তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

প্রতিবাদ অহিংস, পুলিশ কেন সহিংস?

সব মহল থেকে একটি অভিযোগ আসে, এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না। অভিযোগটি অসত্য নয়। সমাজে এত অন্যায়-অনাচার, অথচ তেমন কোনো প্রতিবাদ নেই।
11.jpg
পুলিশের লাঠিপেটায় আহত একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত

সব মহল থেকে একটি অভিযোগ আসে, এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ হয় না। অভিযোগটি অসত্য নয়। সমাজে এত অন্যায়-অনাচার, অথচ তেমন কোনো প্রতিবাদ নেই।

ধর্ষণের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে বীভৎসতা। পাহাড় থেকে সমতল, শিশু থেকে বৃদ্ধ, ধর্ষকরা কাউকে ছাড়ছে না। প্রতিবাদের যে উত্তাল ঢেউ ওঠার কথা, তা দৃশ্যমান নয়। একেবারে যে প্রতিবাদ হচ্ছে না, তা নয়। প্রতিবাদ হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুকের প্রোফাইল কালো করে মানুষ প্রতিবাদ করছে। বিক্ষুব্ধ মানুষ ধর্ষকের ফাঁসি চেয়ে প্রতিবাদ করছে, কেউ চাইছে ক্রসফায়ার। তা নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাইরে মাঠে থেকে প্রতিবাদ করছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। রাজধানীসহ দেশের বেশ কিছু স্থানে সক্রিয় সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি কোথাও নেই। নেই তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলও। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে গত কয়েকদিনে দু-একবার সমাবেশ করতে দেখা গেছে। কিন্তু সিলেটসহ আলোচিত ধর্ষণের ঘটনাগুলো তাদের নেতা-কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত হওয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তারা প্রতিবাদে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না।

ধর্ষণের ব্যাপকতা অনুযায়ী প্রতিবাদ তীব্র নয়। সবগুলো প্রতিবাদই অহিংস। অদ্ভুত বিষয়, অহিংস প্রতিবাদে সহিংস পুলিশ। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দেওয়ালে গ্রাফিতি এঁকে ধর্ষণবিরোধী প্রতিবাদের উদ্যোগ নেওয়া হলো। পুলিশ ছাত্র ইউনিয়নকে গ্রাফিতি আঁকতে বাধা দিলো। তাদের দুই কর্মীকে থানায় ধরে নিয়ে আটকে রাখল, নির্যাতন করল। পুলিশ নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও, শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন নিয়েই দুই কর্মী থানা থেকে বের হলেন।

ধর্ষণের প্রতিবাদে গ্রাফিতি কেন আঁকা যাবে না? ধর্ষণের প্রতিবাদ কেন করা যাবে না? প্রতিবাদ করলে কেন পুলিশ ধরে নিয়ে পেটাবে?

প্রশ্ন আছে, উত্তর নেই।

22.jpg
অহিংস প্রতিবাদ মিছিলে লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণের প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিলের উদ্যোগ নিলো। এ ধরণের মিছিল বাংলাদেশে নতুন নয়। ঐতিহ্য অনুযায়ী এ ধরণের মিছিল কিছুদূর যাওয়ার পর পুলিশ আটকায়। মিছিলকারীদের প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবাদ লিপি পৌঁছে দেয়। আজকের মিছিলও সহিংস ছিল না। পুলিশের ওপর আক্রমণও করা হয়নি। তবুও পুলিশ মিছিলকারীদের পিটিয়েছে। বেশ নির্দয়ভাবেই পিটিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকেই আহত হয়েছেন।

পুলিশ তো চলছে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী।

তাহলে নির্দেশনা সরকারই দিয়েছে যে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা যাবে না? ধর্ষকদের বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না? ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলায় ভূমিকা রাখা যাবে না? ধর্ষকরা ধর্ষণ করে যাবে, প্রতিবাদ করলে পুলিশ দিয়ে পেটানো হবে?

ধর্ষকদের পরিচিতি, তারা স্থানীয় প্রভাবশালী। ক্ষমতার রাজনীতির প্রভাবে তারা প্রভাবশালী। তারা রাজনীতির পরিচিত মুখ। তারা পুলিশের অচেনা নয়। এমনও নয় যে, এই ধর্ষণই তাদের প্রথম ও একমাত্র অপকর্ম। তাদের অধিকাংশেরই অপকর্মের রেকর্ড বেশ ভারি। পুলিশ ইচ্ছে করলে এবং ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদরা চাইলে তাদের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ ছিল। তা যদি করা হতো, হয়ত অনেক ধর্ষণের ঘটনা ঘটতো না।

যখন ব্যবস্থা নেওয়া প্রত্যাশিত বা প্রয়োজন ছিল, তখন নেওয়া হলো না। এ কারণেই প্রতিবাদে, শ্লোগানে, পোস্টারে লেখা হচ্ছে ‘পুলিশ ধর্ষকদের পাহারাদার’। এই শ্লোগান, এই পোস্টার পুলিশের পছন্দ হওয়ার কথা নয়।

তাই বলে পুলিশ ধর্ষণের প্রতিবাদকারীদের পেটাবে? পুলিশ তো একটি প্রশিক্ষিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অহিংস প্রতিবাদ-আন্দোলনে, সেই বাহিনী কেন সহিংস আচরণ করবে?

কোনো জবাবদিহিতা থাকবে না?

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

13h ago