‘কিটো ডায়েট’ প্রসঙ্গ

অনেকেই আজকাল কিটো ডায়েট ক্রেজে ভুগছেন। কিন্তু এই কিটো ডায়েট ওজন কমালেও, শরীরের জন্য ভালো, না মন্দ সেটি হয়তো জানেন না। একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজন হলে বিচার বিশ্লেষণ করে কাউকে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে সেটি গণহারে সবার জন্য মেনে চলার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
Keto Diet-1.jpg
ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই আজকাল কিটো ডায়েট ক্রেজে ভুগছেন। কিন্তু এই কিটো ডায়েট ওজন কমালেও, শরীরের জন্য ভালো, না মন্দ সেটি হয়তো জানেন না। একজন পুষ্টিবিদ বা ডায়েটেশিয়ান স্বাস্থ্যগত কারণে প্রয়োজন হলে বিচার বিশ্লেষণ করে কাউকে কিটো ডায়েটের পরামর্শ দিতেই পারেন। তবে সেটি গণহারে সবার জন্য মেনে চলার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

কিটো ডায়েট শুরু করার পর অসুস্থতাবোধ এবং ডায়রিয়া ইত্যাদি স্বল্পমেয়াদী সমস্যা থেকে শুরু করে দীর্ঘমেয়াদী নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

কিটো ডায়েট অনুযায়ী শরীরবৃত্তীয় চাহিদা মেটাতে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করার (চাল, ভুট্টা, গম ইত্যাদির তৈরি খাবার) পরিবর্তে ফ্যাট বা চর্বি ব্যবহার করার ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়। কার্বোহাইড্রেট কম বা গ্রহণ না করার মাধ্যমে শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি হরমোন ইনসুলিনকে কমিয়ে ফেলাই কিটো ডায়েটের মুল উদ্দেশ্য। এই ইনসুলিন একদিকে যেমন শর্করা ভাঙে, অন্যদিকে চর্বি ও প্রোটিন জমাতে সাহায্য করে। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে থাকে। কিন্তু শর্করা না থাকলে চর্বি শরীরবৃত্তীয় কাজে ব্যবহার হতে পারে না। ইনসুলিনের অভাবে কার্বোহাইড্রেট মেটাবোলিজম বন্ধ হয়ে গেলে চর্বি ভেঙে কিটো এসিড তৈরি করে, যা শরীরের জন্য ভয়াবহ একটি অবস্থা কিটো-এসিডোসিস সৃষ্টি করতে পারে। কিটো এসিডোসিসের কারণে মস্তিষ্ক, লিভার এবং কিডনির অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে।

মস্তিষ্কের প্রধান খাবার হলো গ্লুকোজ, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার ভেঙে তৈরি হয়। মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করতে পারে না। দীর্ঘদিন ডায়েটিং করলে একসময় মস্তিষ্ক কিটোন ব্যবহার করার সক্ষমতা লাভ করে। কিন্তু কিটোন মস্তিষ্কের জন্য কতোটা স্বাস্থ্যকর, সে সম্পর্কে প্রয়োজনীয় কোনো গবেষণালব্ধ ফলাফল নেই। দীর্ঘমেয়াদে কিটো ডায়েটে স্মৃতি ভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

কিটো ডায়েট চলাকালে চর্বি ভেঙে রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই চর্বি হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে জমে তা বন্ধ করে দিতে পারে। যা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। রক্তে চর্বি বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

কিটো ডায়েট চলাকালে শুধু চর্বিই ভাঙে না, প্রোটিনও ভাঙে। শরীরের বাহ্যিক গঠন, যেমন: মাংসপেশি ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, প্রধানত প্রোটিন দিয়েই তৈরি। কিটো ডায়েট চলাকালে মাংসপেশি এবং হাড়ের গঠনে প্রভাব ফেলে। ক্রীড়াবিদদের হাড়ে ভঙ্গুর অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। প্রোটিন ভেঙে অপুষ্টির মতো অবস্থা তৈরি করতে পারে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী কম শর্করা জাতীয় খাদ্যাভ্যাস ক্যান্সার এবং হৃদরোগের কারণ হতে পারে। কিটো ডায়েট গ্রহণকারীদের মধ্য মৃত্যুর হারও বেশি বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।

গত ২ অক্টোবর কিডনি জটিলতা নিয়ে বেঙ্গালুরুর এক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বলিউডের বাঙালি অভিনেত্রী মিষ্টি মুখার্জী (২৭)। সেসময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে তার পরিবার জানায়, বেশ কিছুদিন ধরে কিটো ডায়েট মেনে চলছিলেন তিনি। এতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরিবারের শোক বার্তায় বলা হয়েছে, টানা কিটো ডায়েটের ফলেই কিডনির জটিলতা দেখা গিয়েছিল মিষ্টির।

মনে রাখবেন- সুস্থ স্বাভাবিক, কর্মক্ষম দীর্ঘ জীবনের জন্য প্রয়োজন সুষম খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম বা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম, অস্বাভাবিক কিটো ডায়েট নয়। উঠতি বা যুবা বয়সে কিটো ডায়েট ক্রেজে আক্রান্ত না হয়ে বরং সুষম খাবার উপভোগ করে সেটি পরিশ্রম বা ব্যায়ামের মাধ্যমে ঝড়িয়ে ফেলার পর বিশ্রাম নিন, জীবনকে উপভোগ করুন।

লেখক: ডা. এম আর করিম রেজা, ত্বক, সৌন্দর্য ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ

Comments

The Daily Star  | English

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago