ছাত্র অধিকার পরিষদের ৩ নেতা এখনো নিখোঁজ, ডিবির হাতে গ্রেপ্তার ২ জন রিমান্ডে

Student.jpg
বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ নেতা মো. নাজমুল হুদা, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. সোহরাব হোসেন, আবদুল্লাহ হিল বাকি ও আসিফ মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সহসভাপতি মো. নাজমুল হুদা গতকাল রাজধানীর মগবাজারের মডার্ন হারবালে ভাইভা দিতে গিয়েছিলেন। দুপুর ২টার দিকে সেখান থেকে তাকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

দুপুর আড়াইটায় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ আসে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সোহরাব হোসেনকে। কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সাইফুল ইসলামকে চাঁনখারপুলের মেস থেকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় সন্ধ্যায়।

তিন জনকেই সাধারণ পোশাকের কয়েকজন তুলে নিয়ে গেলেও ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুরের দাবি, তাদের তুলে নিয়ে গেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

আজ সোমবার দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘গতকাল নাজমুলকে সঙ্গে নিয়ে সাধারণ পোশাকের লোকজন সাইফুলের মেসে যায়। সেসময় পুলিশও সঙ্গে ছিল। সাইফুলের মেস সদস্যরা আমাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। তারা তখন বাকিরও খোঁজ করেছে।’

‘এরপর থেকে আমরা সংগঠনের কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকির কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। ঢাবি শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আসিফ মাহমুদকে তেজগাঁও থেকে তুলে নিয়ে গেছে’, বলেন নুর।

আজ দুপুর পর্যন্ত এই পাঁচ জনের কোনো খোঁজ পাননি জানিয়ে নুর বলেন, ‘ধারণা করছি সবাইকেই ডিবি তুলে নিয়ে গেছে। তাই ঘটনার পরপরই আমরা শাহবাগ ও লালবাগ থানায় খোঁজ নিয়েছি, ডিবি কার্যালয়েও গিয়েছি। বরাবরের মতো এবারও তারা পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।’

নিখোঁজদের পরিবারের সদস্যরা খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন জানিয়ে নুর বলেন, ‘সবাই ভীষণ আতঙ্কে আছেন। গতকাল তাদের পরিবারের সদস্যরা আমার বাসায় এসেছিলেন, আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু আমি তাদের কোনো সান্ত্বনা দিতে পারিনি।’

‘আমার বাসার আশপাশে আগে থেকে প্রায়ই অপরিচিত লোকজনের আনাগোনা দেখতাম। এখন আরও বেশি বেশি দেখছি। এতে আশঙ্কা হচ্ছে- আমাকেও  তুলে নিতে পারে, গুম হয়ে যেতে পারি’, বলেন নুর।

33.jpg
ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া নেতাদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে ছাত্র অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া নেতাদের দ্রুত মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে ছাত্র অধিকার পরিষদ। এ ছাড়াও, নিখোঁজ আরও তিন জনকে দ্রুত খুঁজে বের করার দাবিও জানান তারা।

দুপুরে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল করে মৎস্যভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন হয়ে গুলিস্তানের দিকে যান।

ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, ‘সারাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন দমাতে এই তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে সরকার আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে চায়। যেখানেই অপকর্মের ঘটনা ঘটবে, যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

নিখোঁজ নাজমুল হুদার খালা বলেন, ‘আমাদের ছেলেরা কোথায় আছে? আমরা তাদের চিন্তায় ঘুমাতে পারছি না, খেতে পারছি না। কেউ অপরাধ করে থাকলে আইন অনুযায়ী বিচার করবে, তা না করে কেন সাধারণ পোশাকে তুলে নেওয়া হচ্ছে?’

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে নাজমুল হুদাকে দ্রুত খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি।

ডিবি কার্যালয়ে নিখোঁজদের আত্মীয়রা যোগাযোগ করলেও তাদের আটক বা গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকার করা হয়নি।

তবে ঢাবি এক ছাত্রীর দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলায় সাইফুল ও নাজমুলকে গতকাল রাতে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন ডিবির লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রাজীব আল মাসুদ।

আজ বিকালে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এই দুজনকে আদালতে তুলে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। পরে আদালত শুনানি শেষে তাদের দুজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Comments

The Daily Star  | English

Israel welcomes 'all help' in striking Iran

Israel hits nuclear sites, Iran strikes hospital as conflict escalates

1d ago