গ্রাফিতি আঁকা যাবে না, ধর্ষণের প্রতিবাদ করা যাবে না?

(বাঁ থেকে) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ । ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে সারা পৃথিবীতেই পরিচিত গ্রাফিতি। দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকা বড় থেকে ছোট বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদে সুস্থধারার আন্দোলনের একটি স্বীকৃত পদ্ধতি।

সম্প্রতি ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজধানীর বেইলি রোডে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকার সময় ছাত্র ইউনিয়নের দুই নেতাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। ভিডিও চিত্রে দেখা যায় তুলে নেওয়ার সময় পুলিশ অত্যন্ত অসম্মানজনক আচরণ করছে। থানায় নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগও উঠেছে। শরীরে সেই চিহ্ন রয়ে গেছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশে  ধর্ষণের প্রতিবাদ জানানো যাবে না? গ্রাফিতি আঁকা যাবে না? এমনই কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহম্মদ নূরুল হুদা এবং লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদের সঙ্গে।

গ্রাফিতির মাধ্যমে প্রতিবাদ, কোনো অন্যায় নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এটি অন্যায় নয়। তারা গ্রাফিতির মাধ্যমে তাদের মত প্রকাশ করছে। প্রতিবাদ তো তারা সাংস্কৃতিকভাবে করছে। এখানে অন্যায়ের কিছু দেখি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে আমরা চিকামারা শুরু করি। দেয়ালে দেয়ালে আয়ূব বিরোধী চিকামারতাম। দেশের স্বাধীনতায় সেগুলোও অবদান রেখেছে। যারা চিকামেরেছে তারা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সচেতন করতে হবে। অন্যায় হলে তার প্রতিবাদ জানাতে হবে।’

‘গ্রাফিতি, পথ নাটক, মানববন্ধন হচ্ছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের হাতিয়ার। এর মাধ্যমে মানুষকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব, সচেতন করা সম্ভব,’ যোগ করেন তিনি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনের গ্রাফিতি আঁকার সময় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি জওহরলাল রায় এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সাদাত মাহমুদকে কয়েকজন পুলিশ সদস্য জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায় গত সোমবার রাতে। পরে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুলিশ হেফাজতে আটক দুজনকে নির্যাতনের অভিযোগ করেন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি অনিক রায়।

গ্রাফিতি আঁকাকে অন্যায় বলে মনে করেন না বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক মুহম্মদ নূরুল হুদা। তবে দেশের প্রচলিত আইন মেনে তা করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘গ্রাফিতি করা অন্যায় নয়, কিন্তু কোথায় গ্রাফিতি করা হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। সব এলাকায় বা সব জায়গায় দেয়ালে আঁকার অনুমতি নেই। নগরীর সৌন্দর্যের জন্য দেয়ালে আঁকা বা লেখার ওপর অনেক জায়গাতেই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেটা বুঝে করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় কোনটা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।’

গ্রাফিতিকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ভাষা বলে মনে করেন সাংবাদিক, কলামিস্ট, গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, ‘গ্রাফিতি আঁকা অন্যায় হতে পারে না। সারা দেশে ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। এখন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে করোনার মধ্যে মিছিল করা, সভা করা বা মানববন্ধন করা ঝুঁকিপূর্ণ। মানববন্ধন করলেও মাস্ক পরে এবং প্রয়োজনীয় দূরত্ব বজায় রেখে তা করতে হচ্ছে। সেখানে ধর্ষণের মতো গর্হিত অপরাধের প্রতিবাদে গ্রাফিতি হতেই পারে।’

গ্রাফিতি আঁকার অপরাধে পুলিশের আটক করাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ তার মত প্রকাশ করতে পারবে না? গ্রাফিতি আঁকতে তাদের বাধা দেওয়ার অর্থ স্পষ্টতই তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা দেওয়া।’

গ্রাফিতি নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা বিষয়ে কোর্স করতে জার্মানির বনে গিয়েছিলাম। তখন বন ছিল জার্মানির রাজধানী। কোর্সের সুবাদেই যাওয়া হয় সেখানকার স্থানীয় প্রেসক্লাবে। গিয়ে দেখি প্রেসক্লাবের দেয়াল গ্রাফিতিতে ভরা। প্রতিটি গ্রাফিতির শরীর পশু-পাখির। আর চেহারা মানুষের। মানুষ বলতে তৎকালীন জার্মানির মন্ত্রিসভা বা বিরোধী দলের যারা নেতা তাদের চেহারা। আচরণের সঙ্গে মিল রেখে পশু-পাখিদের শরীরে নেতাদের চেহারা সেখানে এঁকেছে। আমাদের দেশে কী এটা সম্ভব? সম্ভব না।’

Comments

The Daily Star  | English

Muslim pilgrims pray at Mount Arafat in hajj apex

Thousands of pilgrims began to gather before dawn around the hill and the surrounding plain

1h ago