এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ মামলায় আসামি যারা

প্রথম সারিতে বাঁ থেকে সাইফুর রহমান, তারেকুল ইসলাম ও শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, দ্বিতীয় সারিতে বাঁ থেকে অর্জুন লঙ্কর, রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান মাসুম। ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের মুরারিচাঁদ কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নাম উল্লেখ করা ছয় আসামির মধ্যে একজন কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী, তিন জন সাবেক শিক্ষার্থী এবং বাকি দুজন বহিরাগত বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সবাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এবং কলেজে ছাত্রলীগ নেতা হিসেবেই পরিচিত। তবে কলেজ বা সিলেট মহানগরে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় তাদের কোনো পদবী নেই।

গতকাল শুক্রবার রাতে কলেজের ফটকের সামনে বেড়াতে আসা এক তরুণী ও তার স্বামীকে জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন একদল তরুণ।

এ ঘটনায় সে রাতেই ধর্ষণের শিকার তরুণীর স্বামী বাদী হয়ে সিলেটের শাহ পরান থানায় ছয় জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত তিন জনকে সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেন।

অভিযুক্তরা হলেন- সাইফুর রহমান (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান রনি (২৫), অর্জুন লঙ্কর (২৫), মাহফুজুর রহমান মাসুম (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) এবং তারেকুল ইসলাম (২৮)।

অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায়, শাহ মাহবুবুর রহমানের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাগুনিপাড়ায়, অর্জুনের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জের আটগ্রামে, মাহফুজুর রহমানের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের গাছবাড়ি গ্রামে, রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় জগদল গ্রামে এবং তারেকের বাড়ি সুনামগঞ্জ শহরের নিসর্গ আবাসিক এলাকায়।

মামলার নথিতে প্রধান অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কের বাংলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও নথিতে শাহ মাহবুবুর রহমান রনির বর্তমান ঠিকানা ছাত্রাবাসের সাত নম্বর ব্লকের ২০৫ নম্বর কক্ষ উল্লেখ করা হয়েছে।

শাহ মাহবুবুর রহমান রনি কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী এবং কলেজ ছাত্রাবাসের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।

বাকিদের মধ্যে সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর এবং মাহফুজুর রহমান মাসুম কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবং রবিউল ইসলাম ও তারেকুল ইসলাম বহিরাগত।

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত মার্চে কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হলে কলেজের ছাত্রাবাসও বন্ধ করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে কিছু শিক্ষার্থীকে টিউশনি বা চাকরির কারণে ছাত্রাবাসে থাকার মৌখিক অনুমতি প্রদান করা হয়।

গতকালের ঘটনার পর আজ শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রাবাস সম্পূর্ণ খালি করার নির্দেশ দেন ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক জামাল উদ্দিন। এতে ছাত্রাবাসের বিভিন্ন ব্লকে থাকা শিক্ষার্থীরা দুপুরের মধ্যেই ছাত্রাবাস ত্যাগ করেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ দুপুরে কলেজের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠক শেষে কলেজের অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সামগ্রিক বিষয় তদন্তে কলেজের গণিত বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়াও ছাত্রাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই প্রহরীকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’

ঘটনার পর রাতে কলেজের ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্ত সাইফুর রহমানের দখলে থাকা তত্ত্বাবধায়কের বাংলো থেকে একটি পিস্তল, চারটি ধারালো অস্ত্র এবং বেশ কিছু লোহার রড উদ্ধার হয়।

এ ঘটনায় সাইফুর রহমানকে বাদী করে পৃথক একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করেছে শাহ পরান থানা পুলিশ।

কলেজ অধ্যক্ষ সালেহ আহমদ বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়কের এই বাংলোটি জরাজীর্ণ হওয়ায় তিনি এখানে থাকেন না। এই সুযোগে ওরা এটা দখল করেছে। এর আগেও তাদের বাংলো থেকে উৎখাত করা হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। কিন্তু কোরবানির ঈদের পর আবারও তারা বাংলোতে এসে গভীর রাতে অবস্থান করছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি বিব্রত, লজ্জিত। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কলেজের সকল শিক্ষকই বাড়িতে অবস্থান করে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় ছাত্রাবাসে যথাযথ মনিটরিং করাও কঠিন ছিল। এখন গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ দুপুর ১টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা।

অধ্যক্ষ ও পুলিশের আশ্বাসের পর প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলা এ বিক্ষোভ প্রত্যাহার করা হয়।

Comments

The Daily Star  | English

No clear roadmap for investment

The budget for FY26 has drawn strong criticism from business leaders who say it lacks a clear roadmap for improving the investment climate, bolstering industrial competitiveness, and implementing overdue reforms in the banking sector.

14h ago