সংকট মোকাবিলায় আসছে আগাম জাতের পেঁয়াজ বারি-৫
সারাদেশে পেঁয়াজের দামে যখন মানুষ দিশেহারা, তখন নিজের জমিতে আগাম জাতের পেঁয়াজ লাগিয়ে ভালো ফলন পাওয়ার আশায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের কৃষক শাহিনুর রহমান এখন নিশ্চিন্ত।
শাহিনুর তার ২ বিঘা জমিতে মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার উদ্ভাবিত বারি-৫ জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁয়াজ এ বছর পরীক্ষামূলক আবাদ করেছেন। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তত্বাবধানে পুরো খেতে বড় হচ্ছে আগাম জাতের উচ্চফলনশীল পেঁয়াজ।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের মসলার মধ্যে পেঁয়াজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তাই পেঁয়াজের উন্নত জাত আবিষ্কারে তারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমানে পেঁয়াজের ছয়টি জাত নিয়ে গবেষণা করলেও বারি-৫ জাতের এ পেঁয়াজ গবেষণায় সফলতা পেয়েছে। ফলে, কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক আবাদ করা হচ্ছে।
পরীক্ষামূলক আবাদে সফলতা পাওয়া গেলে আগামী বছর থেকে নতুন জাতের এ পেঁয়াজ বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানায় গবেষণা কাজে নিয়োজিত দপ্তরটি।
বগুড়া মসলা গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রেজা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বারি-৫ জাতের এ পেঁয়াজ আবাদের জন্য প্রথমে বীজতলা করতে হবে। বীজতলায় বারি-৫ জাতের পেঁয়াজের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করার পর ৪০ থেকে ৪৫ দিন বয়সী চারাগুলো উঁচু জমিতে বপন করতে হবে। যাতে জমিতে পানি না জমে। জমিতে চারা রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যাবে। সে হিসাবে ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে এ পেঁয়াজের উৎপাদন করা যাবে।’
জুন-জুলাইয়ে বীজতলা করে বীজ বপন করতে হবে, যাতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের মধ্যেই এর ফলন পাওয়া যায়। বারি-৫ জাতের এ পেঁয়াজ বছরের অন্য সময়েও রোপণ করা যাবে বলে তিনি জানান।
বারি-৫ জাতের উচ্চফলনশীল এ পেঁয়াজ আবাদ করে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাবে। বর্ষার শেষে, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে প্রতিবছর পেঁয়াজের সংকট হয়। কারণ এ সময় মাঠে কোনো পেঁয়াজ থাকে না, কৃষকের ঘরেও পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকে না। ফলে, সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম বাড়ে।
গবেষণায় সফলতা পাওয়ায় বারি-৫ জাতের এ পেঁয়াজ পরীক্ষামূলক আবাদের জন্য এ বছর দেশের ১০টি জেলাকে বাছাই করা হয়েছে। এসব জেলার প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক নতুন জাতের এ পেঁয়াজ বর্ষার শেষে আবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া, সাথী ফসল হিসেবে আবাদের জন্য তিনটি চিনিকলের ২৪ বিঘা জমিতেও পরীক্ষামূলক আবাদ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
নির্ধারিত জেলা ছাড়াও বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলার মধ্যে, পাবনা, কুষ্টিয়ার আগ্রহী কৃষকের কাছেও পরীক্ষামূলক আবাদেও জন্য বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলক আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এখন উৎপাদনে সফলতা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
কৃষক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে সফলতা এলে আগামী বছর থেকে নতুন জাতের এ পেঁয়াজ বাণিজ্যিকভাবে সারাদেশে আবাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান ড. হামিম।
পরীক্ষামূলক পেঁয়াজের জমিতে পরিদর্শনকালে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন জাতের এ পেঁয়াজ আবাদের খরচ অপেক্ষাকৃত কম এবং ফলনও ভালো পাওয়ার আশা করছে তারা।
সলিমপুর এলাকার কৃষক শাহিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা, নিজের জমি থাকায় জমির খরচ ধরা হয়নি। শীতকালীন সবজি আবাদের আগ মুহূর্তে আগাম জাতের এ পেঁয়াজ আবাদ করে আর্থিকভাবে সফলতা পাওয়ার আশা করছি।
শাহিন আরও বলেন, ‘আমার জমিতে বেলে মাটি থাকায় আগে কখনো পেঁয়াজ লাগায়নি। তবে, নতুন জাতের এ পেঁয়াজ বেলে মাটির জমিতে আবাদ করে সফলতা পাওয়ায়, আমাকে দেখে অনেক কৃষকই পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আযাহার আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাবনা জেলা দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশের বেশি পেঁয়াজ প্রতিবছর উৎপাদন করে। দেশের পেঁয়াজের মোট উৎপাদন ২৪ থেকে ২৫ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে পাবনা থেকেই উৎপাদন হয় প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ মেট্রিক টন।’
তবে, দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক চতুর্থাংশ প্রতিবছর নষ্ট হয়ে যায়। দেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮ থেকে ৩০ লাখ টন, ফলে প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয় বলে জানান তিনি।
বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করা গেলে সংকটের সময় পেয়াজের আমদানি নির্ভরতা কমানে যাবে এবং দামও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তা।
Comments