কাজ না করেই বিল?

বিল দেওয়া হয়ে গেছে অথচ যে কাজের জন্য বিল সেই কাজটিই করা হয়নি। এটা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়।

বিল দেওয়া হয়ে গেছে অথচ যে কাজের জন্য বিল সেই কাজটিই করা হয়নি। এটা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বলে মনে হয়।

মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে ২০১৮ সালে একটি সচেতনতামূলক ভয়েস ম্যাসেজ প্রচারের সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। যার বাজেট ছিল ৯৯ লাখ টাকা।

অধিদপ্তরের তথ্য, শিক্ষা ও উদ্বুদ্ধকরণ (আইইএম) ইউনিটকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভয়েস মেসেজ প্রস্তুত করে একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে তা এক কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।

আইইএম ইউনিট এই কাজের জন্য কবির এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করে। ওই বছরের ৬ এপ্রিল তাদের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। যার একটি অনুলিপি দ্য ডেইলি স্টারের কাছে আছে।

কার্যাদেশ দেওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছে এমন মেসেজ পাঠানো হয়নি। এমনকি কোনো মেসেজ তৈরিই করা হয়নি। তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক কবির আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে কবির এন্টারপ্রাইজকে পুরো অর্থই পরিশোধ করে দেওয়া হয়েছে।

কবির সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীর ভয়েস মেসেজ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে আমাকে সেটা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি এখনো সেটা পাইনি।’

এমন ঘটনা এই দপ্তরে এটিই প্রথম নয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সারা দেশে ৪৮৬টি কর্মশালা আয়োজন করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আইইএম ইউনিটকে। এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় সাত কোটি টাকা। অধিদপ্তরে ভেতরেই অভিযোগ ওঠে মিথ্যা ও বানোয়াট বিল জমা দিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।

এসব অভিযোগ ওঠার পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিকেল শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব শাব্বীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বিস্তারিত না জানিয়ে শাব্বীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা প্রায় এক মাস আগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছি। তদন্তে জানতে পেরেছি যে কয়েকটি অভিযোগ সত্য।’

এই প্রকল্পের আওতাধীন মৌলভীবাজারে হওয়া একটি কর্মশালা সম্পর্কিত বেশ কিছু নথি পেয়েছে দ্য ডেইলি স্টার।

নথি অনুসারে, কর্মশালার জন্য খাবার কেনা হয়েছিল স্টেশন রোডের সাম্পান রেস্তোরাঁ অ্যান্ড ক্যাটারিং থেকে এবং স্টেশনারি আইটেম কেনা হয়েছিল আঁচল পেপার, স্টেশনারি অ্যান্ড লাইব্রেরি থেকে।

বিলগুলোর সত্যতা যাচাই করতে তদন্ত কমিটির প্রশ্নের জবাবে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মৌলভীবাজার ইউনিট ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর লেখেন, উল্লিখিত ঠিকানায় এই দোকানগুলোর অস্তিত্ব তারা খুঁজে পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘মিথ্যা ও ভুয়া ভাউচার আর নথি জমা দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল।’

মৌলভীবাজার কর্মশালার বিলে লেখা হয়েছিল যে, একটি বলপেনের দাম ৮০ টাকা, একটি লেখার প্যাডের দাম ৮০ টাকা এবং একটি ব্যাগের দাম এক হাজার ৫০ টাকা। অধিদপ্তরের কর্মকর্তা জানান, তদন্তে একটি ব্যাগের দাম পাওয়া গেছে ৩৭০ টাকা।

আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ মূলত আইইএমের পরিচালক ডা. আশরাফুন্নেছার বিরুদ্ধে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর কর্মশালা, সেমিনার এবং প্রশিক্ষণের নামে জাল বিল তৈরি করে সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ডা. আশরাফুন্নেছাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন ডা. আশরাফুন্নেছাকে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর তিনি এড়িয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।

চলতি মাসের শুরুতে মো. সালাহউদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কাছে আসা অভিযোগগুলো যাচাই করছি।’

গত মাসে দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাইয়ের পর তারা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

আইইএম পরিচালক হিসেবে ২০১৮ সালে যোগ দেন ডা. আশরাফুন্নেছা। দ্য ডেইলি স্টার কথা বলার চেষ্টা করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago