‘স্বামীর কবরটাও রক্ষা করতে পারলাম না’

তিস্তার হিংস্র থাবা থেকে ‘স্বামীর কবরটাও রক্ষা করতে পারলাম না’ এভাবেই নিজের মনের কষ্টের দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন কোহিনুর বেওয়া (৫০)। স্বামীর কবরকে স্মৃতি হিসেবে আগলে রেখে বেঁচেছিলেন তিনি। তবে, সেই স্মৃতি এখন তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
স্বামীর কবরের পাশে বসে আছেন কোহিনুর বেওয়া। ছবি: এস দিলীপ রায়

তিস্তার হিংস্র থাবা থেকে ‘স্বামীর কবরটাও রক্ষা করতে পারলাম না’ এভাবেই নিজের মনের কষ্টের দ্য ডেইলি স্টারকে বললেন কোহিনুর বেওয়া (৫০)। স্বামীর কবরকে স্মৃতি হিসেবে আগলে রেখে বেঁচেছিলেন তিনি। তবে, সেই স্মৃতি এখন তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার চর গোকুন্ডা গ্রামের নদীভাঙনের শিকার কোহিনুর বেওয়া বলেন, ‘২০১১ সালে ৫০ বছর বয়সে তার স্বামী আবু সাহের উদ্দিন মারা গেলে বাড়ির পাশে কবর দিয়েছিলেন। সেই সময় তিস্তা নদী ছিলো প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। দুই মাস আগেও তিস্তা ছিলো ২০০ মিটার দূরে। কবরটি তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে হচ্ছে তাই কবরের ইটগুলো খুলে স্থানীয় জামে মসজিদে দান করেছি।’

তার স্বামী রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা ছিলেন বলে জানান তিনি।

কোহিনুর বেওয়া বলেন, ‘গত একমাসে তিস্তা নদীর ভাঙনে ১২ বিঘা আবাদি জমি, তিনটি বাঁশের ঝাড় ও একটি পেয়ারা বাগানসহ স্বামীর কবর তিস্তা নদীর গর্ভে চলে গেছে। তিস্তা এখন বসতভিটা থেকে মাত্র ১০ মিটার ব্যবধানে আছে। যে কোনো সময় বসতভিটাও তিস্তার গর্ভে চলে যেতে পারে।’

কোহিনুর বেওয়ার ছেলে কবির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের আবাদি জমি, ফলের বাগান, বাঁশের ঝাড় তিস্তার গর্ভে গেলেও তাতে কোনো দুঃখ ছিল না। কিন্তু, বাবার কবরটা চলে যাওয়ায় বেশি ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। তাদের মা ভেঙে পড়েছেন। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আর সারাক্ষণ শুধু বাবার কবরের কথা বলে কান্নাকাটি করছেন।

ওই গ্রামের কৃষক নূর উদ্দিন (৮০) জানান, দুই মাস আগে চর গোকুন্ডা গ্রামে তিস্তার ভাঙন শুরু হয়। ভাঙন ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করে। গেল দুই মাসে এই গ্রামের ১২০টি পরিবার ভিটেমাটি, আবাদি জমি তিস্তার গ্রাসে হারিয়ে এখন নিঃস্ব ও ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। তারা আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমি, সরকারী রাস্তা ও স্বজনদের বাড়িতে। তার ছয় বিঘা আবাদি জমি ইতোমধ্যে তিস্তার গর্ভে চলে গেছে।

একই গ্রামের কৃষক জাভেদ আলী (৭১) জানান, গ্রামে এখনো তিস্তা নদীর ভাঙন অব্যাহত আছে। ইউনিয়নের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চর গোকুন্ডা গ্রাম। ভাঙনের কারণে অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাচ্ছে।

‘ভাঙন এখন আমার ভিটের কাছে। আমাকেও পরিবার পরিজন নিয়ে গ্রাম ছাড়তে হচ্ছে,’ বলেন তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘চর গোকুন্ডা গ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩ হাজার জিও-ব্যাগে বালুভরে ডাম্পিং চলছে। গ্রামটির কিছু অংশে ভাঙন ঠেকানো গেছে। কিন্তু আরও কিছু স্থানে ভাঙন অব্যাহত আছে।’

Comments

The Daily Star  | English

Mia, wife concealed assets in tax returns

When Asaduzzaman Mia retired as the longest-serving Dhaka Metropolitan Police commissioner in 2019, by his own admission, he went home with about Tk 1.75 crore in service benefits. But that does not give a true picture of his wealth accumulation. Fact is, the career cop and his family became muc

3h ago