প্রায় তিন হাজার গানের গায়ক কিশোর কুমারের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
শিল্পীদের মৃত্যু হয় না। দেহত্যাগ করলেও তাদের সৃষ্টিই তাদের বাঁচিয়ে রাখে। এমনই একজন স্মরণীয় শিল্পী ১৯৮৭ সালে ১৩ অক্টোবর দেহত্যাগ করেন। আজ সেই কিংবদন্তী সংগীতশিল্পী কিশোর কুমারের প্রয়াণের ৩৩ বছর হলো।
আনন্দে, বিরহে, ভালোবাসায় কিশোর কুমারের গান আমাদের অন্য এক অনুভূতির সন্ধান দেয়।
১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট মধ্যপ্রদেশে এক বাঙালি পরিবারে জন্ম নেন কিশোর কুমার। কিশোর ছিল তার ডাক নাম। ভালো নাম আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। ‘বম্বে টকিজ’ ছবিতে দাদা অশোক কুমারের সঙ্গে গান গেয়েছিলেন কিশোর। সেই নামটাই শেষ পর্যন্ত থেকে যায়।
সংগীতে প্রথাগত শিক্ষা না থাকলেও কেএল সায়গলকে নিজের সবচেয়ে বড় আদর্শ মানতেন তিনি। ১৯৪৮ সালে ‘জিদ্দি’ ছবিতে প্রথম প্লেব্যাক করেন কিশোর কুমার।
তবে শুধু গান নয়, অভিনেতা হিসেবেও তিনি যে পারদর্শী তার প্রমাণ দিয়েছিলেন কিশোর কুমার। ‘শরারত’ ও ‘রাগিণী’ ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। তার লিপে গান গেয়েছিলেন মহম্মদ রফি।
কিশোর কুমারের বিপরীতে বৈজন্তিমালা, মধুবালা ও সায়রা বানুর মতো অভিনেত্রীরা অভিনয় করেছেন।
কিশোর কুমার আট বার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছেন। তার গাওয়া গানে ঠোঁট মিলিয়েছেন অমিতাভ বচ্চন, উত্তম কুমার, রাজেশ খান্না, সঞ্জীব কুমারসহ আরও অনেকে।
শচীন দেববর্মন, রাহুল দেববর্মন, গুলজার, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়সহ আরও অনেক সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।
কিশোর কুমারের প্রথম স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতা। ১৯৬০ সালে তিনি বিয়ে করেন মধুবালাকে। ১৯৬৯ সালে মধুবালার মৃত্যু হলে ১৯৭৬ সালে অভিনেত্রী যোগিতা বালিকে বিয়ে করেন তিনি। সেই সংসার টিকেছিল দুই বছর। সবশেষে লীনা চন্দভারকারকে বিয়ে করেন কিশোর কুমার। আমৃত্যু একসঙ্গে ছিলেন তারা।
কিশোর কুমার সর্বমোট দুই হাজার ৭০৩টি গান গেয়েছেন। যার মধ্যে এক হাজার ১৮৮টি হিন্দি সিনেমায়, ১৫৬টি বাংলা এবং অন্যান্য ভাষার গান। তার গাওয়া কিছু বাংলা গান হচ্ছে- ‘এ আমার গুরুদক্ষিণা’, ‘আমার পূজার ফুল’, ‘একদিন পাখী উড়ে যাবে যে আকাশে’, ‘কারও কেউ নইকো আমি’, ‘এক পলকের একটু দেখা’, ‘আকাশ কেন ডাকে’, ‘সে যেন আমার পাশে আজও বসে আছে’, ‘সে তো এলো না’, ‘মোর স্বপ্নের সাথী তুমি কাছে এসো’, ‘হাওয়ায় মেঘ সরায়ে’, ‘সেই রাতে রাত ছিল পূর্ণিমা’, ‘আজ এই দিনটাকে মনের খাতায় লিখে রাখো’, ‘তোমরা যতই আঘাত করো’, ‘ওগো নিরুপমা’, ‘তোমার পড়েছে মনে’, ‘ও পারে থাকবো আমি’, ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে’, ‘নয়ন সরসী কেন ভরেছে জলে’, ‘পৃথিবী বদলে গেছে’, ‘কি আশায় বাঁধি খেলাঘর’, ‘চোখের জলের হয়না কোনও রঙ’, ‘এত কাছে দুজনে’, ‘এই যে নদী যায় সাগরে’, ‘আমি যে কে তোমার’, ‘চিরদিনই তুমি যে আমার’, ‘আশা ছিল ভালোবাসা ছিল’, ‘আমারও তো গান ছিল’, ‘আধো আলো ছায়াতে’, ‘আমি দুঃখকে সুখে ভেবে বইতে পারি’ ইত্যাদি।
Comments