খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত

ডোবার মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে খেয়া পারাপারে ব্যবহৃত নৌকা। অবহেলায় অযত্নে নৌকার কাঠে পচন ধরেছে। নৌকার পাশেই রাখা আছে ধুলায় ধূসরিত ১০-১২টি গাড়ি। কোনোটার আসন, দরজা, চাকা, গ্লাস নেই। কোনোটার কেবল চাকা আছে আর কিছু নেই। সেখানে জন্মেছে আগাছা। ফলে ভাঙাচোরা এসব গাড়ি দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে থেকে পরিণত হয়েছে ধ্বংস্তুপে।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার বিভিন্ন মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলাতম খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: সনদ সাহা

ডোবার মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে খেয়া পারাপারে ব্যবহৃত নৌকা। অবহেলায় অযত্নে নৌকার কাঠে পচন ধরেছে। নৌকার পাশেই রাখা আছে ধুলায় ধূসরিত ১০-১২টি গাড়ি। কোনোটার আসন, দরজা, চাকা, গ্লাস নেই। কোনোটার কেবল চাকা আছে আর কিছু নেই। সেখানে জন্মেছে আগাছা। ফলে ভাঙাচোরা এসব গাড়ি দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে থেকে পরিণত হয়েছে ধ্বংস্তুপে।

শহরের টানবাজার এলাকায় সদর মডেল থানায় গিয়ে দেখা গেছে এ দৃশ্য। একই চিত্র নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার। 

জব্দকৃত এসব মালামাল নিয়ে ভোগান্তিতে আছে থানা পুলিশও। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এগুলোর কোন ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এগুলো বিভিন্ন মামলার জব্দকৃত আলামত। প্রতিটিতে ওইসব মামলার নম্বর দেওয়া আছে। এসব আলামতই মামলার অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এগুলো এভাবেই থাকবে।’

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার বিভিন্ন মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলাতম খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা হয়েছে। ছবি: সনদ সাহা

তিনি বলেন, ‘গাড়িগুলো ৪ থেকে ৫ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পড়ে আছে। তবে নৌকাটি কয়েক মাস আগেই শীতলক্ষ্যা থেকে আনা হয়েছে। নৌকায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে কিশোরীকে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেওয়ার মামলায় মাঝি খলিলুর রহমান খলিলকে গ্রেপ্তার ও আলামত হিসেবে নৌকাটি জব্দ করা হয়।’

নৌকার মাঝি খলিলুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ওই কিশোরী জীবিত ফিরে এসেছে। পুলিশ নির্যাতন করে আমাদের আদালতে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করেছে। আমি এখন জামিনে আছি। কিন্তু আমার নৌকাটা ফেরত দিচ্ছে না পুলিশ।’

সংসারে অভাবের কথা জানিয়ে খলিলুর বলেন, ‘নৌকাটি পেলে খুব উপকার হতো, দিনমজুরের কাজে আর চলছে না।

তবে ভাঙাচোরা অন্য যানবাহনগুলোর মালিকদের খোঁজে পাওয়া যায়নি।

এনিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এগুলো বিচারাধীন বিভিন্ন মামলার আলামত। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় থানা চত্বরে রাখা হয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এসব আলামত ধ্বংস বা কোন গতি করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত আদেশ দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘যানবাহনের কোন অপরাধ নেই। অপরাধ হয় চালক, মালিক কিংবা ব্যক্তির। এগুলোর কোনটিতে মাদক পাওয়া গেছে কিংবা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে অথবা বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা আছে যার জন্য এগুলোর কেউ মালিকানা দাবি করে না। এজন্য দীর্ঘদিন ধরেই পড়ে আছে।’

সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, কার্যালয়ের পাশে স্তুপাকার ও ধুলায় ডুবে থাকা যানবাহনগুলো চেনার অবস্থায় নেই। অযত্ন-অবহেলায় আলামতের এমন চেহারা হয়েছে যে তা শনাক্ত করতে পুলিশকেও ভোগান্তিতে পরতে হয়। রোদে পুড়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে এসব আলামত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় যানগুলোর ভেতরের অধিকাংশ যন্ত্রপাতি খোয়া গেছে। মালখানা কর্তৃপক্ষের দেওয়া নম্বরও মুছে গেছে অনেক আলামত থেকে।

ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ছোট ছোট আলামত যেগুলো আছে সেগুলো থানার মালখানায় জমা রাখা হয়। তবে যানবাহনসহ বড় আলামত তো মালখানায় রাখা সম্ভব না। এজন্য খোলা জায়গায় রাখা হয়। এসব আলামত নিয়ে নিজেরাও ভোগান্তিতে আছি। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় এগুলোর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন,‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের কিংবা মাদক মামলাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত এগুলো। এসব মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে। এ বিষয়ে আমরা আদালতে আবেদন করেছি। আদালত যে আদেশ দেবেন সেইভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ফারুখ বলেন,‘বিশেষ ক্ষমতা আইনে কিংবা মাদক মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ মামলার ছোট আকারের আলামত থানার মালখানায় রাখা হয়। তবে গাড়ি, ড্রামসহ অন্যান্য আলামত খোলা জায়গাতেই থাকে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’

নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এসব আলামতগুলোর বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা কিছুই করতে পারি না। আদালত যে আদেশ দেবেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে আলামতগুলো মামলা নিষ্পত্তি হলেও দীর্ঘদিন রেখে দিতে হয়। এ বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতনদের লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka’s Toxic Air: High levels of cancer-causing elements found

The concentration of cancer-causing arsenic, lead and cadmium in Dhaka air is almost double the permissible limit set by the World Health Organization, a new study has found.

3h ago