স্লোভেনিয়াতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে বাংলাদেশিসহ ১১৩ অভিবাসী আটক
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/143329_1200x.jpeg?itok=-8GGkGM_×tamp=1601441999)
মধ্য ইউরোপের দেশ স্লোভেনিয়াতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে গত সোমবার ১১৩ জন অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। স্লোভেনিয়ার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। স্লোভেনিয়ার স্থানীয় পত্রিকা স্লোভিনেস্ক নোভিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আটককৃত অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ৫২ জন বাংলাদেশি।
স্লোভেনিয়ার পুলিশ প্রশাসনের মুখপাত্র আনিকা লেস্কোভিচ দেশটির এক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, স্লোভেনিয়াতে এর আগে কখনও এক দিনে এক সঙ্গে এতো বিশাল সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীদেরকে আটক করার ঘটনা ঘটেনি। যেহেতু স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ইলিরস্কা বিস্ট্রাসে এ ঘটনাটি ঘটেছে তাই ধারণা করা হচ্ছে এ সকল অবৈধ অভিবাসীদের বেশির ভাগই ক্রোয়েশিয়া থেকে স্লোভেনিয়া হয়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে ইতালি, স্পেন, ফ্রান্সে পৌঁছানোর জন্য এ রুটটি ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন।
এ ঘটনায় স্লোভেনিয়ার জনসাধারণের মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্লোভেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেস হোস জানিয়েছেন এক সঙ্গে এতো বিশাল সংখ্যক অবৈধভাবে অনুপ্রবেশকারীকে আটক করার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় স্লোভেনিয়াসহ আশেপাশের দেশ বিশেষ করে বলকান দেশগুলোকে ঘিরে মানবপাচারের এক সুবিশাল চক্র গড়ে উঠেছে।
তুরস্কের ইস্টার্ন থ্রেস থেকে শুরু করে গ্রিস, বুলগেরিয়া, মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ক্রোয়েশিয়া, মন্টিনেগ্রো, হাঙ্গেরি ও রোমানিয়ার অংশ বিশেষকে একীভূত করে বলকান নামে ডাকা হয়। স্থানীয় বলকান পর্বতমালার নাম অনুসারে এ অঞ্চলটির নাম রাখা হয়েছে বলকান।
অতীতে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো থেকে অবৈধভাবে ইতালি, স্পেন, গ্রিস, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অনুপ্রবেশের কথা শোনা গেলেও, বর্তমানে এ সকল দেশের কোস্টগার্ড বাহিনীর তৎপরতার কারণে এভাবে ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ অনুপ্রবেশ অনেকটা কমে এসেছে। এজন্য এখন বেশিরভাগ মানুষ ইউরোপে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের জন্য বলকানের এ রুটটি ব্যবহার করেন। প্রথমে সবাই তুরস্ক থেকে গ্রিসে কিংবা বুলগেরিয়াতে প্রবেশ করেন। যেহেতু বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মাঝে অর্থনৈতিক দিক থেকে গ্রিস এবং বুলগেরিয়া অনেকটা পশ্চাৎপদ রাষ্ট্র এবং একই সঙ্গে এ দুইটি দেশ সে অর্থে অভিবাসনবান্ধব রাষ্ট্র না, তাই এখন বেশির ভাগ অনুপ্রবেশকারীরা গ্রিস কিংবা বুলগেরিয়া থেকে মেসিডোনিয়া হয়ে সার্বিয়া ও বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনার মধ্য দিয়ে ক্রোয়েশিয়াতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেন।
ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত সংযোগ থাকায় তাদের বেশিরভাগই ক্রোয়েশিয়া হয়ে স্লোভেনিয়াতে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন এবং স্লোভেনিয়াতে পৌঁছানোর পর তাদের লক্ষ্য থাকে প্রতিবেশী দেশ ইতালিসহ সেনজেনভুক্ত অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে স্পেন, ফ্রান্স ও পর্তুগালের দিকে যাওয়া। স্লোভেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়ায় বর্তমানে সবচেয়ে বেশি মানুষকে আটক করা হচ্ছে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে। বর্তমানে বলকান অংশটি হচ্ছে ইউরোপে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং একই সঙ্গে মানবপাচারের সবচেয়ে জনপ্ৰিয় রুট। ইউরোপীয় সীমান্ত ও উপকূলরক্ষী সংস্থা ফ্রন্টেক্স এর তথ্য মতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় বলকান রাষ্ট্রগুলো হয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ির ঘটনা ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
এর আগেও গত সপ্তাহে স্লোভেনিয়ার অন্য একটি সীমান্তবর্তী শহর ছেলইয়েতে এক লরি থেকে ৩৪ জন অবৈধ অভিবাসীকে আটক করা হয়।
স্লোভেনিয়ার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে গত আট মাসে দেশটিতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের দায়ে সর্বমোট ১০ হাজার ২২৩ জনকে আটক করা হয়েছে, যা বিগত বছরের তুলনায় তিন দশমিক তিন শতাংশ বেশি।
স্লোভেনিয়ার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটককৃতদের বেশিরভাগই বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং মরক্কোর নাগরিক।
Comments