‘মসজিদ ভাঙার ছবির নেগেটিভ পাওয়া যায়নি, ভিডিও ফুটেজ বিকৃত করা হয়েছে’
ভারতের অযোধ্যার ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল না বলে রায় দিয়েছেন লক্ষ্ণৌর বিশেষ সিবিআই আদালত। ২৮ বছর ধরে চলা এই মামলায় অভিযুক্ত সবাইকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তদের আইনজীবীরা এনডিটিভিকে জানান, ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার যে ছবি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে, সেটির কোনো নেগেটিভ পাওয়া যায়নি। ভিডিও ফুটেজ বিকৃত করা হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন আদালত। সেদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। নেতারা জনতাকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে পেছন থেকে ইট-পাথর ছোড়া শুরু হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সেসময় নেতাদের নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যায়।
আদালত জানিয়েছে, মসজিদ ভাঙার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল এমন কোনো জোরালো সাক্ষ্য ও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্বতঃস্ফূর্ত জনরোষের কারণেই সেদিন মসজিদ ভাঙা হয়।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রায় ঘোষণার পরই আদালত জুড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি শোনা গেছে।
এদিকে, বেকসুর খালাস পাওয়ায় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানিকে ফোন করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আজ বুধবার গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘তাৎপর্যপূর্ণ রায়টিকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি। এতে প্রমাণ হয়ে গেছে যে, সেদিন যা হয়েছিল তা পরিকল্পিত ছিল না, কোনো ষড়যন্ত্র ছিল না। লাখ লাখ দেশবাসীর সঙ্গে আমিও এখন অযোধ্যাতে সুন্দর রাম মন্দিরটির নির্মাণকাজ সমাপ্তির অপেক্ষায় আছি।’
২০০০ সালে এনডিটিভিকে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে লালকৃষ্ণ আদভানি বাবরি মসজিদের ঘটনাকে ‘ভয়াবহ ভুল’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, ‘আজ পর্যন্ত সত্যিই আমি জানি না যে, এটি কি জনতার ক্রোধ ছিল, বিক্ষুব্ধ জনতা কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল, নাকি একটি ছোট সংকল্পবদ্ধ দল এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং যারা মনে করেছিলেন যে, এটি করা উচিত, আমি এ ব্যাপারে এখনো নিশ্চিত নই।’
আদালতের এমন রায়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রায়ে অসন্তোষ জানিয়ে উচ্চ আদালতে আপিলের আবেদন করার কথা জানিয়েছে মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড।
ভারতীয় মুসলমানদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জমিয়তে উলামায়ের মুখপাত্র জানান, সাক্ষ্য-প্রমাণ সবই আছে। সেদিন যোশী ছিলেন, উমাও ছিলেন। তারা মসজিদ ভাঙার ঘটনায় মিষ্টি বিতরণ করেছেন, তারা স্লোগান দিয়েছেন। কিন্তু আজকে বলা হলো- তারা জড়িত নন। আজ ভারতবর্ষের জন্য একটি ‘কালো’ দিন।
এই মামলায় ৪৯ জন অভিযুক্তের মধ্যে ইতোমধ্যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অশোক সিংঘল, শিবসেনার বাল ঠাকরে, অযোধ্যার পরমহংস রামচন্দ্র দাসসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, জীবিত আছেন ৩২ জন।
আজ ৩২ জন অভিযুক্তের মধ্যে ২৬ জনকে আদালতে উপস্থিত থাকার আদেশ দেওয়া হয়। এ মাসের শুরুতেই এই ৩২ জন অভিযুক্তের জবানবন্দি রেকর্ড করেন আদালত।
আরও পড়ুন:
Comments