বেগমগঞ্জে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া দেলোয়ার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে দেলোয়ার। ছয়-সাত বছর আগেও সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন তিনি। তার আগে হাটে তরকারি বিক্রি করতেন। রাজনীতিতে জড়িয়ে এলাকায় অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তিনি। গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।
দেলোয়ার

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে দেলোয়ার। ছয়-সাত বছর আগেও সিএনজি অটোরিকশা চালাতেন তিনি। তার আগে হাটে তরকারি বিক্রি করতেন। রাজনীতিতে জড়িয়ে এলাকায় অন্যতম প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তিনি। গড়ে তোলেন নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী।

দেলোয়ার যখন অটোরিকশা চালাতেন তখন তার পরিচয় হয় বেগমগঞ্জের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ৩৬ মামলার আসামি সুমন ও খালাসী সুমন বাহিনীর প্রধান সুমনের সঙ্গে। এরপর থেকে খালাসী সুমনের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ছেড়ে দেন অটোরিকশা চালানো।

একলাশপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও আট নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেলোয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতাদের কাছে ভিড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি আলমগীর কবির আলো ও চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরের হাত ধরে যুবলীগে যুক্ত হন। সরকারি দলে যোগ দিয়েই দেলোয়ার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ‘দেলোয়ার বাহিনী’ গড়ে তোলেন। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৪০-৫০ জন। তাদের কাজই হচ্ছে এলাকায় মানুষের জমি দখল, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও লুটপাট করা।

ওই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে দেলোয়ারের সন্ত্রাসের কথা শোনা গেলেও পরিচয় প্রকাশ করে তার সম্পর্কে কথা বলতে কেউ রাজি হননি। জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের সত্তরোর্ধ্ব কয়েকজন জানান, দেলোয়ার এলাকার উঠতি বয়সী ছেলেদেরকে তার বাহিনীতে যুক্ত করে এলাকায় মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। তার ভয়ে গোটা এলাকা তটস্থ থাকত। তার বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা না নেওয়ায় সে বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

স্থানীয় একলাশপুর, অনন্তপুর ও জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যুবলীগে যোগ দিয়েই দেলোয়ার নোয়াখালী ৩ আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ ও বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে পোস্টার ছাপিয়ে ও ফেসবুকে আত্মপ্রচার চালান। আনুষ্ঠানিকভাবে যুবলীগের পদে না থাকলেও এলাকায় নেতা হিসাবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। ২০১৫ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কৃষকলীগ সভাপতি চেয়ারম্যান প্রার্থী আলমগীর কবির আলোর পক্ষ নিয়ে কেন্দ্র দখল করেন। অস্ত্র নিয়ে ভোট কেন্দ্রে ভীতিকর অবস্থা তৈরি করেছিলেন দেলোয়ার।

দলের পরিচয়ে দেলোয়ারের অপকর্মের কথা স্বীকার করে একলাশপুর ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক নাইমুদ্দীন রাসেল বলেন, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে একলাশপুর গ্রামে জোড়া খুন ও শরীফপুরে হাসান খুনের মামলার আসামি ছিল দেলোয়ার। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনের নেতা হিসেবে পরিচিত হওয়ায় অপকর্ম করে বেড়াতে তার কোনো সমস্যা হয়নি।

তার দাবি, এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোপনে খরব নিলে আরও নারী নির্যাতনের ঘটনা বেরিয়ে আসবে। নির্যাতনের শিকার নারীরা ভয়ে মুখ খুলছেন না।

ব্যাপারে একলাশপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগ সভাপতি আলমগীর কবির আলোর দাবি, দেলোয়ারকে তিনি দলে প্রবেশ করতে সহযোগিতা করেননি। দেলোয়ারের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ইউপি নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসব বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডা. এবিএম জাফর উল্যাহ বলেন দেলোয়ার গ্রামের উদীয়মান সন্ত্রাসী। সরকারি দলের সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। সে বিভিন্ন সময় স্থানীয় এমপি ও রাজনৈতিক সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকে যুবলীগ নেতা বলে পরিচয় দিত। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করছি।

দেলোয়ারের ব্যাপারে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাজাহান শেখ জানান, তার বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো মামলা তিনটি। গত রোববারের পর নতুন তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। আগের মামলায় গ্রেপ্তার না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেলোয়ারকে পুলিশ খুঁজেছিল। কিন্তু এলাকায় না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

Comments