করোনা মহামারিতে বাল্যবিয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়ে সব সময়ই বড় বাধা। কোভিড-১৯ মহামারিতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অভিভাবকরা তাদের নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে, দেশে বাল্যবিয়ের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।
সেভ দ্য চিলড্রেনের গ্লোবাল রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী আনুমানিক পাঁচ লাখ মেয়ে বাল্যবিয়েতে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিতে এবং এ বছর বাল্যবিয়ের শিকার ১০ লাখ মেয়ের সন্তানসম্ভবা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে যে, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় দুই লাখ মেয়ে নতুন করে বাল্যবিয়ের ঝুঁকিতে পড়বে।
বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব অশুভ। আমরা এরই মধ্যে বাল্যবিয়ের অভিশাপে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছি। ২০ এর কোঠায় বয়স এমন প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগেই এবং ১৮ শতাংশের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়স হওয়ার আগে। মহামারির কারণে এই সংখ্যাটি কয়েকগুণ বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
একটি সমাজ এবং একটি দেশ হিসেবে অবশ্যই আমাদের কম বয়সী মেয়েদের ওপর বাল্যবিয়ের ধ্বংসাত্মক প্রভাব স্বীকার করতে হবে। যা শেষ পর্যন্ত সমগ্র সমাজের পাশাপাশি জাতির বিকাশের লক্ষ্যকেও প্রভাবিত করে। শিশুদের যখন বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়, তখন তারা স্কুল ছাড়তেও বাধ্য হয় এবং তারা শৈশবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের কারণে তারা মানসিক আঘাত পায়। এমন বয়সে গর্ভধারণ তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়, রুগ্ন বা বিকলাঙ্গ শিশু জন্মের কারণ হয়, এমনকি তাদের নিজের মৃত্যুর কারণও হতে পারে। বাল্যবিয়ের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবগুলোর মধ্যে রয়েছে— প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মেয়ে শিশু এবং কিশোরীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কাজ ও আয় করার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং ঘরোয়া সহিংসতা শিকার হওয়া।
এই মারাত্মক অবস্থার মধ্যেই করোনা মহামারি বাল্যবিয়ের কারণগুলোকে তীব্র করে তুলেছে। দারিদ্র্য, মেয়েদের নিরাপত্তার অভাব এবং মেয়েদেরকে পিতামাতার জন্য বোঝা মনে করার মানসিকতা বাল্যবিয়ের অন্যতম প্রধান কারণ।
মহামারি শুরু হওয়ার আগেও আমরা বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খুব বেশি সফলতা পাইনি। বর্তমানে আমরা যে পরিসংখ্যানের মুখোমুখি হয়েছি, আমাদের উচিত দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া। বাল্যবিয়ের আইন ‘বিশেষ পরিস্থিতিতে’ বাল্যবিয়ের অনুমতি দেয়। এটি অবশ্যই বাতিল করতে হবে। পরিবারগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা ও আয়ের সুযোগ করে দেওয়া হলে তারা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে এবং কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেবে না। মেয়ে শিশু ও নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার এবং সমাজের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তারা যাতে রাস্তায় কোনো হয়রানির শিকার না হয়, যৌন সহিংসতার শিকার না হয়, স্কুলে যেতে পারে এবং নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে সবাই মিলে। বাল্যবিয়ে একটি অবমাননাকর বিষয়। সকলের ভালোর জন্য এটা বন্ধ করতে হবে।
Comments