মিয়ানমারের পাশে ভারত, নেপথ্যে ‘চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধ’

INS Sindhuvir.jpg
আইএনএস সিন্ধুবীর সাবমেরিন। ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারকে একটি কিলো ক্লাস সাবমেরিন দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। এ অঞ্চলে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চীনের সঙ্গে দীর্ঘকালীন প্রতিযোগিতায় এটি ভারতের একটি বড় পদক্ষেপ।

মিয়ানমারের নৌবহরে আইএনএস সিন্ধুবীরই হবে প্রথম সাবমেরিন। দ্বিতীয় কোনো দেশকে ভারতের সাবমেরিন দেওয়ার ঘটনাও এটাই প্রথম।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা সম্পর্কে উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে মিয়ানমারকে সহযোগিতা করায় ভারতের সবচেয়ে বড় স্বার্থ হিসেবে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধকে উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সংক্রান্ত সহযোগিতা আমাদের বৈচিত্র্যময় সম্পর্কের একটি অংশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারত মিয়ানমারের নৌবাহিনীকে কিলো ক্লাস সাবমেরিন আইএনএস “সিন্ধুবীর” দেবে।’

১৯৮৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে এই সাবমেরিনটি সংগ্রহ করেছিল ভারত। বর্তমানে অন্ধ্র প্রদেশের বিশাখাপত্তমের একটি শিপইয়ার্ডে এর সংস্কার কাজ চলছে।

এই অঞ্চলে ২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে ২০৩ মিলিয়ন ডলারে দুইটি টাইপ ০৩৫ জি মিং-শ্রেণির সাবমেরিন কিনেছে বাংলাদেশ। তা ছাড়া, চীনের সহযোগিতাতেই কক্সবাজারে একটি সাবমেরিন ঘাঁটি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের নৌ-সক্ষমতা বাড়াতে সাবমেরিন সংগ্রহ করতে শুরু করে মিয়ানমার।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের ওপর চীনের প্রভাব ঠেকানোর পরিকল্পনা থেকেই সাবমেরিন দেওয়াসহ প্রতিরক্ষা খাতে সম্পর্ক জোরদারে নজর দিয়েছে ভারত।

ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ১ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে। নাগাল্যান্ড ও মণিপুর সীমান্তে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী মিয়ানমারকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। ভারতের এনএসসিএন, উলফা, এনডিএফবির সদস্য ও মিয়ানমারের আরাকান আর্মি, কাচিনের স্বাধীনতাকামীদের দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে, অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।

ভারত সমুদ্রপথে মিজোরাম ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে পণ্য পৌঁছানোর জন্য কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টে মিয়ানমারের সহযোগিতা চেয়েছে। এটি ভারতের কলকাতা বন্দরকে মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান) রাজ্যের সিটওয়ে (আকিয়াব) বন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত করবে।

কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্টের আওতায় মিয়ানমারের সহযোগিতায় রেল যোগাযোগ, সিটওয়ে বিশেষ শিল্পাঞ্চল, সিটওয়ে-গয়া গ্যাস পাইপলাইন, চুং জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিদেশীয় সড়ক পরিবহন ছাড়াও ইন্ডিয়া-মিয়ানমার-জোকাথার-রি হাইওয়ে, প্লাটওয়া-চিক্কা-ইন্ডিয়া হাইওয়ে প্রজেক্ট, আইজল-থুইপাং ন্যাশনাল হাইওয়ে প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করবে ভারত।

এদিকে, মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করে চীন। পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩০ বছরে মিয়ানমারে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতের বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত ততটা বেশি না।

এর আগে, চীন কিউক ফুতে একটি বন্দর তৈরির প্রকল্পে ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রকল্পটি নিজেদের করে নয়। ওই বন্দর থেকে পণ্যগুলো মিয়ানমারের উত্তর দিকে চীনের কুনমিং প্রদেশে পাঠানো হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত অঞ্চলে মিয়ানমারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে এখন বিশেষ মনোযোগী ভারত। এই অঞ্চলে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে দুই দেশই সমান তালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

আরও পড়ুন:

মিয়ানমারকে প্রথম সাবমেরিন দেবে ভারত

Comments

The Daily Star  | English
Yunus-Rubio

Yunus, Rubio pledge to deepen economic ties

Bangladesh and the United States yesterday pledged to deepen economic ties and reaffirmed commitment to a stable and peaceful Indo-Pacific region. 

2h ago