সিটির জালে লেস্টারের পাঁচ গোল, ভার্ডির হ্যাটট্রিক
প্রথমার্ধের খেলাতে এমন কিছুর বিন্দুমাত্র আভাসও পাওয়া যায়নি!
১-১ গোলে সমতায় থেকে বিরতিতে যায় দুদল। ম্যানচেস্টার সিটি তখন হয়তো দুই-তিন গোলে এগিয়ে থাকতে পারত। ম্যাচের নাটাই যে ছিল তাদের হাতে! কিন্তু বিরতির পর পেপ গার্দিওলার শিষ্যদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইংলিশ স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডি স্বাদ নিলেন হ্যাটট্রিকের। তার চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে ম্যান সিটিকে উড়িয়ে দিলো লেস্টার সিটি।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে রবিবার রাতে ঘরের মাঠ ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ৫-২ গোলের বড় ব্যবধানে হেরেছে সিটিজেনরা। চলতি মৌসুমে এটি তাদের প্রথম হার। রিয়াদ মাহরেজের গোলে দলটি লিড নেওয়ার পর টানা তিনবার নিশানা ভেদ করেন ভার্ডি। এরপর জেমস ম্যাডিসনও স্কোরশিটে নাম তোলেন। স্বাগতিকদের হয়ে ব্যবধান কমিয়েছিলেন নাথান আকে। কিন্তু তাদের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন লেস্টারের ইয়োরি টিলেমানস।
১৭ বছর পর লিগে ঘরের মাঠে পাঁচ গোল হজম করল ম্যান সিটি। সবশেষ ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আর্সেনালের কাছে এমনভাবে নাস্তানাবুদ হয়েছিল তারা। অন্যদিকে, ম্যাচে মোট তিনটি পেনাল্টি পেয়ে সবগুলোই কাজে লাগায় লেস্টার।
ম্যাচের প্রথম কর্নার থেকে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। চতুর্থ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের সেট পিস লেস্টারের রক্ষণভাগে প্রতিহত হওয়ার পর বল পেয়ে যান অরক্ষিত মাহরেজ। অপেক্ষাকৃত দুর্বল ডান পায়ের বুলেট গতির শটে দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন আলজেরিয়ার ফরোয়ার্ড।
শুরুতেই গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠা ম্যান সিটি এরপর চেপে ধরে প্রতিপক্ষকে। তাদের মুহুর্মুহু আক্রমণের বিপরীতে থিতু হতে পারছিল না লেস্টার। ১৩তম মিনিটে রদ্রির শট ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। চার মিনিট পর রহিম স্টার্লিংয়ের প্রচেষ্টা রুখে দেন গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মেইকেল। ২৫তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন সিটি দলনেতা ফার্নান্দিনহো। বেলজিয়ান তারকা ডি ব্রুইনের নিখুঁত ক্রসের সদ্ব্যবহার করতে পারেননি তিনি।
চালকের আসনে থেকে ৩৫তম মিনিটে লেস্টারের জালে বলও পাঠিয়েছিল সিটিজেনরা। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রির গোলে। খেলার ধারার বিপরীতে দুই মিনিট পর সমতায় ফেরে অতিথিরা। ডি-বক্সের ভেতরে নিজেই কাইল ওয়াকারের ফাউলের শিকার হওয়ার পর স্পট-কিক থেকে জাল কাঁপান ভার্ডি।
গোল শোধ করার আগ পর্যন্ত ম্যান সিটিকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেনি লেস্টার। কিন্তু স্কোরলাইন ১-১ হওয়ার পর পাল্টে যায় ম্যাচের চিত্র। বিরতির পর শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নাকানিচোবানি খাইয়ে ছাড়ে ব্রেন্ডন রজার্সের দল। আর ভাগ্যও সহায়তা করেনি সিটিকে।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে চার মিনিটের মধ্যে দুবার লক্ষ্যভেদ করে হ্যাটট্রিক পূরণ করার পাশাপাশি সিটিকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন ভার্ডি। তার দ্বিতীয় গোলটি ছিল গোছানো একটি আক্রমণের ফসল। টিলেমানসের রক্ষণচেরা পাস পেয়ে গোলমুখে ফেলেন টিমোথি কাস্টানিয়ে। নজরকাড়া ফ্লিকে গোলরক্ষক এদারসনকে পরাস্ত করেন ভার্ডি।
৫৮তম মিনিটে ভার্ডির তৃতীয় গোলটিও আসে পেনাল্টি থেকে। তাকে ডি-বক্সের ভেতরে ফেলে দিয়েছিলেন তরুণ স্প্যানিশ ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া। গার্দিওলার অধীনস্থ দলের বিপক্ষে এই নিয়ে দুটি হ্যাটট্রিক করলেন ভার্ডি, যে রেকর্ড আর কারও নেই।
৬৪তম মিনিটে অভিষিক্ত লিয়াম ডেলাপের হেড ক্রসবারে লেগে মাঠের বাইরে চলে গেলে ম্যাচে ফেরা হয়নি সিটির। ৭৭তম মিনিটে উল্টো আরেক গোল হজম করে তারা। ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে জোরালো শটে জালের ঠিকানা খুঁজে নেন ম্যাডিসন। ৮৪তম মিনিটে মাহরেজের কর্নারে হেড করে আকে স্কোরলাইন ৪-২ করলেও মিনিট দুয়েক পর লেস্টারকে ফের উল্লাসে মাতান টিলেমানস। তার গোলটিও আসে স্পট-কিক থেকে।
টানা তিন জয়ে গোল ব্যবধানে লিগের শীর্ষে রয়েছে ২০১৫-১৬ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন লেস্টার। তাদের অর্জন ৯ পয়েন্ট। দুই ম্যাচে ৩ পয়েন্ট নিয়ে ম্যান সিটির অবস্থান ১৩ নম্বরে। লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধারের অভিযানে ঘরের মাঠে প্রথমবার খেলতে নেমেই ধরাশায়ী হয়েছে তারা।
Comments