কাজী সালাউদ্দিনই বাফুফে সভাপতি

রাজধানীর একটি হোটেলে ভোট গণনা শেষে রাত ৮টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

সময়ের চাকা ঘুরেছে চার বছর। আবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নির্বাচন। তবে চিত্র বদলায়নি। আবারও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন কাজী সালাউদ্দিন। এই নিয়ে টানা চতুর্থবার বাফুফে প্রধান হলেন তিনি। আর সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে আবারো নির্বাচিত হয়েছেন সালাম মুর্শেদী।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ভোট গণনা শেষে রাত ৮টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন। এর আগে দুপুর ২টার কিছু পরে শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ কার্যক্রম চলেছে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

১৩৯ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ১৩৫ জন তাদের ভোট প্রদান করেন। অর্থাৎ ভোট পড়েছে ৯৭.১২ শতাংশ। যে চার জন ভোট দেননি তারা হলেন চট্টগ্রাম আবাহনীর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তরফদার রুহুল আমিন, ফরিদপুর জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নাজমুল ইসলাম খন্দকার, শেখ রাসেলের পরিচালক মাকসুদুর রহমান ও শেখ জামালের সভাপতি সাফওয়ান সোবহান। তারা ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্বে বার্ষিক সাধারণ সভায়ও (এজিএম) উপস্থিত ছিলেন না।

বাফুফে নির্বাচনে এবার সভাপতি পদে বিজয়ী সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী সালাউদ্দিন ভোট পেয়েছেন ৯৪টি। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বাদল রায়  ৪০টি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মানিক মাত্র ১টি ভোট পেয়েছেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সম্মিলিত পরিষদের সালাম মুর্শেদী ৯১টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সমন্বয় পরিষদের শেখ মোহাম্মদ আসলাম পেয়েছেন ৪৪টি।

চারটি সহ-সভাপতি পদের তিনটিতে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ ইমরুল হাসান (৮৯), কাজী নাবিল আহমেদ (৮১) ও আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক (৭৫)। তারা সবাই সম্মিলিত পরিষদের প্রার্থী ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও সমন্বয় পরিষদের মহিউদ্দিন আহমেদ মহী সমান ৬৫টি করে ভোট পেয়েছেন। ফলে চতুর্থ সহ-সভাপতি পদের জন্য এই দুই প্রার্থীর মধ্যে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩১ অক্টোবর।

নির্বাহী সদস্য পদেও সালাউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত পরিষদের জয়জয়কার। ১৫টি সদস্য পদের মধ্যে নয়টি পেয়েছে তারা। সম্মিলিত পরিষদ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন মো. জাকির হোসেন (৮৭), বিজন বড়ুয়া (৮৫), নুরুল ইসলাম নুরু (৮৪), মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিম (৮৪), সত্যজিৎ দাশ রুপু (৭৬), ইলিয়াস হোসেন (৭৫), ইমতিয়াজ হামিদ সবুজ (৭৪), মাহফুজা আক্তার কিরণ (৭০) ও হারুনুর রশিদ (৭০)। সমন্বয় পরিষদ থেকে নির্বাচিত ছয় জন হলেন আব্দুল ওয়াদুদ পিন্টু (৮৬), আরিফ হোসেন মুন (৮৫), টিপু সুলতান (৮১), আমের খান (৭৯), সাইফুল ইসলাম (৬৯) ও মহিদুর রহমান মিরাজ (৬৮)।

নির্বাচনে জিতলেও অনেকদিন থেকেই সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবচ্ছেদ হয়ে আসছিল সালাউদ্দিনের বিগত বছরগুলোর কর্মকাণ্ডের। মূলত তার কাছে যে প্রত্যাশা ছিল ফুটবল অনুরাগীদের, তা পূরণ হয়নি। তাকে নিয়ে তাই সমালোচনায় মাতে ফুটবলভক্তরা। এমনকি ভোট চলাকালীনও হোটেলের বাইরে একদল ফুটবল সমর্থক তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছেন। তবে ভোটে এসবের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাজী সালাউদ্দিন। মেজর জেনারেল আমিন আহমেদকে হারিয়ে সেবার দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধানের চেয়ারে বসেন সাবেক এই তারকা ফুটবলার। পরের দফায় অবশ্য লড়াই করতে হয়নি সালাউদ্দিনকে। ২০১২ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। চার বছর পর অবশ্য বাফুফে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে নির্বাচনে কামরুল আশরাফকে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো বাফুফে প্রধান হন দেশের ফুটবলের এ কিংবদন্তি।

সবমিলিয়ে ২১টি পদের বিপরীতে মোট ৪৭ জন প্রার্থী লড়াই করেন এবারের নির্বাচনে। সভাপতি পদে তিনজন ও সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে দুজন অংশ নেন। চারটি সহ-সভাপতি পদের বিপরীতে ছিলেন আট জন। আর ১৫টি সদস্য পদে লড়াই করেন ৩৪ জন প্রার্থী।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মেজবাহ। কমিশনার হিসেবে ছিলেন মাহফুজুর রহমান সিদ্দিকী ও মোহাতার হোসেন সাজু। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার থেকে ভেন্যু হোটেল সোনারগাঁওকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। ভোটের দিন বাড়তি নিরাপত্তা হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন পুলিশ ও এনএসআইয়ের সদস্যরাও।

উল্লেখ্য, আগেরবার অনিয়মের অভিযোগে হট্টগোল হলেও বাফুফের এবারের এজিএম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সভায় গত বছরের আর্থিক বিবরণী ও আগামী বছরের বাজেট সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
Pro-Awami League journalist couple arrested

The indiscriminate arrests and murder charges

Reckless and unsubstantiated use of murder charges will only make a farce of the law, not bring justice to those who deserve it.

8h ago