একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির পড়েছে ‘উঠান’ সংকটে

Lalmonirhat mosque-temple.jpg
একই আঙিনায় দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদ-মন্দিরের সামনে সম্প্রতি সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন জমির মালিক। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট শহরের কালীবাড়ি পুরানবাজার এলাকায় গত ছয় যুগেরও বেশি সময় ধরে ধর্মীয় সম্প্রীতির নিদর্শন রূপে একই আঙিনায় দাঁড়িয়ে আছে মসজিদ-মন্দির। দুটি ধর্মীয় স্থাপনাই এবার পড়েছে উঠান সংকটে।

সম্প্রতি মসজিদ-মন্দিরের সামনের উঠানে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেছেন জমির মালিক। তিনি উঠানের ২৪ শতাংশ জমির মধ্যে ১২ শতাংশ জমি দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করতে চান। কিন্তু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দুটির নেই নিজস্ব কোনো তহবিল।

একই আঙিনায় মাত্র তিন ফুট দূরত্বে থাকা পুরানবাজার জামে মসজিদে প্রতিদিন প্রার্থনা চলে, কালীবাড়ি শ্রী শ্রী কালী ও দুর্গা মন্দিরে হয় পূজা-অর্চনা। ধর্মীয় সম্প্রীতির এমন নিদর্শন দেখতে এখানে প্রতিদিন বহু দর্শনার্থী আসেন। এখানকার ইতিহাস, ঐহিত্য ও সম্প্রীতির নিদর্শন দেখে খুশি হন তারা।

মসজিদটি পাঁচ শতাংশ এবং মন্দিরটি আট শতাংশ জমিতে স্থাপিত হলেও, মসজিদ-মন্দিরের সামনে ২৪ শতাংশের উঠানের মালিক অন্যজন। তবে যুগের পর যুগ ধরে এই উঠান ব্যবহার করে আসছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান দুটি।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. রফিকুল ইসলাম ও মন্দিরের পুরোহিত শ্রী সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, মসজিদ-মন্দির লাগোয়া উঠানটি আগের মতো উন্মুক্ত না থাকলে এখানকার সম্প্রীতির ঐতিহ্য চরম সংকটে পড়বে।

এই দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কোনো নিজস্ব তহবিল না থাকায় সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও দাবি জানান তারা।

মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক গোবিন্দ চন্দ্র সাহা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মন্দিরে নিয়মিত পূজা-অর্চনা হয়। দুর্গা পূজার সময় বহু দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। উঠান না থাকলে মন্দিরের পূজা-অর্চনায় বিঘ্ন ঘটবে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যের মালিকানাধীন উঠানটি দীর্ঘদিন ফেলে রাখায় আমরা সেটি ব্যবহার করতে পেরেছি। সম্প্রীতির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে উঠানটি।’

‘জমির মালিক ২৪ শতাংশ উঠানের মধ্যে ১২ শতাংশ উঠান আমাদের কাছে বিক্রি করতে চান, কিন্তু আমাদের কেনার সামর্থ্য নেই’, বলেন গোবিন্দ চন্দ্র সাহা।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি এই জমিটুকু কিনে দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়, তাহলে এখানকার ধর্মীয় সম্প্রীতি আরও উজ্জ্বল হবে।’

মসিজদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম দুলাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মন্দিরের মতো আমাদেরও নিজস্ব কোনো তহবিল না থাকায় জমিটি কেনা সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতির ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির এখন উঠান সংকটে পড়েছে।’

‘দুই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে উঠানটি রক্ষা করা না হলে “একই আঙিনায় মসজিদ-মন্দির” সম্প্রীতির ঐতিহ্য হারিয়ে যাবে’ জানিয়ে তিনি সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

উঠান সংকটে পড়া মসজিদ-মন্দির রক্ষায় সরকার ও সমাজের বিত্তশালী দানবীর মানুষদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে লালমনিরহাটবাসী।

Comments

The Daily Star  | English

Israel launches major attack on Iran: what we know so far

‘Nuclear plant, military sites’ hit; strikes likely killed Iranian chief of staff, top nuclear scientists; state of emergency declared in Israel, fearing Iranian retaliation

4h ago