকির উপর রাখিয়াও রান্না করির পাই। বান আসলে এটা হামরা একটা সম্পদ হয়া যায়।’
বন্যাকবলিত মানুষের বিপদের বন্ধু এক্সট্রা চুলা। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তাপাড়ের বন্যাকবলিত কালমাটি গ্রামের গৃহবধূ মোসলেমা বেগম (৩০) ঘরে ও উঠানে হাঁটু সমান পানি। এর মধ্যেই রান্না ঘরের একটু উঁচু জায়গায় এক্সট্রা চুলা রেখে রান্না করছিলেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘হামারগুলার সবার বাড়িত একসটারা চুলা আছে। বান আইসবার আগোত হামরা এই চুলা ঠিকঠাক করি থই। একসটারা চুলা হামরা চোকির উপর রাখিয়াও রান্না করির পাই। বান আসলে এটা হামরা একটা সম্পদ হয়া যায়।’

আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড়ের চর গোবর্ধান এলাকার বানভাসি গৃহবধূ শরিফা বেগম (৪০) জানান, একটি এক্সট্রা চুলা তৈরি করতে তাদের ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা খরচ করতে হয়। শুধু বন্যা আসলে তারা এ চুলা ব্যবহার করেন। বানের পানির কারণে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদে গেলেও তারা এ চুলা সঙ্গে করে নিয়ে যান।

তিনি বলেন, ‘হামারগুলার কাছে এক্সট্রা চুলা একটি সম্পদ। বানের সময় এ চুলা হামাক সাহায্য করে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলাপাড়ের চর শিবেরকুটির বানভাসি খোদেজা বেওয়া (৬২) জানান, এক্সট্রা চুলা তাদের কাছে অনেক আগে থেকে জনপ্রিয়। আগে মাটি দিয়ে এ চুলা তৈরি করা হয়েছিল আর এখন সিমেন্ট-বালু দিয়ে বানানো হয়।

‘যতই বান আসুক যদি ঝরি না হয়, তাক হইলে হামরা একসটারা চুলাত রান্না করির পামো,’ বলেন তিনি।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলাপাড় শিমুলবাড়ী গ্রামের বানভাসি হালিমা বেওয়া (৫৮) জানান, এক্সট্রা চুলা তাদের জীবনে উপকারী বস্তুর মধ্যে একটি। বন্যা আসার আগে বাড়িতে এক্সট্রা চুলা রাখার প্রস্তুতি থাকে নদীপাড়ের প্রত্যেক বাড়িতে। এক্সট্রা চুলায় রান্না করতে খড়ির খরচ একটু বেশি হয় বলে তিনি জানান।

একই উপজেলার সারডোব গ্রামের বানভাসি গৃহবধূ মিনারা আক্তার (২৬) জানান, এক্সট্রা চুলা তাদের জন্য এক্সট্রা জীবন। বন্যার সময় তাদের জীবন যাপন হয়ে উঠে একটু কষ্টের, একটু অশান্তির আর এই সময়ে এক্সট্রা চুলা তাদেরকে সঙ্গ দেয়।

তিনি বলেন, ‘হামার বাড়িত বানের পানি ঢুকছে। হামরা এ্যালা সরকারি সড়কের উপরাত উঠছি। এটে কোনাও হামরা একসটারা চুলাটা এনেছি। একসটারা চুলাত রান্না করি খাবার নাগছি।’

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড়ের মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ৬০ শতাংশ পরিবার বন্যাকবলিত। এসব পরিবারের প্রত্যেকটিতে রয়েছে এক্সট্রা চুলা। এমনকি ত্রাণ হিসেবে অনেক পরিবারকে এক্সট্রা চুলা দেওয়া হয়ে থাকে।’

লালমনিরহাটের আদিতমারীতে চুলার কারিগর মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এ চুলার প্রধান ভোক্তা হলেন নদীপাড়ের মানুষ। এ চুলা তিন সাইজের হয়ে থাকে। সাইজ অনুযায়ী দাম হয়ে থাকে। যত্ন করে ব্যবহার করলে একটি চুলা ৫ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।’

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago