ধানের দ্বিগুণ দাম খড়ের

উচ্চমূল্যে খড় কিনে বাড়ি ফিরছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার এক কৃষক। ছবি: স্টার

বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২৭ টাকা হলেও ধানের খড় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। খড় হচ্ছে গরুর উৎকৃষ্ট খাদ্য। গোখাদ্যের চরম সংকট থাকায় যারা গরু পালন করেন তারা বাধ্য হয়েই চড়া দামেই কিনছেন খড়।

এত বেশি চড়া দামে আগে কখনোই খড় বিক্রি হয়নি লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে। গরু পালন করতে এ অঞ্চলে কৃষকদের ভরসা খড়।

প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ২৭ লাখ গরু রয়েছে। প্রায় চার লাখ কৃষি পরিবার গরু পালন করে আয় করে থাকেন। দফায় দফায় বন্যায় ঘাসের জমি ও খড়ের পুঞ্জ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ বছর।

কুড়িগ্রাম প্রানীসম্পদ কর্মকর্তা ড. আব্দুল হাই সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আরও এক মাস পর আমন ধান কাটা হলে ঘাসের জমি পাওয়া যাবে। এছাড়া কৃষকরা এখন জমি পতিত রাখেন না। তাই গরু পালন করতে কৃষকদের গোখাদ্য কিনতে হয়। গোখাদ্যের মধ্যে খড় হলো উৎকৃষ্ট। বন্যায় ঘাসের জমি ও খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজের ইচ্ছে মতো খড়ের দাম বাড়িয়ে আকাশচুম্বী মুনাফা করছেন।’

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা এলাকার খড় ব্যবসায়ী মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে খড় কিনে এনে কৃষকের কাছে বিক্রি করি। এক কেজি খড় ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এক কেজি খড় বিক্রি করেছি ৩২ থেকে ৩৫ টাকায়। গতবছর এমন সময়ে খড় বিক্রি করেছি ২০ থেকে ২২ টাকা কেজি দরে। আমরা বেশি দামে খড় কিনছি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার খড় ব্যবসায়ী দিলবর হোসেন বলেন, ‘ধান কাটার মৌসুমে যেসব ব্যবসায়ীরা খড় কিনে স্টক করেছিলেন, তারাই আকাশচুম্বী মুনাফা করছেন। ধানের মৌসুমে প্রতি কেজি খড় ১০ থেকে ১২ টাকায় কিনেছিলেন তারা। আমরা খড়ের পাইকারদের কাছ থেকে প্রতি কেজি খড় ৪৫ থেকে ৪৭ টাকা দরে কিনে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করছি।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর এলাকার খড়ের পাইকার সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘তিনি এ বছর ১০ লাখ টাকার খড় কিনে স্টক করেছিলাম। একমাস আগে প্রায় ৭০ শতাংশ খড় বিক্রি করেছি। বাকী ৩০ শতাংশ খড় বিক্রি করেছি বেশি দামে।’

বন্যার কারণে কৃষকের সঞ্চিত খড় ও ঘাসের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খড়ের চাহিদা ও দাম বেড়েছে বলে তিনি জানান।

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতীয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একটি দুধেল গাভীকে প্রায় তিন কেজি খড় খাওয়াতে হয়। গরুকে খড় খাওয়ালে বেশি দুধ দেয় এবং গরুর স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বাধ্য হয়েই অধিক দামে খড় কিনে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। আমি আট মন ধান বিক্রি করে চার মন খড় কিনে তিনটি গরুকে খাওয়াচ্ছি।’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মোগলবাসা গ্রামের কৃষক দবিয়ার রহমান বলেন, ‘ধানের চেয়ে খড়ের দাম বেশি হবে এটা কোনোদিনই ভাবতে পারিনি। এখন নিজে না খেয়ে খড় কিনে গরুকে খাওয়াতে হচ্ছে। বাড়ির আশেপাশে ঘাসের জমি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়েই চড়া দামে খড় কিনতে হচ্ছে। গরু পালন করতে খরচ করতে হচ্ছে দ্বিগুণ।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার গোবর্ধান এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, ‘ঋণ করে খড় কিনতে হয়েছে। দুধেল গাভীকে খড় না দিলে ঠিক মতো দুধ পাওয়া যায় না। আমন ধান না ওঠা পর্যন্ত এভাবেই দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Police struggle as key top posts lie vacant

Police are grappling with operational challenges as more than 400 key posts have remained vacant over the past 10 months, impairing the force’s ability to combat crime. 

9h ago