দেশীয় স্টার্টআপের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ পেল শপআপ
ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সমাধানের একমাত্র দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান শপআপ রেকর্ড ১৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ পেয়েছে। দেশীয় স্টার্টআপগুলোর মধ্যে সিরিজ-এ তে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ পাওয়ার রেকর্ড এটি।
শপআপে যৌথভাবে এ বিনিয়োগ করেছে ভারতের সেকুইয়া ক্যাপিটাল এবং ফ্লোরিস ভেঞ্চার। সঙ্গে রয়েছে ভিওন ভেঞ্চার, স্পিড ইনভেস্ট ও সিংগাপুর ভিত্তিক লনসডেল ক্যাপিটাল। বাংলাদেশে সেকুইয়া ক্যাপিটাল এবং ফ্লোরিস ভেঞ্চারের প্রথম বিনিয়োগ এটি।
বিনিয়োগ পাওয়ার কথা জানিয়ে স্টার্টআপটির পক্ষ থেকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশে ৪৫ লাখেরও বেশি মুদি দোকান রয়েছে যা দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মোট সংখ্যার প্রায় ৯৮ শতাংশ। এশিয়ার মধ্যে এই হার বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ। এত বিশাল সংখ্যক দোকানদাররা তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ডিস্ট্রিবিউটর এবং পাইকারি বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিনতে গিয়ে নিয়মিত সমস্যার সম্মুখীন হন। অতি সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ মুদি দোকানদার বাকিতে পণ্য বিক্রি করেন কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ২৭ শতাংশের ঋণ পাওয়ার মতো সক্ষমতা রয়েছে। পণ্যের স্বল্পতা, মূল্য নির্ধারণে অস্বচ্ছতা, সময় মত ডেলিভারির অভাব, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দৈনন্দিন ব্যবসা পরিচালনায় এক মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শপআপ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য সকল ব্যবসা প্রক্রিয়া সহজ করে, মালামাল দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং বাকিতে মালামাল ক্রয়সহ ব্যবসা পরিচালনার পরিপূর্ণ সমাধান প্রদান করে। শপআপের এসব সহজ সমাধানের ফলে মুদি দোকানদাররা কম পরিশ্রমে অধিক মুনাফা অর্জন করতে পারছেন এবং তাদের ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধি ও ক্রেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে আরও মনোযোগী হতে পারছেন।
দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে এ বছরের শুরুতে ভারতের বেঙ্গালুরুতে কার্যক্রম শুরু করে শপআপ। এর মধ্যে দিয়ে যোগ্য কর্মীদের খুঁজে বের করে ব্যবসায়িক লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে চায় শপআপ। উল্লেখ্য, অতি সম্প্রতি ভারতীয় ই-কমার্স প্লাটফর্ম ‘ভূনিক’ শপআপের সঙ্গে একীভূত হয় এবং এর ফলে ভূণিকের প্রতিষ্ঠাতারা শপআপে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে যোগ দেন।
শপআপের প্রধান নির্বাহী ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা আফিফ জামান বলেন, ‘আমরা সবসময় বিশ্বাস করি এই দশক হবে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উত্থান ও সফলতা অর্জনের সময়। আমরা ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির সহায়তায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলোর সফলতা অর্জনে বিশ্বাস করি এবং এই উদ্দেশ্যেই শপআপের যাত্রা শুরু হয়, কারণ আমরা সবসময় এ বিশাল পরিবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হতে চেয়েছি।’
‘শপআপ মুদি দোকানিদের জন্য বাংলাদেশের প্রথম এবং পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল প্লাটফর্ম যা এসএমই ব্যবসায়ীদের মানসম্পন্ন পণ্য প্রদান, সঠিক সময়ে পণ্য সরবরাহ, বিশ্বস্ত পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা এবং সহজে বাকিতে মালামাল ক্রয় করার মতো সহযোগিতা দেয়। সেকুইয়া ক্যাপিটাল দৃঢ়ভাবে শপআপের ব্যবসায়িক মডেলে বিশ্বাস করে এবং এটি আমাদের জন্য সবসময় আনন্দদায়ক। কারণ, শপআপ প্রযুক্তির সহায়তায় ডিজিটাল রূপান্তর ঘটাচ্ছে।’ শপআপ নিয়ে এভাবেই নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করেন সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সেকুইয়া ক্যাপিটালের (ভারত) ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লাউস ওয়াং।
ফ্লোরিস ভেঞ্চারের গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট পরামর্শক স্মিতা আগারওয়াল শপআপ সম্পর্কে বলেন, ‘শপআপ একটি ব্যতিক্রমী প্রযুক্তি নির্ভর ব্যবসায়িক মডেল, যেটি এসএমইদের জন্য কমার্স, লজিস্টিকসসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা দেয় এবং তাদের ব্যবসার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। শপআপের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এসএমই ব্যবসাখাত করোনা মহামারিতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শপআপ যেভাবে সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতে নিজেকে খাপ খাইয়ে লক্ষাধিক এসএমইকে সাহায্য করেছে এবং যাদের বড় অংশই নারী উদ্যোক্তা, তা সত্যিই আনন্দদায়ক।’
করোনা মহামারী বিদ্যমান বিপণন ব্যবস্থা উপর চাপ সৃষ্টি করেছে এবং ভোক্তাদের কাছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। শপআপে লেনদেন করা মুদি দোকানিদের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ এবং এ বছরের এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত শপআপের ব্যবসার পরিধি বেড়েছে সাড়ে আট গুণ। একই সঙ্গে, মহামারীতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে এবং ক্রেতাদের কাছে সঠিক সময়ে পণ্য পৌঁছাতে অসংখ্য মুদি দোকানি অনলাইন ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুকসহ অন্যান্য প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা শুরু করেছে। এর ফলে দ্রুততম সময়ে সঠিকভাবে পণ্য পরিবহন নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। শপআপের ডেলিভারি সেবা ‘রেডএক্স’ এসব ব্যবসায়ীদের পণ্যের জন্য দেশজুড়ে বিস্তৃত ডেলিভারি সেবা প্রদান করছে, যা রেডএক্সকে দেশের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বস্ত পণ্য পরিবহন কোম্পানিতে পরিণত করেছে। বর্তমানে রেডএক্স এপ্রিল মাসে ডেলিভারি করা পণ্যের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি পণ্য দ্রুততম সময়ে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
Comments