অন্তিম শয়ানে শিক্ষাগুরু আমীর আহাম্মদ চৌধুরী
ময়মনসিংহের সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু বীর মুক্তিযোদ্ধা আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন আর নেই। গতকাল দিবাগত রাত সোয়া ১১টার দিকে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
ময়মনসিংহ মুকুল ফৌজের প্রতিষ্ঠাতা, মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়ের রেক্টর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের জেলা আহ্বায়ক, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা, কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির জেলা সভাপতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতনের মৃত্যুতে ময়মনসিংহবাসী গভীর শোকাহত। তার অন্তিম শয়ানে সর্বত্রই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
তিনি স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ আত্মীয়স্বজন এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সবাই তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করছেন।
শহীদ পরিবারের সন্তান মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর অধ্যক্ষ আমীর আহাম্মদ চৌধুরী রতন গত ৬ অক্টোবর বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক সমস্যা নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে গত ৮ অক্টোবর তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ১১টায় তিনি মারা যান।
ওইদিন রাতেই তার মরদেহ ময়মনসিংহের বাসায় নিয়ে আসা হয়। সকাল আটটায় মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মরদেহ রাখা হলে সেখানে সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। আজ শুক্রবার বাদ জুমা ময়মনসিংহের আঞ্জুমান ঈদগাহ মাঠে মরহুমের জানাজা শেষে মরদেহ নিজ বাড়ি ফেনীতে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৪১ সালের ২৮ নভেম্বর ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের হাসানপুর চৌধুরী বাড়িতে আমীর আহমেদ চৌধুরীর জন্মগ্রহণ করেন।
আদিনিবাস ফেনী হলেও বাবার চাকরির সুবাদে রতন চৌধুরীর পরিবার ময়মনসিংহ শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। তার বেড়ে ওঠা ও পড়াশোনা ময়মনসিংহ শহরেই। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি ছিলেন সংগঠক, খেলোয়াড় এবং সৃজনশীল চেতনায় উদ্ভাসিত মানুষ। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, শিক্ষা, সামাজিক, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক। তার বড় ভাই ফেনী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আজিজ আহমেদ চৌধুরী এবং ছোট ভাই মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) আমীন আহমেদ চৌধুরী বীরবিক্রম।
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সিনিয়র সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতি ময়মনসিংহ শাখার সাধারণ সম্পাদক, জেলা নাগরিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, সার্বজনীন বাংলা নববর্ষ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ময়মনসিংহ শাখার আহ্বায়ক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
পহেলা বৈশাখ আর ত্রিশালের কবি নজরুলের জন্মজয়ন্তীর সাংস্কৃতিক পর্বের বিশাল কর্মযজ্ঞ তিনি সুচারুরূপে সমন্বয় করেছেন। ময়মনসিংহের শিক্ষা, রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবদান অবিস্মরণীয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমীর আহাম্মদ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন। ময়মনসিংহ সেবা নিকেতন, স্বাধীনতা সাহিত্য পরিষদ, ময়মনসিংহ লোক নাট্য সংস্থা ও সম্প্রীতি সংস্থার পক্ষ থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করা হয়।
Comments