পাটকল শ্রমিকদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ৫৭ নাগরিকের বিবৃতি

jute-web.jpg
খুলনায় পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলন। স্টার ফাইল ছবি

পাটকল শ্রমিকদের আন্দোলনে হামলা ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আজ বুধবার সরকারের উদ্দেশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫৭ জন নাগরিক।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির মধ্যেই গত ২ জুলাই বাংলাদেশ সরকার মোট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় পৃথিবীর অনেক দেশ যেখানে বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা দিয়ে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে, বাংলাদেশ সরকার সেখানে উল্টো এক অমানবিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রায় ২৫ হাজার স্থায়ী এবং ২৫ হাজার অস্থায়ী শ্রমিককে কর্মচ্যুত করে মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

অথচ চার মাস অতিবাহিত হলেও এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের পাওনা মজুরি এখনো পরিশোধ করা হয়নি। মিলগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। প্রশাসনের এই সীমাহীন গাফিলতি এবং অবহেলার কারণে প্রায় ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক ও তাদের পরিবার দীর্ঘ সময় ধরে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ ও মিলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে তারা এই করোনার মধ্যেও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি এ বছর ২৫ মার্চ রাতে দিনাজপুরে পুলিশের গুলিতে মজুরির দাবিতে আন্দোলনরত একজন পাটকল শ্রমিক নিহত হন।

৪ অক্টোবর বিকাল ৪টায় পাটকল রক্ষায় এবং বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকদের পূর্ব নির্ধারিত একটি কফিন মিছিল বের হওয়ার কথা ছিল। সকালে হঠাৎ করেই আন্দোলনের তিন জন সংগঠককে পুলিশের ভ্যানে করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আবার শ্রমিক সমাবেশ এবং মিছিল যেন হতে না পারে, সেজন্য বিকালে ছাত্রলীগ পুলিশের সঙ্গে একত্রিত হয়ে মিছিল এবং শ্রমিক দমন-নিপীড়নের নেমে পড়ে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা পাঁচ জনকে বেদম মেরে পুলিশের কাছে তুলে দেয়। স্টার জুটমিলের শ্রমিক জামির আলম, প্লাটিনাম জুটমিলের শ্রমিক ফারুক, শ্রমিক ছাত্র জনতা ঐক্যের রুহুল আমিন, সুজয় শুভ, নিয়াজ মোর্শেদ দোলন, সুন্দরবন কলেজের ছাত্র তানিম আমিন এবং খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র তাইমকে প্রায় আট ঘণ্টা আটক রেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা পুলিশ এবং সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের এই বর্বরোচিত যৌথ হামলা ও ধরপাকড়ের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

আমরা বলতে চাই, শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনাদি পরিশোধে গড়িমসি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। শ্রমিকরা শতভাগ ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করছেন। অথচ বেতন ভাতা পরিশোধ করার বদলে ধরপাকড়, গ্রেপ্তার করে নাগরিকের মিছিল করার ন্যূনতম অধিকারটুকুও কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। 

আমরা দাবি জানাচ্ছি, অবিলম্বে এই ধরণের হামলা, গ্রেপ্তার, হয়রানি বন্ধ করা হোক। সব শ্রমিকের বকেয়া বেতন অবিলম্বে পরিশোধ করুন এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যবস্থাপনায় বন্ধ হওয়া ২৫টি মিল অতিসত্বর চালু করুন।

বিবৃতিতে অনলাইনে ই-সাক্ষর করেছেন- হামিদা হোসেইন, শিক্ষাবিদ ও মানবাধিকারকর্মী; মেঘনা গুহঠাকুরতা, গবেষক, অধিকার কর্মী; খুশি কবির, মানবাধিকার কর্মী; ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী; শাহীন আনাম, অধিকারকর্মী; সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আইনজীবী; সারা হোসেইন, আইনজীবী; ফরিদা আখতার, নারী আন্দোলন কর্মী; মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সামিনা লুৎফা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মোশাহিদা সুলতানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাহা মির্জা, লেখক, গবেষক; আজফার হুসেইন, শিক্ষক, গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেইট ইউনিভার্সিটি; ফাহমিদুল হক, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; মাইদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, সমাজতত্ত্ব বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; আরিফুজ্জামান রাজীব, ইটিই বিভাগ, বশেমুরবিপ্রবি, গোপালগঞ্জ; রুশাদ ফরিদী, সহকারী অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; সায়েমা খাতুন, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; কাজী মারুফুল ইসলাম, অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; আ-আল মামুন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; গীতি আরা নাসরীন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কামরুল হাসান, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; বখতিয়ার আহমেদ অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, রাবি; রেহনুমা আহমেদ, লেখক, নৃবিজ্ঞানী; অধ্যাপক স্বপন আদনান, SOAS, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন; ফইজুল হাকিম, চিকিৎসক, রাজনৈতিক সংগঠক; ড. লুৎফুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়; মির্জা তাসলিমা সুলতানা, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; মাহমুদুল সুমন, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশবিদ্যালয়; সাঈদ ফেরদৌস, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; রোবায়েত ফেরদৌস, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; দিনা সিদ্দিকী, শিক্ষক, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়; ড. আইনুন্নাহার, শিক্ষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়; জোবাইদা নাসরিন, শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; হানা শামস আহমেদ, গবেষক, অধিকারকর্মী; পারভীন হাসান, শিক্ষক, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি; নাফিসা তানজিম, শিক্ষক, লেসলি বিশ্ববিদ্যালয়; সৌভিক রেজা, শিক্ষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়; সাদাফ নূর, শিক্ষক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; রাইয়ান হাসান, পরিচালক, এনজিও ফোরাম অন এডিবি; অরূপ রাহী, লেখক, সঙ্গীতশিল্পী; লিসা গাজী, লেখক, সংস্কৃতি কর্মী; বিনা ডি-কস্টা, শিক্ষক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়; রেজাউর রহমান লেনিন, গবেষক এবং অধিকার কর্মী; সুস্মিতা পৃথা, সাংবাদিক ও গবেষক; মুক্তাশ্রী চাকমা, অধিকার কর্মী; ঋতু সাত্তার, নাট্যকর্মী; সুব্রত চৌধুরী, আইনজীবী; ড. ফস্টিনা পেরেইরা, আইনজীবী; বীথি ঘোষ, সংস্কৃতি কর্মী; তানভীর মুরাদ তপু, আলোকচিত্রী; রুহি নাজ, অধিকার কর্মী; মিজানুর রহমান, জন-অধিকারকর্মী; মেহজাবিন রহমান, অধিকার কর্মী; আলী মো. আবু নাঈম, লেখক, সংগঠক; অনুপম সৈকত শান্ত, গবেষক ও অধিকার কর্মী এবং কল্লোল মোস্তফা, প্রকৌশলী।

Comments

The Daily Star  | English
bangladesh bank buys dollar

BB buys $313m more from 22 banks

Bangladesh Bank purchased another $313 million from 22 commercial banks in an auction yesterday, reacting to the sharp drop in the US dollar rate.

5h ago