আজ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস

পাবনা মানসিক হাসপাতালে দালালদের খপ্পরে রোগীদের চিকিৎসাসেবা

করোনা মহামারি যখন সারা পৃথিবীর স্বাস্থ্য সেবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তখন সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত মানসিক রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে। দেশের মানুষ এখন নিয়ম মাফিক স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবার জন্যই হাহাকার করছে। তাই বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্য সেবার দিকে নজর নেই কারও। আজ শনিবার সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিশ্বে এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে।
ছবি: সংগৃহীত

করোনা মহামারি যখন সারা পৃথিবীর স্বাস্থ্য সেবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তখন সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত মানসিক রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছে। দেশের মানুষ এখন নিয়ম মাফিক স্বাভাবিক স্বাস্থ্য সেবার জন্যই হাহাকার করছে। তাই বিশেষায়িত মানসিক স্বাস্থ্য সেবার দিকে নজর নেই কারও। আজ শনিবার সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। পরিবর্তিত পরিস্থিতির বিশ্বে এ বছর দিবসটি পালিত হচ্ছে মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে।

কঠিন এ পরিস্থিতিতে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল পাবনা মানসিক হাসপাতালে মানসিক রোগীরা নিয়মিত চিকিৎসাসেবা পেয়ে থাকলেও সেখানেও কমেছে সেবার সুযোগ। আর এ সুযোগে অসহায় মানসিক রোগী ও তাদের পরিবারের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে দেশের একমাত্র মানসিক চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে পাবনা মানসিক হাসপাতালে এখন সপ্তাহে মাত্র একদিন রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানসিক রোগীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসনকে। রোগী ভর্তির সুযোগ কমলেও হাসপাতালের বহির্বিভাগ প্রতিদিন খোলা থাকছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত মানসিক রোগীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসছে ভুক্তভোগীদের পরিবার। আর এসেই তাদের মধ্যে আনেকেই পড়ছে দালালদের খপ্পরে।

বিপুল সংখ্যক রোগীর ভিড় সামলাতে যখন হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসকরা, তখন একশ্রেণির দালালরা দূর দূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা এসব অসহায় পরিবারের কাছ থেকে আগে রোগী দেখানোর নাম করে কেউ নিচ্ছে টাকা, কেউবা রোগীর পরীক্ষার নাম করে টাকা নিচ্ছে আবার ভর্তিচ্ছুক রোগীর পরিবারের কাছ থেকে ভর্তি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিচ্ছে।

ভর্তির সুযোগ সীমিত হওয়ায় দালালরা অনেক রোগীর পরিবারকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করার নাম করেও মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। যাদের সামর্থ্য আছে, তারা না বুঝেই পা দিচ্ছে দালালদের খপ্পরে। আবার যাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ, তারা চিকিৎসাসেবা নিতে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী ২৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে আউটডোরে চিকিৎসা পাওয়ার আশায় গত ৫ অক্টোবর সকাল থেকে অপেক্ষা করেন মো. আজিজ মাতব্বর। সকাল গড়িয়ে দুপুর পার হলেও আজিজ শেষ পর্যন্ত তার ছেলেকে দেখাতে পারেননি বলে জানান।

আক্ষেপের সুরে আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলছিলেন, ‘বহুদূর থেকে এসে সকাল থেকে অপেক্ষা করেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাইনি। যারা এসে দালালদের পয়সা দিচ্ছে, তারা আগে দেখানোর সিরিয়াল পাচ্ছে। দলালদের টাকা না দিলে সহজে সিরিয়াল পাওয়া যায় না।’

‘জন্মগতভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলের অবস্থা এখন ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে। বাড়িতে শিকল দিয়ে বেঁধে না রাখলে তাকে ধরে রাখা যায় না। ভর্তির জন্য হাসপাতালে অনেক চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত ভর্তি করতে পারলাম না। আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। হাসপাতালে ভর্তি করতে পারিনি শুনে দালালরা আমাকে ঘিরে ধরে। তাদের ক্লিনিকে ভর্তি করতে বলে। কিন্তু, টাকার অভাবে শেষ পর্যন্ত ক্লিনিকে ভর্তি করাতে পারিনি’, বলেন তিনি।

একই অবস্থা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে অসুস্থ ভাইকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়ে আসা যুবক রাসেল সরকারের। রাসেল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সকাল থেকে অপেক্ষা করেও দালাল না ধরায় আমাদের রোগীকে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। অবশেষে অনেক ঝগড়া-বিবাদ করে ভাইকে ডাক্তার দেখালাম। তবে, ভর্তি করতে পারলাম না।’

রাসেল দাবি করেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালের আউটডোরের প্রতিটি কোণায় দালালদের অবস্থান। রোগীর সিরিয়াল পাওয়া, ভর্তির সুযোগ পাওয়া অথবা প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা, সব কাজেই দালালদের সরব উপস্থিতি।

মাগুরা থেকে নিজের ভাইকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এসেছেন গৃহবধূ সানজিদা শাহিন। তিনি অবশ্য এত অভিযোগ করেননি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আর্থিক সমস্যা না থাকায় দালালদের দিয়ে তিনি সব ব্যবস্থা করে নিয়েছেন।

সানজিদা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমার ভাই আগেও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে অনেক সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু, বাড়িতে গাফিলতির কারণে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে।’ হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, এলাকার বখাটে, স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগী ও ক্লিনিকের প্রতিনিধিরা পাবনা মানসিক হাসপাতালে রোগীদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছে। আর এসব কাজে হাসপাতালের কিছু কর্মীরা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক ডা. এটিএমএম মোরশেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পাবনা মানসিক হাসপাতালে দালালদের আধিপত্য দীর্ঘদিনের। অনেক চেষ্টা করেও দালালদের হাসপাতাল থেকে সরানো যায়নি।’ এ বিষয়ে নিজের অসহায়ত্বের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে বারবার অবহিত করেছি।’

‘করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ৭ মাস ধরে পাবনা মানসিক হাসপাতালে সপ্তাহে মাত্র একদিন নতুন রোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। যাদের ভর্তি করানো হচ্ছে, তাদের এক সপ্তাহ আইসোলেশনে রাখার পর ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। যাতে করে অন্য রোগীরা আক্রান্ত না হয়। ভর্তির সুযোগ কিছুটা কমে যাওয়ায় আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে’, বলেন তিনি।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল দেশের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও দিনের পর দিন এ হাসপাতাল অবহেলিতই থেকে গেছে। চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে অনেকেই কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক অবশ্য দাবি করেন, ‘পাবনা মানসিক হাসপাতালে ২৫টি চিকিৎসকের পোস্ট রয়েছে। কিন্তু মাত্র ১২ জন চিকিৎসক দিয়ে পাঁচ শ শয্যার এ বিশেষায়িত হাসপাতালটি চলছে দীর্ঘদিন। বারবার চিকিৎসক চাওয়া হলেও নতুন কেউ আসছে না। এ স্বল্পসংখ্যক চিকিৎসক দিয়েই চার শতাধিক ভর্তি রোগী এবং আউটডোরে দৈনিক প্রায় দুই থেকে তিন শ রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।’ চিকিৎসক স্বল্পতা থাকলেও সেবার ঘাটতি হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Shorna seals Tigresses’ historic first T20I win in South Africa

Bangladesh scripted their first-ever T20I win against South Africa women’s team on their home soil with a 13-run win at Benoni today. Leg-spinner Shorna Akter was the protagonist of the match for the Tigers, bagging five wickets in a tight match to get Bangladesh the win.

1h ago