শত বছরের রেকর্ড ভাঙা বৃষ্টি রংপুরে
টানা ১০ ঘণ্টা বৃষ্টিতে রংপুর মহানগরসহ জেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এত নগরীর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার অলিগলি সবই পানিতে ডুবে গেছে।
বাদ পড়েনি বাড়িঘরও। কোথাও কোমর পানি, কোথাও হাঁটু পানি।
রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল শনিবার রাত ১০টা থেকে আজ রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এত অল্প সময়ে গত ১০০ বছরেও এমন বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়নি। এমন বৈরী আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাতভর অবিরাম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনের একমাত্র অবলম্বন শ্যামা সুন্দরী ও কেডি ক্যানেল। ভেঙে পড়েছে নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা। পানি নিষ্কাশনের সুযোগ না থাকায় পানির মধ্যেই চলছে যাতায়াত।
নগরবাসী বলছেন, ২৫-৩০ বছরেও এমন বৃষ্টিপাত দেখেননি তারা। ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাতেও এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়নি।
পানিবন্দি মানুষ উদ্ধারে সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস।
সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর নিচু এলাকাগুলোতে সবচেয়ে বেশি পানি প্রবেশ করেছে। বেশির ভাগ রাস্তা তিন থেকে চার ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর শাপলা চত্বর, হাজীপাড়া, চামড়াপট্টি, করণজাই রেড, সেনপাড়া, নিউ সেনপাড়া, আদর্শপাড়া, বাবুখাঁ, কামারপাড়া , জুম্মাপাড়া, কেরানীপাড়া, আলমনগর, হনুমান তলা, মুন্সিপাড়া, মুলাটোল আমতলা, গনেশপুর, বাবুপাড়া, লালবাগ কেডিসি রোড, বাস টার্মিনাল, শালবন, মিস্ত্রীপাড়া, কামাল কাছনা, মাহিগঞ্জ, কলাবাড়ি দর্শনা, মর্ডান মোড়, মেডিকেল পাকার মাথা, জলকর, নিউ জুম্মাপাড়া, খটখটিয়াসহ অন্তত শতাধিক পাড়া-মহল্লার অলিগলিসহ প্রধান সড়কে পানি জমে আছে। নিচু এলাকার বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় হাজার হাজার পরিবার বাড়ি-ঘর ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ছন্নছাড়া হয়ে পরেছে তাদের জীবন। নিজ বাড়িতে রান্না করতে না পারায় দুর্ভোগ চরমে পৌঁছে গেছে। অধিকাংশ হোটেল বন্ধ থাকায় তারা খাবার কিনে খেতেও হিমশিম খাচ্ছেন।
বিভিন্ন স্থানে ভারি বর্ষণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া মানুষ সহসাই যাতায়াত বাহন পাচ্ছেন না। যা পাওয়া যাচ্ছে তার জন্যও দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
জেলার তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী নদী বিধৌত নিম্নাঞ্চলে আবারও দেখা দিয়েছে বন্যা। তিস্তার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও বজ্রপাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি জমি, ফসল আর পুকুর-বিল তলিয়েছে পানিতে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বৃষ্টি আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এভাবে বৃষ্টিপাত হলে নগরীর বেশির ভাগ এলাকা তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্র জানিয়েছে, নগরীর পানি নিষ্কাশনের অন্যতম শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে ক্যানেলের পানি কমে আসলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে পানিবন্দি এলাকাগুলো থেকে পানি নেমে আসবে।
Comments