সরকারি-বেসরকারি সহায়তা মেলেনি

গ্রামবাসীর উদ্যোগে নির্মিত হলো কাঠের ভাসমান সেতু

সরকারি-বেসরকারি কারো সহায়তা না পেয়ে অবশেষে প্রায় দুমাসের মাথায় গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে নির্মাণ করলেন কাঠের ভাসমান সেতু। নিজেদের অর্থায়নে কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা খালে ১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ভাসমান সেতুটি নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সবজি চাষিদের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা খালে গ্রামবাসীর নির্মিত ১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের ভাসমান সেতু। ছবি: সোহরাব হোসেন

সরকারি-বেসরকারি কারো সহায়তা না পেয়ে অবশেষে প্রায় দুমাসের মাথায় গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে নির্মাণ করলেন কাঠের ভাসমান সেতু। নিজেদের অর্থায়নে কলাপাড়া উপজেলার পাখিমারা খালে ১১৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ভাসমান সেতুটি নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সবজি চাষিদের উদ্যোগে নির্মিত হয়েছে। 

নিজেরা চাঁদা তুলে প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর কাঠের পাটাতন দিয়ে পাখিমারা খালের ওপর ভাসমান এই সেতুটি নির্মাণ করেন তারা।

সেতুটি নির্মাণে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। এখনো কিছু কাজ বাকি আছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ৯ অক্টোবর সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে জানিয়ে ব্রিজ নির্মাণের অন্যতম উদ্যোক্তা জাকির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘৭২টি প্লাস্টিকের ড্রামের ওপর পাটাতন করতে ২৫০ ঘনফুট কাঠ লেগেছে। আর প্লাস্টিকের তারকাটা ও রশি লেগেছে তিন মণ।’

সবজির গ্রাম খ্যাত কুমিরমারা, মজিদপুর, এলেমপুরের প্রায় সহস্রাধিক সবজি চাষিরা বছরব্যাপী উৎপাদিত মৌসুমি শাক-সবজি বিক্রি করতে কলাপাড়া উপজেলা শহরে যোগাযোগের একমাত্র পথ ছিল এই সেতু। পাখিমারা খালের ওপর কলাপাড়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় প্রায় ১১৬ মিটার দীর্ঘ ওই আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করে। ওই এলাকার কয়েকটি পুরনো আয়রন ব্রিজের মালামাল দিয়ে এ ব্রিজটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই মানুষের মধ্যে ব্রিজটি ধ্বসের ভয় ও আতঙ্ক ছিল। কারণ, সেতুটি নির্মাণের সময় খালের মধ্যে ঠিকভাবে লোহার খুঁটিগুলো পোঁতা হয়নি। এটি দিয়ে মানুষ চলাচল করলেই তা নড়তো। অবশেষে গত ৬ আগস্ট রাতে হঠাৎ এর প্রায় ৯০ ভাগ ভেঙে খালে তলিয়ে যায়।

ফলে, এসব এলাকার সবজি চাষিরা তাদের উৎপাদিত শাক-সবজি বাজারে বিক্রি করা নিয়ে চরম বিপদে পড়েন।

এ নিয়ে গত ১০ আগস্ট দ্য ডেইলি স্টারে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন: পটুয়াখালীতে সেতু ভেঙে খালে, স্থানীয়দের দুর্ভোগ

ব্রিজটি মেরামতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ, কৃষি অফিস, উপজেলা পরিষদে বারবার অনুরোধ জানান চাষিরা। কিন্তু, কেউ সেতুটি মেরামতে এগিয়ে আসেনি। উপায় না দেখে সবজি চাষি ও গ্রামবাসীরা নিজেদের উদ্যোগে বিকল্প কাঠের পাটাতনের সেতু তৈরিতে নেমে পড়েন।

জাকির হোসেন বলেন, ‘কোনো উপায় না পেয়ে নিজেদের সংগঠন ‘আদর্শ কৃষক সমবায় সমিতি’র সদস্যরা জোট বেধে নিজেদের অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেই। কুমিরমারা, মজিদপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ সহায়তা করেন। এ সেতুতে একই সঙ্গে ১০ জন মানুষ পারাপার হলেও কোনো ঝুঁকি নেই।’

কলাপাড়া এলজিইডির প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাখিমারা খালে আগে ছিলো কাঠের পুল। উপজেলা পরিষদের সিদ্ধান্তে ছয় বছর আগে একটি পুরনো আয়রন ব্রিজের মালামাল দিয়ে ওই খালে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। যা কিছুদিন আগে ভেঙে পড়ে। তবে, কলাপাড়া উপজেলায় ভেঙে পড়া ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকা অনুমোদন হলেই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হবে।’

Comments