রাসেলের আর্তি টলাতে পারেনি খুনী পাষাণদের মন

Russel_18Oct20.jpg
ছবি: বাসস

আল্লাহর দোহাই দিয়ে না মারার জন্য খুনিদের কাছে আর্তি জানিয়েছিলেন শেখ রাসেল। চিৎকার করে তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহর দোহাই আমাকে জানে মেরে ফেলবেন না। বড় হয়ে আমি আপনাদের বাসায় কাজের ছেলে হিসেবে থাকবো। আমার হাসু আপা দুলাভাইয়ের সঙ্গে জার্মানিতে আছেন। আমি আপনাদের পায়ে পড়ি, দয়া করে আপনারা আমাকে জার্মানিতে তাদের কাছে পাঠিয়ে দিন।’

তবে, সেদিন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র রাসেলের এই আর্তচিৎকারে স্রষ্টার আরশ কেঁপে উঠলেও টলাতে পারেনি পাষাণ হৃদয়ের খুনীদের মন। বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যের মতো এই নিষ্পাপ শিশুকেও ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট ঠান্ডা মাথায় খুন করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে জন্মগ্রহণ করেন। বেঁচে থাকলে তিনি আজ ৫৭ বছরে পা দিতেন।

ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে রাসেলকে এভাবেই নৃশংস হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন।

তিনি তার গ্রন্থে লেখেন বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যকে হত্যার পর রাসেল দৌড়ে নিচে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করানো বাড়ির কাজের লোকজনের কাছে আশ্রয় নেয়। রাসেলের দীর্ঘকাল দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আবদুর রহমান রমা তখন রাসেলের হাত ধরে রেখেছিলেন।

আব্দুর রহমান রমা ঊনসত্তর সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারে কাজ করতেন, একাত্তরের ওই পরিবারের সঙ্গে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী এই রমা।

ওয়াজেদ মিয়া লেখেন, একটু পরেই একজন সৈন্য রাসেলকে বাড়ির বাইরে পাঠানোর কথা বলে রমার কাছ থেকে তাকে নিয়ে নেয়। রাসেল তখন ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে তাকে না মারার জন্য আল্লাহর দোহাই দেয়।

রাসেলের এই মমর্শস্পর্শী আর্তিতে একজন সৈন্যের মন গলায় সে তাকে বাড়ির গেটে সেন্ট্রিবক্সে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু এর প্রায় আধ ঘণ্টা পর একজন মেজর সেখানে রাসেলকে দেখতে পেয়ে তাকে দোতলায় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় রিভলবারের গুলিতে হত্যা করে।

আব্দুর রহমান রমা তার সাক্ষ্যাৎকারে এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন রাসেল হত্যার-ভোররাতে ধানমন্ডির বাড়িটি আক্রান্ত হওয়ার দিনে যে ঘরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন শেখ রমা।

শেখ রমা জানান, দোতলায় হত্যাযজ্ঞ শেষে শেখ রাসেল এবং তাকে যখন নিচে নিয়ে আসা হয়। তখন রাসেল বলছিল: ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো? এরকম শিশুকে নিশ্চয়ই খুনিরা মারবে না আশায় মুহিতুল ইসলাম তাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন: ‘না, ভাইয়া, তোমাকে মারবে না। পরে রাসেল বলে, আমি মায়ের কাছে যাব।’

পরে এক হাবিলদার শেখ রাসেলকে তার হাত ধরে দোতলায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দোতলায় গুলি এবং সেখান থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ পাওয়া যায়। আর ওই হাবিলদার নিচে গেটের কাছে এসে মেজর আজিজ পাশাকে বলে: ‘স্যার, সব শেষ।’

এর আগে আজিজ পাশা এবং রিসালদার মোসলেমউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ জামাল, শেখ জামালের স্ত্রী এবং শেখ কামালের স্ত্রীকে হত্যা করে।

শেখ রাসেলকে হত্যার আগে ঘাতকরা একে একে পরিবারের অন্য সদস্য বড় ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এবং বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে।

ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র দুরন্তপ্রাণ শেখ রাসেল এমন সময়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন যখন তার পিতার রাজনৈতিক জীবনকে দেখতে শুরু করেছিলেন মাত্র।

আরও পড়ুন:

শহীদ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকীতে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ

Comments

The Daily Star  | English

Govt looking to defuse trade tensions with India

Bangladesh does not want any further escalation in tension with India, as the recent retaliatory moves are affecting bilateral trade and both countries’ businesses.

5h ago