গানই তার শেষ পরিচয়
শোন গো দখিনো হাওয়া প্রেম করেছি আমি, ঘাটে লাগাইয়া ডিঙা পান খাইয়া যাও মাঝি, বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে হৃদয়ে দিয়েছ দোলা, কে যাসরে ভাটির গাঙ বাইয়া, তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল কিংবা বন্ধু রঙ্গিলা-রে গানগুলো আজও মানুষের মনে দোলা দিয়ে যায়।
এই গানগুলো শচীন দেব বর্মনের সুর সংগীত ও কন্ঠে বেঁচে রবে যুগ-যুগান্তর। তার গানের মধ্যে লোকসুর, ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া ও বাউল গানের প্রভাবে নতুন একটা মাত্রার সৃষ্টি হতো। গতকাল ছিল গানের সেই রাজা শচীন দেব বর্মনের (এস ডি বর্মণ) জন্মদিন। ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশের কুমিল্লায় জন্মেছিলেন।
শচীন দেব বর্মন ১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে প্রথম গান করেন। ১৯৩২ সালে তার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড বের হয়। ১৯৩৭ সাল বেশ কিছু বাংলা সিনেমায় সংগীত পরিচালক হিসেবে গান করেন— রাজগী, ছদ্মবেশী, জীবন-সঙ্গিনী, মাটির ঘর নামে। ১৯৪৪ সালে (বোম্বে) বর্তমান মুম্বাইয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি। সেখানে প্রায় ৮০টি হিন্দি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে খ্যাতির সঙ্গে কাজ করেন। ১৯৭৩ সালে ‘অভিমান’ সিনেমার ‘তেরে মেরে মিলান কি ইয়ে রেয়না, ‘পিয়া বিনা পিয়া বিনা বাসিয়া বাজে না’। ১৯৬৯ সালে কিশোর কুমারের কণ্ঠে গাওয়া ‘আরাধনা’ ছবির ‘মেরে স্বপ্ন কি রানী কাব আয়েগি তু’ এবং ‘রূপ তেরা মাস্তানা’, ‘সুন মেরে বন্ধুরে সুন মেরে মিতওয়া, সুন মেরে সাথীরে’ গানগুলো ভীষণ জনপ্রিয়তা পায়।
শচীন দেব বর্মণ ১৯৬৯ সালে ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ উপাধি এবং চলচ্চিত্রে হিন্দি গানের গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন মীরা দেব বর্মনের সঙ্গে। খ্যাতনামা একজন গীতিকার ছিলেন মীরা। পুত্র রাহুল দেব বর্মণ (আরডি বর্মণ) সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে স্বনামধন্য। ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর কিংবদন্তি সুরস্রষ্টা ও শিল্পী শচীন দেব বর্মনের জীবনাবসান ঘটে।
Comments