বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: এইচএসসির জিপিএ বিবেচনায় নাও নেওয়া হতে পারে
পরীক্ষা না নিয়ে জেএসসি এবং এসএসসির ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে এইচএসসির ফলাফল দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। ফলাফল ঘোষণা করা হবে এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে। তবে, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) প্রস্তাব করতে যাচ্ছে, এই ফলাফল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিতে বিবেচনায় না নেওয়ার কিংবা খুব অল্প পরিমাণে নেওয়ার।
উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রক এই সংস্থার আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার কথা আছে। সেখানে বিকল্প হিসেবে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রস্তাব থাকবে।
করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীন সময়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান অনলাইন শিক্ষার অগ্রগতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আসন্ন একাডেমিক সেশনের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিয়েও এতে আলোচনা হবে।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা বৃহস্পতিবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিদের সঙ্গে বসব। আসন্ন একাডেমিক সেশনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এইচএসসির ফলাফল নিয়ে আমরা কিছু প্রস্তাব দিব।’
মহামারির কারণে এইচএসসি পরীক্ষা না নেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
গত ১ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এইচএসসি পরীক্ষা। ১৩ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করার কথা ছিল।
অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম জানান, সাধারণ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভর্তি পরীক্ষার পাশাপাশি এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ বিবেচনায় নেয়। কিন্তু এ বছরের অবস্থা ভিন্ন। তাই কিছু বিকল্প সমাধান খুঁজছেন তারা।
অন্যতম বিকল্প হিসেবে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এইচএসসির জিপিএ বিবেচনায় না নেওয়ার প্রস্তাবনা দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিকল্প হলো এইচএসসির চেয়ে এসএসসির ফলাফল বেশি বিবেচনায় আনা।’
‘তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এবং শিক্ষকরা এই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করলে তবেই তা চূড়ান্ত করা হবে,’ বলে যোগ করেন তিনি।
সরকার এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে অনেকেই অনিশ্চিত। তবে দিল আফরোজ ও ইউজিসির অন্যান্য সদস্যরা জানান, তারা ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে।
অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘আমরা এসএটি বা জিআরই বা জিএমএটির মতো পরীক্ষা দিতে পারি। আমরা প্রশ্ন এমনভাবে করব যাতে প্রক্রিয়াটি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।’
অধ্যাপক দিল আফরোজ এবং ইউজিসির আরেক সদস্য মুহাম্মদ আলমগীর জানান, তারা এ বছর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা চালু করতে যাচ্ছেন।
এর মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না বলে জানান মুহাম্মদ আলমগীর।
গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের ঝামেলা কমাতে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য ‘কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা’ শীর্ষক নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয় ইউজিসি।
তবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এই ব্যবস্থায় আগ্রহ দেখায়নি।
ইউজিসির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান, তারা আশা করছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয়ও মহামারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থায় যোগ দেবে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান জানতে ঢাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ ও জাবি অধ্যাপক মো. আমির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাদের একাডেমিক কাউন্সিল এবং অন্যান্য ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
Comments