আমরা দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধে আছি: ফার্গুসন

নিয়াল ফার্গুসন। ছবি: সংগৃহীত

চীনকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরাধিকারী এবং মোদী সরকারের অধীনে থাকা ভারত যুক্তরাষ্ট্রের খুবই কাছের বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন ইতিহাসবিদ নিয়াল ফার্গুসন।

আজ সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত নিয়াল ফার্গুসনের এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা উঠে এসেছে।

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ককে ‘চীমেরিকা’ বলে সম্বোধন করেছিলেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের হুভার ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ফার্গুসন। বর্তমানে এই সম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চীমেরিকা শেষ। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার সময়ই এটা শেষ হওয়া শুরু করে। ২০১৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনের পর এটা শেষ হয়ে যায়।’

চীন খুবই দ্রুত এগোচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধের মধ্যে আছি। চীনের হুমকিপূর্ণ আচরণে যুক্তরাষ্ট্র জেগে উঠেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদী সরকারের অধীনে থাকা ভারত এখন যুক্তরাষ্ট্রের খুবই কাছাকাছি রয়েছে।’

চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিংপিংয়ের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে হার্ভার্ডের বেলফার সেন্টার ফর সাইন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের এই সিনিয়র ফ্যাকাল্টি বলেন, ‘চীন নিজেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি হিসেবে প্রকাশ করছে। এটি একটি সর্বগ্রাসী শাসনব্যবস্থা, যার ফলে মহামারির তথ্য গোপন এবং উইঘুরদের বন্দি করে রাখার মতো ঘটনা ঘটছে।’

চীন শীতল যুদ্ধ এড়িয়ে চলার এবং কয়েক দশকের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিলেও সে পথে হাঁটছে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সাল থেকে শুরু করে চীন আরও বেশি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করছে।’

শি জিংপিংয়ের বক্তব্য অবিশ্বাস করার যথেষ্ট যুক্তি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শি জিংপিং বলেছিলেন, চীন মুক্ত বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু, বাস্তবে চীন যেভাবে চলছে, তাতে তার প্রতিফলন নেই।’

তিনি জানান, চীন এশিয়ার পরাশক্তি হিসেবে নিজেদের তুলে ধরতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এবং এর সবই হচ্ছে শি জিংপিংয়ের সময়ে।

দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধ বিশ্বে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে তা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘এর কারণে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়বে। বিভিন্ন পণ্যের জন্য যে সাপ্লাই চেন চীন তৈরি করেছে, তা আর পারবে না। এর ফলে যে পরিবর্তন আসবে তার সুবিধা নিতে পারে ভারত। ভারত যদি এই সুযোগটি নিতে পারে, তাহলে একটি আমেরিকান প্রতিষ্ঠান চীনে না গিয়ে ভারতে ব্যবসা করতে পারে।’

প্রথম শীতল যুদ্ধে ভারত অংশ না নিলেও দ্বিতীয় শীতল যুদ্ধে এমন কিছু হবে না বলে মনে করেন ফার্গুসন।

চীন ও ভারতের মধ্যকার লাদাখ সীমান্তে চীনের সামরিক অবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সামরিক বাহিনী তাদের প্রতিবেশী দেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাতমূলক অবস্থানে যাচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের খুবই ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা চীন ভালো চোখে দেখছে না বলে তিনি মনে করেন। লাদাখ সীমান্ত যা হচ্ছে তা দিয়ে চীন বোঝাতে চেষ্টা করছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সখ্যতা না বাড়িয়ে এশিয়ায় চীনের আধিপত্য ভারতের মেনে নেওয়া উচিত। তাইওয়ানের সঙ্গেও ঠিক এমনটিই করা হচ্ছে বলে তিনি যোগ করেন।

জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের মতো বন্ধুসূলভ রাষ্ট্র থেকেও চীন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীনের আক্রমণাত্মক আচরণ তাদের একঘরে করে ফেলছে। এ বিষয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।’

রাশিয়ার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ইতিহাসে সর্বোচ্চ ভালো অবস্থানে এসে পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেন ফার্গুসন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র হেনরি কিসিঞ্জারের নীতির বিপরীতে রয়েছে। তার মতে চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক যতটা ভালো থাকবে, তার চেয়ে বেশি ভালো থাকতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। বর্তমানে দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে থাকা সম্পর্কের চেয়ে অনেক বেশি ভালো।’

এ বিষয়টি না বুঝেই যুক্তরাষ্ট্র মস্কো ও বেইজিংয়ের মধ্যকার ইউরেশিয়া জোটের সমর্থন দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

‘এমপায়ার’, ‘সিভিলাইজেশন’, ‘কিসিঞ্জার’র মতো বেস্ট সেলিং বইয়ের এই লেখক যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনের প্রার্থীদের বিষয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প) অনেক ভুল করেছেন। তাকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে আমাকে অনেক চিন্তা করতে হবে। কিন্তু, আমি যখন অপর দুই প্রার্থী জো বাইডেন ও কামালা হ্যারিসকে দেখি, তখন হতাশায় পড়ে যাই।’

বেশিরভাগ আমেরিকানের মধ্যেই এই সংশয় কাজ করছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘জো বাইডেনও যদি ক্ষমতায় আসে, তারপরও চীনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে পরিবর্তন আসবে বলে আমার মনে হয় না। যুক্তরাষ্ট্র চীনের পাশেই দাঁড়াবে এবং নতুনভাবে জোটবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করবে।’

Comments

The Daily Star  | English
bad loans rise in Bangladesh 2025

Bad loans hit record Tk 420,335 crore

It rose 131% year-on-year as of March of 2025

9h ago