৩ আসামি নিয়ে পিবিআই’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলার তিন আসামি বাদল, কালাম ও সাজুকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কর্মকর্তারা।
আজ শনিবার সকাল ১০টায় বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে যায় পিবিআই’র একটি দল। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ পাটোয়ারী একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে ভুক্তভোগী নারীর বাড়িতে যান। এসময় পিবিআই’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঙ্গে ছিলেন।
পিবিআই কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে ২০ মিনিটের মতো অবস্থানকালে ওই নারীর বসতঘরে ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখেন। তবে এসময় তারা কারও সঙ্গে কথা বলেননি।
এর আগে, শুক্রবার সকালে পিবিআই নোয়াখালীর ইন্সপেক্টর সুভাষ চন্দ্র পালের নেতৃত্বে একটি দল ওই নারীকে নিয়ে তার বাড়ি পরিদর্শনে যায়। এসময় মামলার তদন্তকারী দুই কর্মকর্তা ছাড়াও পিবিআই চট্টগ্রামের তদন্ত বিশেষজ্ঞ ফারুক আহমেদ এবং মামলা দুটির সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোস্তাক আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
ভুক্তভোগী নারীকে মাইজদী শহর থেকে গত ৪ অক্টোবর রাতে উদ্ধার করার পর থেকে তার বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ওই নারীর বৃদ্ধ বাবা, বোন ও তার সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে রয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আলমগীর হোসেন জানান, পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে বৃহস্পতিবার রাতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে ভুক্তভোগীর দায়ের করা দুটি মামলা পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করে ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ পাটোয়ারীকে। এ ছাড়া, পর্নোগ্রাফি আইনে দায়ের করা মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা করা হয় ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমানকে।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘তিনটি মামলার মধ্যে দুটি মামলা ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি রয়েছে ধর্ষণ মামলা। এ মামলাটিও খুব শীগগির পিবিআইতে হস্তান্তর করা হবে।’
অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে বসতঘরের দরজা ভেঙে স্থানীয় দেলোয়ার বাহিনীর লোকজন ওই নারীর ঘরে প্রবেশ করে। এসময় তারা ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ এবং বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিওধারণ করে। পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ওই নারীকে অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছিল দেলোয়ার বাহিনীর লোকজন। এতে ভুক্তভোগী নারী রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিতে থাকে। গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরে ওই নারীকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় দেলোয়ার বাহিনীর লোকজন। এ ঘটনায় দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনায় ওই নারী বাদী হয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং পর্নোগ্রাফি আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন। এতে দেলোয়ার বাহিনীর বাদলকে প্রধান আসামি করে ৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৭-৮ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। এর একদিন পর ঢাকা থেকে মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তারা ওই নারীর সঙ্গে দেখা করার পর ৬ সেপ্টেম্বর রাতে তিনি দেলোয়ার ও আবুল কালামের বিরুদ্ধে আরও একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।
দুই মামলায় এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Comments