সীমান্তে দুই বাংলার মানুষের এক মসজিদ

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে দুই বাংলার মানুষের জন্য একটি মসজিদ ‘সীমান্ত জামে মসজিদ’ হয়ে উঠেছে অহিংস সম্প্রীতির উদাহরণ।
দুই বাংলার মানুষের জন্য একটি মসজিদ ‘সীমান্ত জামে মসজিদ’ হয়ে উঠেছে অহিংস সম্প্রীতির উদাহরণ। ছবি: এস দিলীপ রায়

কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে দুই বাংলার মানুষের জন্য একটি মসজিদ ‘সীমান্ত জামে মসজিদ’ হয়ে উঠেছে অহিংস সম্প্রীতির উদাহরণ।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৯৭৮ নাম্বার মেইন পিলারের ৯ নাম্বার সাব পিলারের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম। দক্ষিণে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বাঁশজানি গ্রাম। এই সীমান্তে দুই বাংলার মানুষের একটি মসজিদ। নাম সীমান্ত জামে মসজিদ। মসজিদটির বয়স প্রায় দুইশ বছর হবে বলে স্থানীয়রা জানান। জাল টানিয়ে নির্ণয় করা হয়েছে উভয় দেশের সীমান্ত।

সীমান্ত মসজিদটির দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফিট আর প্রস্থে ২০ ফিট। আধা পাকার এই মসজিদটির আছে ১৫ শতাংশ জমি।

মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনিতে দুই বাংলার মুসল্লিরা ছুটে আসেন মসজিদে। ছবি: দিলীপ রায়

মসজিদের মুয়াজ্জিন বাঁশজানি গ্রামের বাসিন্দা নজরুল মিয়া (৬২) বলেন, ‘মুয়াজ্জিনের আযানের ধ্বনিতে দুই বাংলার মুসল্লিরা ছুটে আসেন মসজিদে। একসঙ্গে নামায় আদায় করেন। তখন একাকার হয়ে যায় একে অপরের প্রীতি ভালোবাসা। মসজিদ থেকে বেরিয়ে কোলাকুলি করেন দুই বাংলার মানুষ। নিজেদের মধ্যে বিনিময় করেন কুশলাদি।’

তবে, মসজিদে নামায়ের সময় ছাড়াও তারা সীমান্তে একে অপরের মাঝে দুঃখ বেদনা ও সুখের কথা আদান প্রদান করে থাকেন। প্রয়োজনে একে অপরের বিপদে-আপদে ছুটে আসেন বলে তিনি জানান।

একই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম (৩২) জানান, ঐতিহ্যবাহী সীমান্ত মসজিদটি দেখতে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরাও আসেন। তারা এই মসজিদে নামায পড়েও কালের সাক্ষী হচ্ছেন।’

সীমান্ত মসজিদটির দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩০ ফিট আর প্রস্থে ২০ ফিট। আধা পাকার এই মসজিদটির আছে ১৫ শতাংশ জমি। ছবি: দিলীপ রায়

ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রাম থেকে আসা মুসল্লি খয়বর আলী (৭৯) বলেন, ‘সীমান্ত মসজিদটি দুইশ বছরের পুরনো হলেও অবকাঠামোগত কোনো উন্নতি হয়নি। সীমান্তে অবকাঠামো নির্মাণে আন্তর্জাতিক আইনি জটিলতা থাকায় এটি সম্ভবও হচ্ছে না। দুই বাংলার মানুষ যৌথভাবে আর্থিক সহায়তা দিয়ে অস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ ও মেরামত করে থাকেন।’

মসজিদের ইমাম বাঁশজানি গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৫) বলেন, ‘শুক্রবার জুম্মার দিন সীমান্ত মসজিদটি আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ ও ভারতের মুসল্লিরা পাতিল-বালতি ভরে নিয়ে আসেন তবারক। নামায শেষে এগুলো বিতরণ করা হয়। মসজিদটি সীমান্তঘেষা হলেও এটি বাংলাদেশ ভূখণ্ডের। তাই ভারতের গ্রাম থেকে আসা মুসল্লিরা নামায শেষে বেশিক্ষণ অবস্থান করেন না।’

ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রামের আহমেদ আলী (৬৭) বলেন, ‘সীমান্তে একটি কাঁচা সড়ক আছে। এই সড়কটির অর্ধেক হলো বাংলাদেশের আর অর্ধেক হলো ভারতের। উভয় দেশের নাগরিক যৌথভাবে এই সড়কটি ব্যবহার করেন। মেরামতের সময় তারা যৌথভাবে নিজেরাই কাজ করেন।’

তিনি আরও জানান, ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রামে ৪৫টি পরিবারের আড়াইশ মানুষের বাস। এই গ্রামে তাদের জমিজমা ও বসতভিটা থাকায় তারা কাঁটাতারের বেড়ার ভেতর চলে যাননি। এই গ্রামে থেকে গেছেন। তাই সীমান্তের এপারের মানুষের সঙ্গে তাদের আছে সম্প্রীতি। তাদের মধ্যে কোনোদিন ঝগড়া ও বিবাদের ঘটনা ঘটেনি।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর মিঠু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই সীমান্তের উভয় বাংলায় বসবাসকারীরা একে অপরের আত্মীয়। দেশ বিভাগের সময় তারা হয়ে যান বিভক্ত, কিন্তু আত্মীয়তার বন্ধন বিভক্ত হয়নি। শুধু মসজিদে একসঙ্গে নামায পড়া নয়, উভয় বাংলার পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তারা একে অপরকে দাওয়াত করে থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেউ মারা গেলে তারা উভয়ে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন। আর তাদের সমাজও একটি। উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীও তাদের শান্তিপূর্ণ বসবাসে কোনোদিন বাধা সৃষ্টি করেনি। বাঁশজানি-ঝাকুয়াটারী সীমান্তটি হয়ে উঠেছে সম্প্রীতি ও শান্তির সীমান্ত।’

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago