লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

১২০ গ্রামে ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি
বন্যায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবন। ছবি: স্টার

ধরলা নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে তা লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ধরলা ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুই জেলার ধরলাপাড়ে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।

তবে, তিস্তা নদীর পানি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার নিচে থাকলেও পানি বাড়তে শুরু করেছে। অনবরত প্রবল বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে জেলার নদীগুলোর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে দুই জেলার নয়টি উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নে প্রায় ১২০টি গ্রাম, চর ও দ্বীপচরের ৪০ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি জীবনযাপন করছেন। চর ও দ্বীপচরের অনেক পানিবন্দি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, সরকারি রাস্তা ও বাঁধের ওপর। বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে এসব এলাকার রাস্তা-ঘাট ও আবাদি জমি। প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান ও সবজিক খেত এখন বন্যার পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।

দফায় দফায় বন্যা পরিস্থিতিতে চরম ধকলে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষজন। একটি বন্যার ধকল পুষিয়ে উঠার আগেই আরেকটি বন্যা পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। একদিকে বন্যার পানি, অন্যদিকে অনবরত বৃষ্টিপাত তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিবেরকুটি গ্রামের বানভাসি মফিয়া বেগম (৫২) জানান, তারা চার দিন ধরে বাড়ি ছেড়ে বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন। পলিথিন মোড়ানো ঝুঁপড়িঘর করে বাস করছেন। কিন্তু, প্রবল বৃষ্টির কারণে রাতে ঘুমাতে পারছেন না। গরু-ছাগল নিয়ে আরও বেশি বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। ‘মোর জীবনে এ্যাদোন বান আর কোনদিন দ্যাখোং নাই। বার বার বান আসিয়া হামার ক্ষতি করবার নাগছে। হামারগুলার বাস করাটাই এ্যালা ঝামেলার হয়া গ্যাইছে’, বলেন তিনি।

একই গ্রামের বানভাসি আদু মিয়া (৬৫) জানান, বাড়িতে বন্যার পানি থইথই করছে। আর রাস্তা-ঘাটও তলিয়ে গেছে। নলকূপগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তারা বিশুদ্ধ পানি পাচ্ছেন না। নৌকায় চড়ে দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে। অনেক সময় বন্যার পানিতে ডুবে থাকা নলকূপের পানিই পান করতে হচ্ছে। ‘এ্যাদোন করি নদীর পানি বাড়লে তো হামারহুলার বিপদ’, বলছিলেন আদু মিয়া।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী গ্রামের বানভাসি নুরনাহার বেগম (৩০) জানান, পরিবারে শিশু ও বয়স্কদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাদের। গেল চার দিন বন্যার পানির সঙ্গে লড়াই করে বাড়িতেই ছিলেন। আজ রোববার সকালে পানি বাড়ায় তারা বাড়ি ছেড়ে উঠেছেন সরকারি রাস্তার ওপর। ঘরে খাবার নেই, তাই তাদেরকে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। তাদের একটি ছাগল ও ১০টি মুরগি পানির স্রোতে ভেসে গেছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা গ্রামের বানভাসি কৃষক আক্কাস আলী (৬০) জানান, তারা অনেক কষ্টে আমন ধান ও সবজি লাগিয়েছিলেন। কিন্তু, বন্যার পানির নিচে এসব ফসলি খেত তলিয়ে রয়েছে। ‘এ বছর দফায় দফায় বন্যা হামাকগুলাক নিঃস্ব করি দিবার নাইগছে। হামার যাবার আর বাঁচার পথ নাই’, বলেন তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশরী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও তিস্তার পানি ওঠা-নামা করছে। প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজোনের পানির কারণে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে, বৃষ্টিপাত না থাকলে ধরলার পানি কমতে পারে।’

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

5h ago