‘বিএনপির প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে লক্ষাধিক মামলা’

[করোনা মহামারির কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি বা কার্যক্রম প্রায় অনুপস্থিত। তাই আমরা এমন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাক্ষাৎকার আপনাদের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছি, যারা সরকার নেতৃত্বাধীন জোটে নেই। সাক্ষাৎকারে তারা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন, নিজেদের দলের কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন।

আশা করি বিশ্লেষণমূলক সাক্ষাৎকারগুলো আপনাদের সমাজ ও রাজনীতি বিষয়ক চিন্তাজগতকে সমৃদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

আজ প্রকাশিত হলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকার। এরপর প্রকাশিত হবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাক্ষাৎকার। -সম্পাদক]

বলা হয় জন্মের পর সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। দলের নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামে অনেকগুলো মামলা। রায় হয়েছে, সাজা হয়েছে। কারাগারে ছিলেন, জামিনে মুক্ত হয়ে এখন গৃহ অন্তরীণ। শারীরিকভাবেও অসুস্থ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে। এমন কঠিন সময়ে দলকে সংগঠিত রাখার দায়িত্ব পড়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওপর। তিনি এখন দলটির মহাসচিব। মির্জা ফখরুল একজন সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত।

তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন মির্জা ফখরুল। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। ১৯৭২ সালে বিসিএস দিয়ে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। ঢাকা কলেজসহ অনেকগুলো কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরবর্তীতে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিএনপির রাজনীতি, নেতৃত্ব ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ৯ অক্টোবর রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।



দ্য ডেইলি স্টার: বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। দলটি এক ধরনের নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। দলের চেয়ারপারসন অসুস্থ, তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা। সাজা ভোগ করতে হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দেশের বাইরে। সিদ্ধান্তের জন্য আপনাদের অনেক সময় দেশের বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এগুলো বিএনপি সম্পর্কে বহুল আলোচিত বিষয়।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: বিএনপি দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের একটি। বিএনপির নেতৃত্ব সবসময়ই শক্তিশালী ছিল। এখন একটা সংকট নিঃসন্দেহে আছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়া মিথ্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গৃহ অন্তরীণ। তার কারাবাস প্রায় দুই বছরের মতো হয়ে গেল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান দলের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি বিদেশে আছেন, সেভাবেই দলকে পরিচালনা করছেন।

একটা সুবিধা হচ্ছে- আমরা যারা দলের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আছি, সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি। নির্বাচনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ২০ দলকে নিয়ে ঐক্য ফ্রন্ট তৈরি করেছি, নির্বাচনে গিয়েছি, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছি। এখনও আমরা সরকারের সমস্ত অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করছি। বিএনপির প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর নামে লক্ষাধিক মামলা।

ডেইলি স্টার: এক লাখের উপরে মামলায় ৩৫ লাখ আসামি? এটা কি রাজনৈতিক অভিযোগ না সত্যিই এতো মামলা?

মির্জা ফখরুল: আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের কাছে নথি আছে। কল্পিত বা রাজনৈতিক অভিযোগ নয়। আমাদের কাছে সব তথ্য প্রমাণ আছে। এফআইআরের কপি আছে। এটা ধারণারও বাইরে, একটি মামলায় আছে পাঁচ হাজার আসামি। ঘটনাই ঘটেনি, মামলা করা হয়েছে। পাঁচ হাজার আসামির মধ্যে নাম দিয়েছে এক থেকে দেড়শ জনের। সবগুলোই গৎ বাঁধা একই ছকে। বাকি সব অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে, সেখানে ধরে ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। একটু অনুসন্ধান করলেই এগুলো সব আপনাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। যদি দেখতে চান, আমাদের অফিসে এলে সমস্ত এফআইআরের কপি দেখাতে পারব। গণমাধ্যমকর্মীরা আমাদের অফিসে এসে যাচাই করে দেখতে পারেন, সত্য না মিথ্যা বলছি।



ডেইলি স্টার: আপনার নামে কি এখন মামলা আছে?

মির্জা ফখরুল: আমার নামে ৮৬টি মামলা আছে। তারমধ্যে ৩৫টি মামলা হাইকোর্ট থেকে স্টে করেছে। সেগুলো আবার চালু করতে সরকার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু মামলা স্টে করা আছে।

ডেইলি স্টার: আমরা জানি, মামলা করা হয় অপরাধ করলে। আপনার প্রধান অপরাধগুলো কী কী?

মির্জা ফখরুল: (হাসি) আপনারা কি এখনও ওই ধারণা নিয়ে আছেন! আমাদের বিরুদ্ধে করা হচ্ছে মনগড়া গায়েবি মামলা। সেখানে কোথাও নাশকতা করতে গেছি, কোথাও বোমা মেরেছি, কোথাও মিউনিসিপ্যালিটির ময়লা ফেলার ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বাস পুড়িয়েছি, সচিবালয়ে বোমা মেরেছি এই ধরনের অসংখ্য মামলা আছে। ম্যাডাম যখন গুলশানের কার্যালয়ে বন্দি, তখন তিনি একসঙ্গে পাঁচ জেলায় পেট্রোল বোমা মেরেছেন, এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

ডেইলি স্টার: বিএনপি নেতারা অপরাধ করেছে এবং বিএনপির প্রধান হিসেবে তিনি সম্ভবত এই মামলাগুলোতে হুকুমের আসামি।

মির্জা ফখরুল: অপরাধ বিএনপি নেতারা করেনি। তারা হয়তো মিছিল করেছে। মিছিল করা রাজনীতিতে অপরাধ নয়। তারপর আওয়ামী লীগ ক্যাডার দিয়ে বা এজেন্সি দিয়ে আগুন দিয়ে মামলা দিয়েছে। মামলায় তো আর হুকুমের আসামি বলা হয় না। বলা হয় এক নম্বর আসামি। কিছু দিন আগেই ম্যাডামের একটা মামলা চলার সময় হাইকোর্টের সামনে মুক্তিযোদ্ধা দলের একটা মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। সেখানে কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি, তারা মিছিল ভেঙ্গে দিয়েছে। ওই দিনই সন্ধ্যার সময় হাইকোর্টের সামনে দুটো পুরনো মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়ে মামলা করা হলো, তার এক নম্বর আসামি আমি।

ডেইলি স্টার: পুড়িয়ে দিলো মানে? কারা পুড়িয়ে দিলো? পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ তো বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

মির্জা ফখরুল: এখন পর্যন্ত আমরা যতটুকু জানি, এগুলো সাধারণত এজেন্সির লোকজন পুড়িয়ে দেয়। তারাই পোড়ায়, তারাই মামলা করে আমাদের বিরুদ্ধে। মামলায় আমি এক নম্বর আসামি এবং পরের দিন আমাকে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে হয়েছে। যেসময় পোড়ানো হয় সেই সময় আমাদের কোনো নেতাকর্মী সেখানে ছিলেন না।

ডেইলি স্টার: যখন পোড়ানো হয়েছে, সে সময় আপনি কোথায় ছিলেন?

মির্জা ফখরুল: আমি আমার বাসায় ছিলাম।

ডেইলি স্টার: তারপরও আপনি মামলার এক নম্বর আসামি?

মির্জা ফখরুল: আমি একা নই, আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির নয় জন আসামি।



ডেইলি স্টার: বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনারা জনজীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয়ে কথা বলেন না। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ে, আরও অনেক জাতীয় সংকট হয় কিন্তু বিএনপি সেসময় মাঠে থাকে না, কথা বলে না। 

মির্জা ফখরুল: এই ধরনের অপপ্রচার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে এই অপপ্রচারটা অনেক বেশি। কিন্তু, এগুলো সত্য নয়। বিএনপি অনেক চেষ্টা করে রাস্তায় দাঁড়াতে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই আমাদের দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। যখনি রাস্তায় দাঁড়িয়েছি জলকামান মেরে, পিটিয়ে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের নারীকর্মীদের পর্যন্ত নির্যাতন করা হয়েছে। প্রায় ৬০ জন নারীকে একদিনে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। আপনি বিশ্বাস করবেন না যে আমাদের ২৫০ থেকে ৩০০ নারী নেতাকর্মী তিন মাস থেকে চার মাস কারাগারে কাটিয়েছেন। সমাজের প্রতিষ্ঠিত নারী নেত্রী তারা। কত নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। পুলিশি নির্যাতন, গুম-খুনের আতঙ্ক নিয়ে নেতাকর্মীদের দিন কাটে। তারা এলাকায় থাকতে পারে না, বাড়িতে থাকতে পারে না।

ডেইলি স্টার: বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরেকটি কথা বলা হয়, সরকার তো চাইবেই যাতে বিরোধী দল মাঠে দাঁড়াতে পারে, আন্দোলন করতে না পারে। কিন্তু বিএনপি সরকারের চাওয়া অনুযায়ী চলছে।

মির্জা ফখরুল: এগুলোও হচ্ছে বিএনপির বিরুদ্ধে এক ধরনের অপপ্রচার। অপপ্রচার চালানো হচ্ছে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে। ওয়ান ইলেভেনের যে উদ্দেশ্য ছিল বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ার, দুই নেত্রীকে অপসারণের, রাজনৈতিক দল বিনষ্ট করার, এখনও সেই একই কাজ চলছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলো এখন আওয়ামী লীগই করছে। বিএনপি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল। এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় এই দলটির ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ৯০’ এর আন্দোলন, স্বৈরাচার অপসারণ, পরবর্তীকালে সংসদীয় গণতন্ত্র নিয়ে আসা, সবক্ষেত্রেই বিএনপির ভূমিকা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। সেই দলটিকে কীভাবে নেতৃত্বশূন্য করা যাবে, অস্তিত্ব শূন্য করা যাবে, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দিয়ে, গুম করে খুন করে দলটিকে অকার্যকর করা যাবে, সেটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে মাঠে নামলাম, প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছি। আমি অসুস্থ শরীর নিয়ে, এই করোনার মধ্যেই নিজেও গেছি। শুধু এই ক্ষেত্রে নয়, আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে কাজ করার চেষ্টা করেছি, কাজ করেছি এবং করে যাচ্ছি। এটা একটা প্রচারণা যে বিএনপি জনগণের সমস্যার সময় কথা বলে না, শুধু নিজেদের কথা বলে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই প্রচারণায় অনেকেই অংশ নেন, যেটা আমার কাছে একটু অবাক লাগে।

ডেইলি স্টার: অনেকেই বলতে কাদের বুঝাচ্ছেন?

মির্জা ফখরুল: সুশীল সমাজের কিছু কিছু মানুষও এই প্রচারণায় অংশ নেন। যখন আপনারা কলাম লেখেন তখন সেখানে দেখি। সেসব কথা তো সত্য না। আমরা তো সরকারের সঙ্গে আপোষ করে এখন পর্যন্ত কোনো কাজ করিনি।



ডেইলি স্টার: আপনার কথা থেকে দুটি প্রশ্ন আসে। একটি হচ্ছে- বিএনপিকে দুর্বল, ভঙ্গুর ও অকার্যকর করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এটা কী সরকার ইতোমধ্যে কিছুটা করতে পেরেছে? 

মির্জা ফখরুল: না, একটুও পারেনি। আপনি দেখেন, কত চেষ্টা হয়েছে, কত অপপ্রচার হয়েছে যে বিএনপি ভেঙ্গে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও একজনও বিএনপি ছেড়ে যাননি। দলের দু-একজন সিনিয়র নেতা পদত্যাগ করেছেন। সেটা তাদের ব্যক্তিগত কারণে হতেই পারে। কিন্তু গণহারে বড় কোনো ধস বিএনপিতে নামেনি এবং বিএনপি এক হয়ে আছে। এত অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করেও বিএনপি যে এখনও এক হয়ে আছে এটাই তো বিএনপির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। একটি রাজনৈতিক দল যখন এই ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়, তখন টিকে থাকাই বড় কৃতিত্ব বলে আমি মনে করি। যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাদের সেটাকে প্রমোট করা উচিত, সহযোগিতা করা উচিত। এখন আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, মিডিয়াতে অ্যান্টি বিএনপি একটা প্রচারণা চালু আছে। আজকেই কিছু সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলছিলাম। তারা বলছিলেন, এমন অবস্থা হয়েছে, আমরা হাউজে কোনো আলোচনাও করতে পারি না। জোরে কোনো কথা বলতে পারি না, নিচু স্বরে কথা বলি। কারণ মনে হয়, কোথায় কোন ডিভাইস লাগানো আছে, আমাদের কথা আবার বাইরে চলে যাবে। দেশের এই অবস্থাতে একটি বিরোধী দল টিকে থাকাটাই যে বড় বিষয় সেটা আপনিও হয়তো স্বীকার করবেন। তাকিয়ে দেখুন, যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী সরকার আছে, সবখানে একই রকম অবস্থা বিরাজ করছে। বাংলাদেশের মানুষ এটা আশা করেনি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের মানুষকে আজ সেই অবস্থা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ১৯৭১ সালে এবং তারও আগে ছাত্রজীবন থেকে আমরা শুধু গণতন্ত্রের জন্যই লড়াই করছি, আমাদের কথা বলার স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি, অধিকারের জন্য লড়াই করছি। এই লড়াই শেষ হচ্ছে না। এর শেষ চাই।

ডেইলি স্টার: আপনার কথা থেকেই দ্বিতীয় প্রশ্ন- বলছিলেন আপনারা আপোষ করেননি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিনে আপনাদের দু-একজন সিনিয়র নেতার নাম দিয়ে বলা হয়েছে, আমরা আপোষ করেছি বলেই নেত্রী জেল থেকে বের হতে পেরেছেন।

মির্জা ফখরুল: এর মধ্যে কোনো রকমের সত্যতা নেই। এটা বিএনপির বিরুদ্ধে আরও একটি অপপ্রচার, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র। বেগম জিয়া অসুস্থ। তিনি বাসায় এসেছেন তার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে। এখন তার শারীরিক যে অবস্থা, হাসপাতালেও তার কোনো চিকিৎসা হচ্ছিল না। তার নূন্যতম অধিকারটুকু তিনি পাচ্ছিলেন না।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে- দেশে আজ আওয়ামী লীগ সরকার যে অবস্থা তৈরি করেছে, গণতন্ত্রের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, মানুষের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করেছে, সে ব্যাপারে মিডিয়া সোচ্চার না কেন? কোনো পত্রিকায় তাদের সমালোচনা, তাদের কাজের সমালোচনা বা আওয়ামী লীগ সরকারের মূল আদর্শগত বিষয়গুলো যা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে সেই ব্যাপারে সমালোচনা দেখি না। কারণ, তারা ত্রাস সৃষ্টি করেছে, ভয়ের রাজত্ব তৈরি করেছে। এজন্য আর কেউ সাহস পাচ্ছে না কিছু বলতে।

ডেইলি স্টার: সংসদ সদস্য কম হলেও সংসদে যাওয়ার বিষয়ে আপনারা সিদ্ধান্ত নিলেন এবং আপনি নিজে সংসদে গেলেন না। এখানে দুটি প্রশ্ন- একটি হচ্ছে সংসদে না যাওয়া ভুল হলো কিনা?

মির্জা ফখরুল: সংসদে যাওয়াটা আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ আমরা গণতন্ত্রে ফেরার নূন্যতম যে সুযোগ, সেটা ব্যবহার করতে চেয়েছি। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি যে নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সরকার পরিবর্তন হতে পারে, অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে। আপনি জানেন যে, একটি ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে, একজন ডিকটেটরের সঙ্গে একটি ডেমোক্রেটিক দলের লড়াই এতো সহজ লড়াই না। এই লড়াইয়ে আমাদের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশায় সবারই সহযোগিতা করা উচিত যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, আইনের শাসনে বিশ্বাস করেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন। সারাক্ষণ সমালোচনা, সারাক্ষণ আমাদের ভুল-ত্রুটি ধরা কোন দিক দিয়ে গণতন্ত্রের আন্দোলনকে সমর্থন করা আমি জানি না। আমরা সংসদে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেটা ছিল গণতন্ত্রের দৃষ্টিকোণ থেকে। আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার নুন্যতম সুযোগটাও নিতে চেয়েছিলাম।

আমি যাইনি আমার দলকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখার জন্য। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশে নেগেটিভ পলিটিক্সের একটি সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। বলতে পারেন, আমি চেষ্টা করেছি সেখান থেকে একটা সেতুবন্ধনে আনার জন্য। আমি মনে করি সেখানে আমরা সফল হয়েছি।



ডেইলি স্টার: যে বিবেচনায় সংসদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটি কি সঠিক ছিল? বেশ কিছুদিন সংসদে থাকার অভিজ্ঞতা কী বলে?

মির্জা ফখরুল: নুন্যতম যে সুযোগটুকু আমাদের পাওয়ার কথা, সেটুকুও পাই না। সংসদে তো আর আপনি ইচ্ছে করলেই সব কিছু করতে পারবেন না। সেখানে নির্দিষ্ট বিধিবিধান আছে। সেখানে বিরোধীদলের যে নূন্যতম প্রাপ্য সেটাও দেওয়া হয় না। সেখানে চরম ডিকটেটরশিপ। স্পিকার সেখানে নিজেই আমাদের দলীয় সদস্যদের কথাই বলতে দেন না। আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে- আমরা কথা বললেও সেগুলো ঠিক মতো প্রচার হয় না, পত্রপত্রিকাগুলো আমাদের তিন-চার নম্বর পাতায় ফেলে দিয়েছে। দেশে যখন ডিকটেটরশিপ থাকে তখন দেশের পত্রপত্রিকাগুলোর টিকে থাকার জন্যই এই কম্প্রোমাইজগুলো করতে হয়। সেটা আমরা বুঝি। এজন্যই ব্যক্তিগতভাবে আমি কোনো পত্রিকার বিরুদ্ধে বলি না। কিন্তু এটাও সত্যি, মিডিয়া উল্টো আমাদেরকেই আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করায়।

ডেইলি স্টার: নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ আপনারা প্রকাশ্যে এবং বারবার করেছেন। কিন্তু তারপরও উপনির্বাচন হলে সেখানে অংশ নিতে যাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন ঠিক মতো নির্বাচন করছে না, রাতে ভোট হয়, কারচুপি হয় ইত্যাদি আপনাদের অভিযোগ। এমন অভিযোগের পর নির্বাচনে অংশ নেওয়া কি আপনাদের স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নয়?

মির্জা ফখরুল: না, স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত নয়। কারণ এর বিকল্প কী? বিকল্প হচ্ছে- নির্বাচন প্রতিরোধ করা, ঠেকানো, সহিংসতা তৈরি করা, মারামারি করা। আমরা সহিংসতার রাজনীতি বিশ্বাস করি না। এমন অভিজ্ঞতা তো এর আগে বহু হয়েছে। সরকার নিজে সহিংসতা করে আমাদের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছে। আমরা সেজন্য চাচ্ছি, নূন্যতম গণতান্ত্রিক যে সুযোগটুকু আছে, সেটা আমরা ব্যবহার করব। একটা নির্বাচনে আমরা যখন অংশগ্রহণ করি তখন কিছুদিনের জন্য হলেও কথা বলার সুযোগ পাই। পাবনার উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনের তিন দিন আগ পর্যন্ত খুব সুন্দরভাবে সব করতে পেরেছেন। তারপর থেকেই সেই পুরনো খেলা, পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের নিজস্ব অফিসগুলোতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বিএনপির নেতাদের নাম দিয়েছে। নিজেরা বোমা ফুটিয়ে সেটা নিয়ে মামলা করে, বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাদের (বিএনপি নেতাকর্মীদের) এলাকা ছাড়া করে দিয়েছে। এটার ওপর কোনো রিপোর্টও সেভাবে কোনো পত্রিকায় আসেনি।

ডেইলি স্টার: দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল খুব জরুরি। এটা আওয়ামী লীগের নেতা বা মন্ত্রীরাও বলেন। তারা এটাও বলেন, বিএনপির ক্ষমতা নেই, বিএনপি আন্দোলন করতে পারে না, সংগ্রাম করতে পারে না, রাস্তায় নামতে পারে না। 

মির্জা ফখরুল: তারা এটা বলেন মানুষকে বোকা বানানোর জন্য, মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য। তাদের প্রপাগান্ডা মেকানিজম অনেক শক্তিশালী, দেশের জাতীয় দৈনিক বা জাতীয় মিডিয়াগুলোসহ। মিডিয়া তাদের কথাগুলোকে এক নম্বরে প্রচার করতে থাকে, আর আমরা কিছু বললে সেটা প্রচারই পায় না। কোন বিরোধীদলকে আমাদের মিডিয়া এখন গুরুত্ব দেয়? তাদের খবর সেভাবে ছাপে? আমি মনে করি ডিকটেটরশিপের এটা একটি বড় সাফল্য যে তারা পুরো সমাজটাকে একটি ভয়, ত্রাসের অধীনে নিয়ে এসেছে। তখন সবাই ভাবে যে এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে। কারণ, প্রত্যেকেরই ছেলে-মেয়ে আছে, পরিবার আছে। এখন যা হচ্ছে তা আমরা বিশ্বাস করতে পারি না। আমরা সামরিক আইনও দেখেছি, কিন্তু এরকম দমবন্ধ করা পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।

ডেইলি স্টার:  কলেজের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র এবং সরকারবিরোধী কোনো পোস্ট করতে, লাইক দিতে বা শেয়ার করতে পারবেন না। সেটা কি আপনি দেখেছেন?

মির্জা ফখরুল: জনবিচ্ছিন্ন কর্তৃত্ববাদী সরকার সব সময় ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে থাকে। সে কারণে মানুষকে কথা বলতে দিতে চায় না। কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মত প্রকাশ করতে পারবে না, এই নির্দেশনার কারণ কী? কারণ সরকার জানে তাদের অবস্থান সরকারের পক্ষে নেই।

এটি নতুন না। সংবিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনটা অনুচ্ছেদ আছে, যার বিরুদ্ধে আপনি একটিও কথা বলতে পারবেন না। আপনার কথার মধ্যে যদি এমন কিছু পাওয়া যায় যে আপনি তার বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাহলে আপনার নামে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হবে। এভাবে আস্তে আস্তে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো প্রত্যেকটা বিধি মানুষের কথা বলার বা ভিন্ন মত পোষণ করার যে নূন্যতম সুযোগ সেটি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। দেখেন এটা নিয়ে কোনো হইচই পর্যন্ত হচ্ছে না। কলেজের ছেলে-মেয়েরা কোথাও যদি তাদের মতামত প্রকাশ করতে চায় যেখানে বাধা দেওয়া একটা ভয়াবহ ঘটনা।



ডেইলি স্টার: সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে ‘উন্নয়ন’ হচ্ছে। ‘উন্নয়নে’র সুফল পেয়ে মানুষ রাস্তায় নামছে না, মানুষ ‘সরকারের পক্ষে’।

মির্জা ফখরুল: এটা তো তাদের সবসময়ের মতো মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা। এভাবে কিন্তু মানুষকে বোঝানো যায় না। একজন মানুষকে আপনি যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে তারা বলবে, কবে পরিবর্তন হবে? এটা রিকশাওয়ালা পর্যন্ত বলে। তারা পরিবর্তন চায়। আমার একটা অভিজ্ঞতা বলি। আমার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্ত্রী ড. ফিরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি গ্রুপে সদস্য হয়েছেন। তাকে ফুলের তোড়া পাঠানোর জন্য একটি ফুলের দোকানে যাই। সেখানে দোকানদার আমাকে বলেছেন, স্যার আমরা কি আর মুক্ত হতে পারব না? এভাবে আর কতদিন থাকব? এই আকুতি আর আক্ষেপ মানুষের মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, সে আমার কাছ থেকে কিছুতেই ফুলের দামটা নিলোই না। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সারা দেশের অবস্থা। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, পরবর্তীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, আমরা এমন দেশ চাইনি। এখানে একটি গণতন্ত্রের সংস্কৃতি তৈরি হোক, গণতন্ত্রের চর্চা  হোক, একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, মানুষ ভোট দিয়ে যেন তাদের সরকার নির্বাচন করতে পারে সে ব্যবস্থা হোক। সেটাই আমরা করতে পারলাম না। শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য এই বিষয়গুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, ইনস্টিটিউশনগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। আমার নিজেকে মাঝে মাঝে খুব অপরাধী মনে হয় যে আমরা কিছুই করতে পারছি না। একটা পুরো জাতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আজ যে এত নারী নির্যাতন, ধর্ষণ হচ্ছে সেটা তো এই সিস্টেমের কারণে। এখানে কোনো সুশাসন নেই, পুলিশ তার ইচ্ছে মতো কাজ করে।

ডেইলি স্টার: সরকার তো বলছে, যেখানে যা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেটা দুর্নীতি হোক আর ধর্ষণ হোক।

মির্জা ফখরুল: এগুলো তো একেবারেই অসত্য কথা। ধর্ষণের প্রায় প্রত্যেকটা ঘটনা ঘটছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা। চিন্তা করতে পারেন যে ফরিদপুরের মতো জায়গায় ছাত্রলীগের সভাপতি দুই হাজার কোটি টাকা শুধু পাচারই করেছে। তাহলে অবৈধভাবে কত টাকা তারা লুটপাট করেছে! স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন ড্রাইভারের শত কোটি টাকার সম্পদ। এটা দেশের ‘উন্নয়নের’ চিত্র? স্বাস্থ্য খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির সংবাদ। দেশে পদ্মা সেতু হচ্ছে। এটা ১০ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প ছিল, যেটা ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প হয়ে গেছে। প্রত্যেকটা জায়গায় এটা হচ্ছে। আমি তো প্রায়ই বলি, এসব হচ্ছে লুটপাটের জন্য মেগা প্রকল্প।

সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? একটা পত্রিকায় দেখলাম একজন বলেছেন, এক বেলা খেয়ে আছি, আর খেতে পাই না। কী করে বাঁচব জানি না। ৮০ হাজার টাকা ঋণ করে কেনা রিকশা সিটি করপোরেশন নিয়ে গেছে। রিকশার মালিক বলছে, এখন আমি কী করব? আমার পরিবার কীভাবে চলবে? এগুলো পত্রিকাতেই দেখেছি।

দেশের ইনফরমাল সেক্টর একেবারেই ধ্বংস হয়ে গেছে। করোনা আসার পর থেকে এর অবস্থা একেবারে শেষ হয়ে গেছে। গার্মেন্টসের বড় বড় যারা তারা কোনো রকমে টিকে আছেন। অত্যন্ত বড় প্রভাবশালী যারা সরকারের সঙ্গে জড়িত, তাদের হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ রিশিডিউল হয়। আর ছোট ছোট যারা, তারা ঋণ পায় না অথবা তাদের কিস্তি বাকি পড়লে জেলে নেওয়া হয়। এটাই দেশের অবস্থা। এর পেছনে অনেক কিছু আছে। সরকার কাদের সঙ্গে আঁতাত করছে, কাদের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছে সেটা আমরা তো ভালো করেই বুঝি। না বোঝার তো কোনো কারণ নেই।

ডেইলি স্টার: আপনি কি আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক রাজনীতির কথা বলছেন?

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ।

ডেইলি স্টার: সেই অভিযোগ তো বিএনপির বিরুদ্ধেও আছে।

মির্জা ফখরুল: বিএনপি তো যতটুকু পেরেছে সেগুলো বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। আপনি জানেন যে আমরা অনেকগুলো প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছিলাম কঠিন শর্তে ঋণ নেব না বলে। বিএনপির আমলে দেশের অবস্থা অনেক ভালো ছিল। ব্যাংকের এমন লুটপাটের অবস্থা ছিল না। দলের অনেকের চাপ থাকার পরেও সাইফুর রহমান সাহেব নতুন ব্যাংক করার অনুমতি দেননি। এটা ফ্যাক্ট। আমরা দেশের অর্থনীতির সংস্কার নিয়ে এসেছিলাম। দেশের গার্মেন্টস, রেমিট্যান্সের যে অবস্থান সেগুলো আমরাই সূচনা করেছি, আমরাই প্রমোট করেছি। সেগুলোর তুলনা দিতে চাই না। আরও ভালো দেশ গড়বে বলে যাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল তারা তা পারেনি। ১০ টাকা কেজি চাল দেবে বলে ওয়াদা করেছিল। ১০ টাকা কেজি চাল যারা কিনতে যাচ্ছে, তাদের ৫০০ টাকা করে ঘুষ দিতে হচ্ছে।

ডেইলি স্টার: একটা সময় বিএনপিকে ভারতবিরোধী রাজনীতিতে সোচ্চার দেখা যেত। মাঝে নিরব থাকলেও, এখন আবার কিছু কিছু ভারতবিরোধী কথা বলতে শোনা যায়। চীনের প্রতি আপনারা অনেক নমণীয়। কারণ কী?

মির্জা ফখরুল: বিএনপি ভারত বা অন্য কোনো দেশ বিরোধীতার বা কোনো দেশের পক্ষে রাজনীতি করে না। কখনো করেনি। বিএনপি সব সময় বাংলাদেশের পক্ষে রাজনীতি করে। ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী। ভারতের সঙ্গে আমাদের যে অমীমাংসিত বিষয় আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা সব সময় কথা বলেছি। কখনো নিরব থাকিনি। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বাংলাদেশ পাচ্ছে না। তা নিয়ে আমরা সব সময় কথা বলেছি। সীমান্তে বাংলাদেশিদের হত্যা নিয়ে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত আছে। ভারতকে অবিলম্বে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে। গুলি করে সীমান্তে মানুষ হত্যা জঘন্য অপরাধ। অত্যন্ত অমানবিক। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান।

চীন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক শক্তি। সেই শক্তির সহায়তা বাংলাদেশের দরকার। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি চীনের মতো একটি অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখার নীতিতে বিশ্বাস করে। অমীমাংসিত বা বাংলাদেশের জন্যে নায্য বিষয়ে কথা বলা মানে ভারতবিরোধীতা নয়। বিএনপি নায্যতার ভিত্তিতে চীন, ভারত সবার সঙ্গে সুসম্পর্কে বিশ্বাসী।



ডেইলি স্টার: চীন আপনাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠাল, আবার তা প্রত্যাহার করে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলো বলে জানা গেল। আসলে কী ঘটেছিল, একটু পরিস্কার করে বলবেন?

মির্জা ফখরুল: চীনের পক্ষ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে ফুলের তোড়া পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। এটা হলো সবচেয়ে বড় সত্য। শুভেচ্ছা প্রত্যাহার করা হয়েছে, দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমরা জানি না। শুভেচ্ছা যেহেতু আমাদের নেত্রীকে জানানো হয়েছে, দুঃখ প্রকাশ করলে তার কাছে বা তাকে তা জানানোর কথা। কিন্তু এমন কোনো কিছু জানানো হয়নি। চীনের দূতাবাসের পক্ষ থেকে এমন কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। মৌখিকভাবেও কিছু বলেনি। এমন একটি প্রচারণা-প্রপাগান্ডা চালাতে দেখা গেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। এটা একটা অসত্য প্রপাগান্ডা। চীন এত খেলো কূটনীতি করে না যে, শুভেচ্ছা জানিয়ে তা আবার প্রত্যাহার করবে, দুঃখ প্রকাশ করবে। এটা আওয়ামী প্রপাগান্ডা ছাড়া আর কিছু নয়।

ডেইলি স্টার: বেশ আশা জাগিয়ে ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করেছিলেন নির্বাচনের জন্য। নির্বাচনে অংশ নিলেন। এখনও কী সেই ঐক্য ফ্রন্ট কার্যকর আছে, টিকে আছে?

মির্জা ফখরুল: আমাদের ঐক্য ফ্রন্ট এখনও টিকে আছে, আমরা ভাঙ্গিনি। সব সময় সব কিছু নানা কারণে দৃশ্যমান থাকে না। সরকারের দমনপীড়নে আমরা রাজনীতি সঠিকভাবে করতে পারছি না। ঐক্য ফ্রন্টে ঐক্য আছে। 

ডেইলি স্টার: বেগম খালেদা জিয়া ঐক্যফ্রন্ট গঠন ও কার্যক্রমে খুশি নন, উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এমন সংবাদও তো জানা গেছে।

মির্জা ফখরুল: এই কথাটি একেবারেই সঠিক নয়। বেগম খালেদা জিয়া ঐক্য প্রক্রিয়া অটুট রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পরও তিনি জাতীয় ঐক্যের পরিধি আরও বৃদ্ধির তাগিদ দিয়েছেন। তিনি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে বারবার দেশ পরিচালনা করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের অপরিহার্যতা তুলে ধরেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন।

ডেইলি স্টার: জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য কি আছে?

মির্জা ফখরুল: জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য আছে। যেমন ছিল তেমনই আছে। জামায়াতের সঙ্গে আমরা কর্মসূচি পালন করিনি দীর্ঘদিন। ২০১৫ সালের পর থেকে আমরা এক সঙ্গে কোনো কর্মসূচি পালন করিনি।

ডেইলি স্টার: সেক্ষেত্রে কি বলা যায় ঐক্য যেমন ছিল তেমনই আছে?

মির্জা ফখরুল: জামায়াতসহ ২০ দলের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তা তো নষ্ট হয়নি। দুএকটি দল বেরিয়ে গেছে। জামায়াত তো ২০ দলে আছে।

ডেইলি স্টার: বলা হয়ে থাকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুতে জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের দূরত্ব তৈরি হয়েছে।

মির্জা ফখরুল: একটি জোটে রাজনীতি নিয়ে মত-দ্বিমত থাকে। তেমন আলোচনা, একমত-দ্বিমত ২০ দলীয় জোটেও থাকতে পারে। তেমন হতেই পারে। কিন্তু দূরত্ব তৈরি হয়েছে, এটা ঠিক না।

ডেইলি স্টার: ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এত বছর পরে হলো, অথচ বিএনপির অবস্থান থাকলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই কি আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে অবস্থান নিতে পারলেন না?

মির্জা ফখরুল: প্রথমত এই কথা ঠিক নয় যে বিএনপির অবস্থান ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে সব সময়ই ছিলাম, এখনও আছি। বিচারের মান নিয়ে আমরা কথা বলেছি। বিচার প্রক্রিয়ার যেসব ত্রুটি ছিল আমরা তার বিরোধিতা করেছি। বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হোক, আমরা সেই দাবি জানিয়েছি। মনে রাখতে হবে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেক্টর কমান্ডার, বীর উত্তম। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি। বহু রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা আছেন বিএনপিতে। সেই দল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করতে পারে না।

ডেইলি স্টার: কিন্তু আপনাদের তো কখনও যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়নি।

মির্জা ফখরুল:  এই অভিযোগটি ঠিক নয়। আমরা যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে রাজনীতি করতে চাইনি। আওয়ামী লীগ বিচার নিয়ে রাজনীতি করেছে। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চেয়েছি, নায্য বিচার চেয়েছি।

ডেইলি স্টার: কিন্তু এটাই তো সবচেয়ে বড় সত্য যে আওয়ামী লীগ সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছে।

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগ বিচার থেকে রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার মানসিকতায় আচ্ছন্ন ছিল বিধায়, তারা বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করে ফেলেছে। আমরা সুষ্ঠু নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিচার হোক, সেটা চেয়েছি। ন্যায় বিচার চেয়েছি। ন্যায় বিচারের দাবি মানে বিচারের বিরোধীতা নয়। এটাও একটা আওয়ামী প্রপাগান্ডা যে, বিএনপি যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধীতা করেছে।

ডেইলি স্টার: জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির যে ঐক্য বা সম্পর্ক, আপনাদের কোনো পর্যালোচনা আছে যে, বিএনপি লাভবান হয়েছে না ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? বলা হয়ে থাকে জামায়াতের দায়ভার নিয়ে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপনি কি একমত?

মির্জা ফখরুল: না, একমত হওয়ার কোনো কারণ নেই, সুযোগও নেই। নিশ্চয়ই আমাদের পর্যালোচনা আছে। শুধু জামায়াত নয়, রাজনীতির সব বিষয় নিয়েই আমাদের পর্যালোচনা আছে।

ডেইলি স্টার: জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কে বিএনপির লাভ হয়েছে না ক্ষতি হয়েছে?

মির্জা ফখরুল: রাজনীতির লাভ-ক্ষতির হিসেব কীভাবে করবেন? বিএনপির জনপ্রিয়তা তো কমেনি, বেড়েছে। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে। একারণেই বিএনপিকে এতো ভয়। আওয়ামী লীগ জানে ভোট কারচুপি করেও বিএনপিকে হারাতে পারবে না। এজন্যে দিনে কারচুপি করারও সাহস হারিয়ে রাতে ব্যালট বাক্স ভরেছে।

ডেইলি স্টার: শেষ করি শুরুর প্রশ্নের সূত্র ধরে। আপনি বললেন, যেটা চাইনি সেটাই হয়ে গেছে, যেটা চাইছি সেটা করতে পারছি না। এখন বিএনপিকে যদি কিছু করতে হয়, তাহলে বিএনপিতে যে প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব আছে, অনেক সিদ্ধান্তের জন্যে দেশের বাইরে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়, সেই প্রক্রিয়াতেই হবে? নাকি নেতৃত্ব আবার গোছাতে হবে, পুনর্গঠন করতে হবে?

মির্জা ফখরুল: দেশের বাইরে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে, এটা কেন মনে করছেন আপনারা? ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। দল পরিচালনায় বিএনপি নেতৃবৃন্দ সংঘবদ্ধ। সেখানে কোনো দ্বন্দ্ব নেই, বিরোধ নেই। দলের চেয়ারপারসন যেখানেই থাকুন তার সঙ্গে কথা হবে, আলোচনা হবে। এটা তো একটি রাজনৈতিক দলের ইতিবাচক দিক। আসলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় সরকার ভীত। তার জনপ্রিয়তায় সরকার আতঙ্কে ভোগে। একারণে দলের ভেতরে বাইরে তাকে বিতর্কিত করার অপকৌশলের অংশ হিসেবে এমন প্রচারণা চালানো হয়। যার কোনো ভিত্তি নেই। দল পরিচালনার বিষয়ে দলের চেয়ারপারসনের নির্দেশনা বা তার সঙ্গে আলোচনা বা তার মতামত নেওয়াকে, কোনো বিবেচনাতেই দেশের বাইরে তাকিয়ে থাকা বলে না।

দেশের বাইরে তাকিয়ে থেকে তো কোনো দিন কিছু হয়নি, হবেও না। আমরা দেশের মানুষের দিকেই তাকিয়ে আছি। আমরা আমাদের দলকে আরও সংগঠিত করার চেষ্টা করছি, পুনর্গঠিত করার চেষ্টা করছি। সমস্ত বাধা বিপত্তি ডিঙ্গিয়ে, প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করে, চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে আমরা কাজ করছি। প্রচণ্ড চ্যালেঞ্জ আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছি। এত কষ্ট করেও আমাদের নেতা কর্মীরা কাজ করছেন। কেউ কিন্তু দল ছেড়ে যাননি। আমি অনুরোধ করব, আপনি একদিন নিম্ন আদালতে যান। দেখবেন সেখানে বিএনপি ছাড়া আর কেউ নেই। হাজার হাজার মানুষ সব বিএনপির। তারা সবাই ভালো মানুষ এবং সমাজের সুস্থধারার মানুষ। তারা সবাই মামলার আসামি। তাদের হাজিরা দিতে হয়। আমাকে সপ্তাহে তিনবার হাজিরা দিতে হয়।

ডেইলি স্টার: মহাসচিব হিসেবে কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করছেন। আপনি যে প্রতিকূলতার কথা বললেন, তার মধ্যে আপনার প্রতি যে বিশাল দায়িত্ব ছিল সেই দায়িত্ব কতটা পালন করতে পারলেন?

মির্জা ফখরুল: আমরা চেষ্টা করছি। আমি তো আগেই বলেছি, এখানে দায়িত্ব পালনের যে রাস্তা সেটি প্রচণ্ডভাবে কণ্টকাকীর্ণ। তারপরও আমরা এর মধ্যেই এগোচ্ছি। আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন বলে আমি যেটা মনে করি সেটা হচ্ছে- আমাদের নেত্রী জেলে চলে যাওয়ার পরেও আমরা নির্বাচনে অংশ নিয়েছি, ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়েছি, ঐক্য ফ্রন্ট তৈরি করেছি, ২০ দল করেছি। একসঙ্গে দুটো বিপরীতমুখী ফ্রন্টকে নিয়ে আমরা নির্বাচনে গেছি। সামনের দিকে এটার প্রয়োজন আরও বেশি বলে আমি মনে করি। এখানে একটি জাতীয় ঐক্য খুব বেশি প্রয়োজন, যার মাধ্যমে আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করছি।

ডেইলি স্টার: নির্বাচনে অংশ নেওয়াকে আপনি বড় করে দেখছেন। কিন্তু ফলাফল?

মির্জা ফখরুল: আমরা নির্বচনে অংশ নিয়েছি বলেই বিনা ভোটের সরকারের আসল চরিত্র উম্মোচন হয়েছে। দেশের মানুষ দেখেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন প্রশাসনকে দিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার কীভাবে হরণ করেছে। দিনের ভোট রাতে হতে দেখেছে দেশের মানুষ। দিনের ভোট রাতে বাক্সে ভরার নজীরবিহীন প্রতারণা দেখেছে মানুষ। ভোটার সংখ্যার চেয়ে বেশি ভোটার ভোট দিয়েছে, মৃত মানুষ ভোট দিয়েছে, প্রবাসে থেকে ভোট দিয়েছে! নির্বাচনে অংশ নিয়েছি বলেই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এসব অপরাধ-অনৈতিকতা জনমানুষের সামনে উন্মুক্ত হয়েছে।

গুম করে খুন করে, গায়েবি মামলা দিয়ে, নিপীড়ন-নির্যাতন করে রাতে ভোট ডাকাতির সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে। এই সরকারের পতন হবেই। এভাবে অত্যাচার করে আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।

Comments

The Daily Star  | English

Inside the lives of ride-sharing drivers

On the bustling streets of Dhaka, where traffic moves like molasses and the air hangs heavy with exhaust fumes, a new breed of urban warriors has emerged.

16h ago