লিবিয়ায় হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া ৯ জনসহ দেশে ফিরলেন ১৬৪ প্রবাসী

Libya Migrants-1.jpg
ছবি: ইউএনবি

লিবিয়ার মিজদাহ শহরে হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া নয় অভিবাসীসহ ১৬৪ বাংলাদেশি স্বেচ্ছায় বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরে এসেছেন।

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৩০ সেপ্টেম্বর তারা অবতরণ করেন বলে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।

গত মে মাসে মিজদাহ শহরে পাচারকারীদের গুলিতে ৩০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি ছিলেন।

আগত ফ্লাইটে ১০০ বিপদাপন্ন অভিবাসী ছিলেন, যাদের মধ্যে ৩৯ জন শারীরিকভাবে অসুস্থ। অভিবাসীদের তাৎক্ষণিক সহায়তার জন্য তাদের সঙ্গে ভ্রমণ করেন আইওএম’র মেডিকেল সহায়তা প্রদানকারীরা। আগমনের পর স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী দল সেখানে উপস্থিত হন প্রয়োজনীয় সেবা ও সহায়তা প্রদানের জন্য, যার মধ্যে ছিল সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোয়ারেন্টিনে যাওয়া, অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবার সমন্বয় করা, বিশেষায়িত সেবায় রেফারেল সহায়তা প্রদান এবং গুরুতর অসুস্থ অভিবাসীদের ফলো-আপ সহায়তা প্রদান।

সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন শেষে অসহায় অভিবাসীদের পুনরেকত্রীকরণে সহায়তা প্রদান করবে আইওএম। লিবিয়ায় অসহায় অবস্থায় থাকাকালীন ফিরে আসা অভিবাসীরা শারীরিক ও মানসিক ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছেন। তাদের পুরোপুরি সুস্থতার জন্য পুনরায় সেবা প্রয়োজন।

লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মিজদাহ’র ওই পৈশাচিক ঘটনায় গুরুতর আহত হন ১১ বাংলাদেশি অভিবাসী। আইওএম এবং সহযোগী সংস্থাগুলো ঘটনার পর থেকেই ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করে আসছে।

মিজদাহ’র আক্রমণের শিকার মোহাম্মদ সৈয়দ খান বলেন, ‘আমি এ ঘটনা কিছুতেই ভুলতে পারছি না। এটি আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। আমার শরীরে গুলি লাগে এবং চার মাস পর আমি দেশে ফেরার মতো সুস্থ হই। এখনো অনেকেই পুরোপুরি সুস্থ হননি এবং আমরা এখনো আতঙ্কিত। লিবিয়াতে আমাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও সহায়তা প্রদান এবং ফ্লাইটের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য আমি আইওএম এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

আইওএম’র কাছ থেকে শারীরিক চিকিৎসা ও মনো-সামাজিক সেবার পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা পাবেন সৈয়দ খান। আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করে নিজের পরিবারের ভরণপোষণ নিশ্চিত করতে পারবেন তিনি।

আইওএম বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, ‘কোভিড-১৯ সমগ্র বিশ্বের অভিবাসী কর্মীদের বিপদাপন্নতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। অবরুদ্ধ এবং অসহায় অভিবাসীদের সহায়তায় এগিয়ে যেতে আমরা চলাচলসহ নানা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠার জন্য কাজ করে চলেছি। অভিবাসীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয়, খাদ্য, কনস্যুলার সেবা এবং সর্বোচ্চ বিপদাপন্নদের জন্য দেশে ফেরত আনার ফ্লাইট নিশ্চিত করতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে, বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একত্রে কাজ করে যাচ্ছি।’

বাংলাদেশে বিদেশ থেকে আসা অধিকাংশ অভিবাসীই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেন। গেল মার্চ মাস থেকেই বাংলাদেশ সরকারের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) সঙ্গে সমন্বিতভাবে আইওএম বাংলাদেশ এ বিমানবন্দরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ও কোভিড-১৯ সন্দেহভাজন ভ্রমণকারীদের চিহ্নিতকরণ, পর্যবেক্ষণ এবং রেফার করতে কর্মরত, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। দেশের ২৮টির মধ্যে ২০টি প্রবেশ কেন্দ্রে সরকারকে সহায়তা করছে আইওএম। প্রবেশ কেন্দ্রে কোভিড-১৯ সাড়াপ্রদান কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া অভিবাসীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিতের পাশাপাশি প্রবেশ কেন্দ্রের অগ্রভাগে কর্মরত কর্মী এবং জনগোষ্ঠীর কোভিড-১৯ হতে সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।

অভিবাসীদের আগমন-পরবর্তী সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আইওএম সবচেয়ে বিপদাপন্ন বিদেশফেরত অভিবাসীদের টেলি-কাউন্সেলিং বা মোবাইলের মাধ্যমে মনো-সামাজিক সেবা, স্বাস্থ্য সুপারিশ ও ফলো-আপ সেবা, দক্ষতা ও আর্থিক শিক্ষার প্রশিক্ষণ এবং পুনরেকত্রীকরণ সহায়তা প্রদান করছে।

আফ্রিকার মধ্য ভূমধ্যসাগরীয় পথে অভিবাসীদের সুরক্ষা, স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন এবং পুনরেকত্রীকরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ‘ইমার্জেন্সি ট্রাস্ট ফান্ড ফর আফ্রিকার (ইইউটিএফ)’ মাধ্যমে আফ্রিকায় অভিবাসীদের সুরক্ষা ও পুনরেকত্রীকরণে আইওএম’র সঙ্গে ২০১৬ সালে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। ইইউটিএফ’র সহায়তায় বাংলাদেশে ফিরেছেন ১৬৪ অভিবাসী।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

44m ago