নতুন নিয়মে চূড়ান্ত বিতর্কে সংযত ট্রাম্প-বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত বিতর্কে অংশ নিয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। প্রথম বিতর্কের তুলনায় এবার দুই জনই ঠাণ্ডা মেজাজে করোনাভাইরাস, জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসনসহ নানা ইস্যুতে বাকবিতণ্ডায় জড়ান।
বিবিসি জানায়, প্রার্থীদের বাধাহীনভাবে কথা বলতে দিতে এবারের বিতর্কে মাইক্রোফোন বন্ধ রাখার নতুন নিয়ম কাজে এসেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের করোনা মোকাবিলার ব্যর্থতা নিয়ে এবারও তীব্র সমালোচনা করেছেন জো বাইডেন।
বাইডেন বলেন, ‘দেশের দুই লাখ মানুষের মৃত্যুর দায়িত্ব যিনি নিতে পারেন না, তার দেশের প্রেসিডেন্ট থাকার অধিকার নেই।’
ট্রাম্পের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে এত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাশাপাশি মহামারি মোকাবিলা নিজের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরেন বাইডেন।
অন্যদিকে, বর্তমানে করোনাকে নিয়েই আমেরিকানরা বাঁচতে শিখেছে বলে মন্তব্য করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তিনি জানান, দেশের অর্থনীতি ধসিয়ে সাধারণ মানুষকে পথে বসাতে চান না। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আবারও লকডাউনের পক্ষে নন।
করোনাভাইরাস ইস্যুতে ট্রাম্প নিজের সংক্রমিত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
আসছে শীতে করোনার সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে কি না, এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প জানান, কিছু জায়গায় সংক্রমণ বাড়তে পারে। কিন্তু, করোনা শিগগির চলে যাবে।
শীতে করোনার সংক্রমণ নিয়ে বাইডেনও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। উত্তরে ট্রাম্প জানান, ৯৯ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছেন।
করোনার পরপরই দেশের জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিতর্কমঞ্চে উঠে। বাইডেন বলেন, দেশের রাজনীতি ও যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে, তাদের চড়া মূল্য দিতে হবে। তিনি চীনে ট্রাম্পের ব্যবসা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্পের কর পরিশোধ না করার সমালোচনাও করেন তিনি।
অন্যদিকে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, রাশিয়া থেকে সুবিধা নিয়েছেন জো বাইডেন।
ট্রাম্প দাবি করেন, রাশিয়াসহ অন্য সব দেশের ওপর তিনি যথেষ্ট কঠোর।
কর পরিশোধ না করার অভিযোগে ট্রাম্প জানান, তিনি আইআরএস অডিট করার পর ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ করবেন। এ ছাড়াও, ইউক্রেনে বাইডেনের ছেলের ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।
বাইডেন বলেন, এ বিতর্ক ট্রাম্প বা তার পরিবারের নয়। এ বিতর্ক আমেরিকার জনগণের স্বার্থ নিয়ে।
বর্ণবাদ প্রসঙ্গে বাইডেন এটি নির্মূলের জন্য সব ব্যবস্থা নেবেন জানিয়ে ট্রাম্পকে আক্রমণ করে বলেন, আধুনিক যুগের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বর্ণবাদী প্রেসিডেন্ট হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প জানান, এই কক্ষে এখন যারা অবস্থান করছেন, তাদের মধ্যে সব কম বর্ণবাদী মানুষটি হলেন তিনি।
ওবামা কেয়ার বাতিল করে আরেকটি ভালো স্বাস্থ্যসেবা আইন চালু করার পরিকল্পনার কথা জানান ট্রাম্প। অন্যদিকে, ওবামা কেয়ারের সংস্কার করার পরিকল্পনার কথা জানান জো বাইডেন। এ ছাড়াও উত্তর কোরিয়া ও জলবায়ু ইস্যুতেও তর্কে জড়ান এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।
বরাবরের মতো জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিকে খাটো করে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি ক্ষমতায় আসার পর ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
বিতর্কে ট্রাম্প বলেন, ‘চীনকে দেখুন তাদের বায়ু কতটা দূষিত, রাশিয়াকে দেখুন, ভারতকে দেখুন। তাদের বাতাসও দূষণে ভরা। প্যারিস চুক্তির কারণে আমি লাখো মানুষকে চাকরিচ্যুত হতে দিতে পারি না। কোম্পানিগুলোকে শেষ হতে দিতে দিতে পারি না।’
যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিন কোটির বেশি মার্কিন নাগরিক ইতোমধ্যেই তাদের ভোট দিয়েছেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠানে চরম বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তৈরি হয়।
বিবিসি জানায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে এটি ছিল হোয়াইট হাউসের সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও আক্রমণাত্মক বিতর্কের একটি।
চূড়ান্ত বিতর্কে শৃঙ্খলা রাখতে আয়োজকরা বক্তব্যের সময় কোনো প্রার্থী অন্য প্রার্থীকে কথা বলায় বাধা দিলে তার মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়ার নিয়ম থাকায় এদিন মঞ্চ বেশ শান্ত ছিল বলে জানায় মার্কিন গণমাধ্যমগুলো।
আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ঘিরে তিনটি নির্বাচনী বিতর্ক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেট কমিশন স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনা করে দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠান বাতিল করে।
আয়োজকরা জানান, করোনা আক্রান্ত ট্রাম্প ভার্চুয়ালি বির্তকে অংশ নিতে রাজি না হওয়ায় ১৫ অক্টোবরের বিতর্ক বাতিল করা হয়েছে।
ট্রাম্পের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে ভার্চুয়ালি বির্তকের আয়োজন করার পরিকল্পনা করলেও ট্রাম্প তা প্রত্যাখ্যান করেন। জো বাইডেনকে সুবিধা দিতে ভার্চুয়াল বিতর্কের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প।
Comments