শীর্ষ খবর

বালু জমে অনাবাদি হয়েছে বিপুল পরিমাণ আবাদি জমি

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বন্যার পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বালু এসে জমাট বেঁধেছে আবাদি জমিতে। বালু জমায় আবাদি জমিগুলো পরিণত হয়েছে অনাবাদি জমিতে।
বালুতে ঢেকে যাওয়া একটি আবাদি জমি পরিণত হয়েছে অনাবাদিতে। ছবি: স্টার

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোতে বন্যার পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বালু এসে জমাট বেঁধেছে আবাদি জমিতে। বালু জমায় আবাদি জমিগুলো পরিণত হয়েছে অনাবাদি জমিতে।

জমির ওপরে এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত ঢেকে গেছে বালু দিয়ে। নদীপাড়ের অনেক কৃষক এসব বালু সরিয়ে জমি পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করছেন। জমিতে বালু জমায় আশানুরূপ কোনো ফসল ফলাতে পারবেন না নদীপাড়ের এই কৃষকরা।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব গ্রামে ধরলাপাড়ের কৃষক মতিয়ার রহমান (৬৫) বলেন, ‘বানের পানি নেমে গেছে কিন্তু, ক্ষতিগুলো দীর্ঘায়িত হয়েছে। বাড়িতে ফিরেছি, মেরামত করেছি। কিন্তু, বাড়ির চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে আবাদি জমির। আমার সাত বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘা এখন বালুতে ঢাকা।’

ধরলা নদী তীরবর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার শিবেরকুটি এলাকার কৃষক শামসুল ইসলাম (৬০) বলেন, ‘আমার আট বিঘা জমির মধ্যে প্রায় আড়াই বিঘা জমি এখন বালুতে ঢাকা। বানের পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণে বালু এসে আবাদি জমিতে জমাট বেঁধেছে। পানি নেমে গেছে কিন্তু, নামেনি বালু।’

তিনি আরও বলেন, ‘বালুতে ঢেকে যাওয়া আবাদি জমিগুলোতে আর ফসল হবে না। তবে বালু সরাতে পারলে জমিগুলো আবাদযোগ্য হবে। এ কাজ আদৌ সম্ভব না। তারপরও চেষ্টা করছি প্রতিদিন কোদাল দিয়ে বালুগুলো সরাতে।’

‘এবার দফায় দফায় বন্যা আর বন্যা স্থায়ী হওয়ার কারণে আবাদি জমিতে পানি বেশিদিন ছিল। তাই জমাট বাধা বালুরস্তর সরতে পারেনি,’ বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক আক্কাছ আলী (৫৫)।

তিনি আরও বলেন, ‘আবাদি জমিতে আর আবাদ করতে পারব না, এটা যেনো আমাদের কাছে স্বপ্ন ভাঙ্গার গল্পের মতো।’

সরকারিভাবে আবাদি জমিতে জমাট বালু সরিয়ে দিলে নদীপাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক উপকৃত হবেন বলেও জানান তিনি।

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তিস্তাপাড় গোবর্ধান গ্রামের কৃষক নতুন মিয়া (৬৫) হতাশা নিয়ে বলেন, ‘আমার ১০ বিঘা আবাদি জমির মধ্যে চার বিঘাই এখন বালুতে ঢাকা। জমাট বাঁধা বালু না সরানো পর্যন্ত আবাদ করা সম্ভব না। আবার বন্যা হলে বানের পানিতে এসব বালু চলে গেলে তবেই জমি জেগে উঠবে, ফসল ফলবে।’

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার তিস্তাপাড় গুনাইগাছ গ্রামের কৃষক শিবেন চন্দ্র রায় (৬৫) বলেন, ‘বছর তিনেক আগে আমার দুই বিঘা জমিতে বালু জমে। আজো সেগুলো আবাদযোগ্য হয়নি। এ বছরও বানের পানিতে বয়ে আসা বালুতে ঢেকে গেছে আরও তিন বিঘা জমি। আবাদি জমির উপর বন্যার পানি স্থায়ী হলেই এ সমস্যাটা হয়। গ্রামের অনেক কৃষকই এ সমস্যায় পরেছেন।’

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র,দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু রহমান বলেন, ‘বন্যার সময় আবাদি জমির উপর বালু জমে অনাবাদি হওয়া একটি বড় সমস্যা। আমার ইউনিয়নে গত কয়েক বছরে শতাধিক কৃষকের কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদি হয়েছে।’

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিস্তা ও ধরলার বুকে বালু মিশ্রিত পলি জমতে জমতে নদীর বুক প্রায় সমতল হয়ে গেছে। এতে নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা উপচে তীরবর্তী এলাকার জমিতে চলে যায়। পানির সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বালুও যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিয়মিত নদী খনন ছাড়া এ সমস্যা থেকেই যাবে। বিশেষ করে তিস্তা নদী খনন ও তীর সংরক্ষণে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে এবং চলতি অর্থ বছরে তা বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।’

বন্যার পানির সঙ্গে নদীর বালু এসে কী পরিমাণ আবাদি জমিকে অনাবাদি করেছে এর সঠিক কোনো হিসাব নেই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কাছে। তবে এ বছরের বন্যা স্থায়ী হওয়ায় নদীর তীরবর্তী বিপুল পরিমাণে আবাদি জমি বালুতে ঢেকে গেছে বলে জানায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

Comments

The Daily Star  | English

National polls: EC orders withdrawal of two police commissioners

The Election Commission (EC) has ordered to withdraw commissioners of two metropolitan units of police, one deputy commissioner, and five superintendents of police.

1h ago