নিত্যপণ্য মূল্য ঊর্ধ্বমুখী, আয়-ক্রয় ক্ষমতা নিম্নমুখী
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-আয়ের মানুষের আয় কমেছে। তার ওপর প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতেই হিমশিম খাচ্ছেন দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষ।
কারও কারও জন্য পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ন্যূনতম চাল, আলু, ভোজ্যতেল, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজও এখন বিলাসবহুল হয়ে উঠেছে। এই পাঁচটি মূল নিত্যপণ্যের দাম গত দুই মাসে কেজি প্রতি পাঁচ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর অটোরিকশাচালক আমির আলী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে, তবে আমাদের মতো মানুষকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে।’
মুগদায় দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন তিনি। স্ত্রী জোৎস্না একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। কিন্তু, মহামারির কারণে এখন সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। জোৎস্না এখন একটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন।
দুই সন্তানের বাবা আমির বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়েই সন্তানদের জন্য ভালো খাবার সরবরাহ করা আমাদের পক্ষে কঠিন। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে গেছে।’
দ্য ডেইলি স্টারের সংবাদদাতা রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে গত দুই মাসের টিসিবির মূল্য তালিকার তুলনা করেন।
হঠাৎ করে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে আলুর দাম। দুই মাস আগেও কেজিপ্রতি আলুর দাম ছিল ২৬ টাকা। গতকাল কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়।
ভারত থেকে রপ্তানি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পেঁয়াজের দাম রাতারাতি ৪০-৪৫ টাকা থেকে দ্বিগুণ হয়। এখনো কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৯০ টাকা থেকে কমেনি।
গত ১৫ আগস্ট কাঁচা মরিচের কেজি ছিল ১০৫ টাকা করে। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়।
শুধু তাই নয়, সম্প্রতি সবজির দামও তীব্রভাবে বেড়েছে। মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি তিন টাকা থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। বেড়েছে ভোজ্যতেলের দামও। এক সপ্তাহ আগে সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের দাম ছিল ৪৯৫ থেকে ৫০৫ টাকার মধ্যে। এখন বিভিন্ন বাজারে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৫১৫ থেকে ৫৩০ টাকায়।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে ইতোমধ্যে আয় কমেছে ঢাকার একটি টেইলার্সের দোকান মালিক হোসনে আরার। জীবিকার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজছেন তিনি।
দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘কেজি ৭০ টাকার নিচে কোনো শাকসবজি পাওয়া যায় না। আমি বাধ্য হয়ে আমার বাজারের তালিকা ছোট করেছি। এখন একটু কম দাম পেতে রাতের বেলা শাকসবজি কিনছি।’
দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উত্স ডিমের দামও বেড়েছে।
যাত্রাবাড়ীর একটি মুদি দোকানের বিক্রেতা ফরহাদ হোসেন জানান, এক সপ্তাহ আগে ৮৯০ টাকায় ১০০টি ডিম কিনেছিলেন তিনি। এখন পাইকারি বাজারে ১০০টি ডিম ৯২০ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি বলেন, ‘আগে প্রতি ডজন ডিম ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি করলেও এখন প্রতি ডজন ১৪৪ টাকায় বিক্রি করছি।’
প্রোটিনের অন্য একটি উত্স ব্রয়লার মুরগির দামও বেড়ে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
Comments