নুর-রাশেদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা দিয়ে ছাত্র অধিকারের একাংশের নতুন কমিটি

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এবং সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে একই সংগঠনের একাংশ ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার নতুন এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।
ছাত্র অধিকার পরিষদের একাংশ ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। ছবি: সংগৃহীত

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর এবং সংগঠনের আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে একই সংগঠনের একাংশ ২২ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার নতুন এই কমিটি ঘোষণা করা হয়।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির একাংশের নতুন কমিটির আহ্বায়ক এপিএম সুহেল। তিনি বলেন, ‘নীতিগত মতানৈক্যের কারণে আমরা সংঠনের পুরনো নামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে মানুষের আবেগ ও বিশ্বাস নিয়ে নোংরা রাজনীতি, আর্থিক অস্বচ্ছতা, স্বেচ্ছাচারিতা, অগণতান্ত্রিকভাবে সংগঠন পরিচালনা এবং সম্প্রতি ঢাবি শিক্ষার্থীর করা ধর্ষণের মামলাকে নোংরা রাজনীতিকিকরণের অপচেষ্টার প্রতিবাদে আমাদের এ সিদ্ধান্ত।’

সংগঠনের এই ভাঙনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এপিএম সুহেল ছাড়া নতুন সংগঠনের কমিটিতে থাকা বাকিরা কেউই আমার সংগঠনে ছিলেন না৷ আর সুহেলকে আগেই সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল৷ আমাদের ধারণা, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা বা প্ররোচণায় আমাদের চাপে ফেলতে এই কাজটি করানো হয়েছে৷ আমাদের অপরাধ হলো সরকারের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলা৷ তবে, নতুন সংগঠন করা সবারই গণতান্ত্রিক অধিকার৷ জনগণ বিবেচনা করবে কোনটি আসল আর কোনটি নকল সংগঠন৷’

নতুন কমিটির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল রাজনীতি-সামাজিক সংগঠন হিসেবে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করা। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ অনুষ্ঠানে সংগঠনের নাম সংক্ষিপ্ত করা হয়। যার বিরোধিতা করেছিলেন নতুন কমিটির অনেকেই। ডাকসুর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর  ছাত্র অধিকার পরিষদের উদ্যোগে তাড়াহুড়ো করে রাজনীতি করার অভিপ্রায়ে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ ও প্রবাসী অধিকার পরিষদ নামে তিনটি অঙ্গ সংগঠন তৈরি করা হয়। যেখানে এসব সংগঠনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে অজানা। ফলে সংগঠনের অভ্যন্তরে চাপা ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয় এবং সংগঠনের তৃণমূল খেকে শীর্ষস্থানীয় নেতারা এর বিরোধিতা করে। কিন্তু নুরের একক সিদ্ধান্তে রাজনীতি করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা একপ্রকার স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং এটি সংগঠনের অভ্যন্তরে চরম বিরোধ সৃষ্টি করে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সংগঠনের স্বার্থে এবং তাদেরকে শুধরানোর সুযোগসহ নানাবিধ চিন্তা করে আমরা সকল বিষয়ে এতদিন চুপ করে ছিলাম। তবে, সম্প্রতি তাদের আর্থিক অস্বচ্ছতার, নারী কেলেঙ্কারি, সংগঠনের অভ্যন্তরীণ স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত, নীতিনৈতিকতাহীন আচরণ, তৃণমূলকে অবমূল্যায়ন, ত্যাগী ও পুরাতন নেতাদের সাময়িক বহিষ্কার করাসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে কথা বলার জন্য আমরা উপস্থিত হয়েছি। কারণ আপনারা অনেকেই জানেন তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই তাদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ফোন কল ও ম্যাসেজের মাধ্যমে নানাবিধ হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। যা ইতোমধ্যে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গেও করা হয়েছে। এটা অনেকটা সরকারের বিরোধী মতকে দমিয়ে রাখার যে প্রবণতা, তার অন্য রূপ। এরা নিজেরাই অনলাইন নীতিমালা করে সংগঠনের নেতাকর্মীদের একপ্রকার মানসিকভাবে অত্যাচার করে মাচ্ছে দিনরাত।

এমন অবস্থায় সবকিছু বিবেচনা করে নুর, রাশেদদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে আমাদের আগের নাম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে চলমান সকল অনিয়ম ও অন্যাযের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে একটি বৈষম্যমুক্ত, সুখী, সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে এবং সারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজকে সঙ্গে নিয়ে আমাদের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করলাম।

এপিএম সুহেলের বহিষ্কারের বিষয়ে নতুন কমিটির দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটা ঢাবি সিন্ডিকেটের একক সিদ্ধান্ত ছিল। কেন্দ্রীয় কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। ঢাবি সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তখনই সবাই মিলে একত্রিত প্রতিবাদ জানিয়েছে।

কমিটিতে এপিএম সুহেলকে আহ্বায়ক ও ইসমাঈল সম্রাটকে সদস্যসচিব করা হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে আছেন সৈয়দ সামিউল ইসলাম। যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রয়েছেন ১৪ জন। তারা হলেন— আমিনুর রহমান, জালাল আহমেদ, আবদুর রহিম, আমিনুল হক রুবেল, রিয়াদ হোসেন, মো. সেলিম, শাকিল আদনান, নাদিম খান নিলয়, পৃথু হামিদ, একেএম রাজন হোসেন, মো. সাইফুল ইসলাম, সাজ্জাদুর রহমান রাফি, আফরান নাহিদ নিশো ও জাহেদুল ইসলাম নোমার।

কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন— মিজানুর রহমান মুশফিক, মো. সিয়াম ও মো. জুনায়েদ। এ ছাড়া, উপদেষ্টা হিসেবে আছেন মোহাম্মদ উল্লাহ মধু ও মুজাম্মেল মিয়াজি।

Comments

The Daily Star  | English
Gazipur factory fire September 2024

Column by Mahfuz Anam: Business community's voice needed in the interim government

It is necessary for keeping the wheels of growth running and attracting foreign investment in the new Bangladesh.

6h ago