প্রবাসে

ফ্রান্সের প্যারিসে ভবঘুরে

নান্দনিক স্থাপত্য শিল্পে সাজানো গোটা প্যারিস। কিন্তু এর সরণীতে, মেট্রো, ট্রেন, বাস স্টেশন, টিজিভি, এসএনসিফ'র প্লাটফর্মে, এখানে-সেখানে হাজারো লোক যাপন করছে তাদের যাপিত জীবন। বিচিত্র এক শহর!
ফ্রান্সের ভবঘুরে। ছবি: ওয়াহিদুজ্জামান মৃধা

নান্দনিক স্থাপত্য শিল্পে সাজানো গোটা প্যারিস। কিন্তু এর সরণীতে, মেট্রো, ট্রেন, বাস স্টেশন, টিজিভি, এসএনসিফ'র প্লাটফর্মে, এখানে-সেখানে হাজারো লোক যাপন করছে তাদের যাপিত জীবন। বিচিত্র এক শহর!

আধুনিকতার সব ছোঁয়া বিদ্যমান। বলা চলে মানবিকতারও রয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায়। এ দেশীয় সংস্কৃতিতে সন্তানদের সঙ্গে পারিবারিক বন্ধন ১৮ বছর পর্যন্ত। তারপর থেকে এ বন্ধন হয়ে দাঁড়ায় বিশেষ কোন আয়োজনে। অনেকের জীবনে শেষ বিদায়ে। তাও আবার জোটে না বেশির ভাগের। হয়তো এ জন্যই আমার মনে হয় এ দেশে পাগল বেশে থাকা লোকের সংখ্যা অন্য যে কোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। পেশাদার ভিক্ষুকের আধিক্যও কম নয়। একটি বিড়ি-সিগারেটের আবেদন তো অহরহ।

মানবিকতা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বলছি এ কারণে যে, আমাদের দেশে চোর-বাটপার, ডাকাত, অসাধু ও সন্ত্রাসীরা পুলিশের হাতে গেলে বেঁচে যায়। কারণ, রাষ্ট্র সেখানে অন্যায় প্রশ্রয় দেয়। আর এখানে প্রকাশ্যে পকেট মারলেও কেউ ধরছে না, কিছু বলছে না। শুধু তাকিয়ে থাকে, কেউ কেউ বিড়বিড় করে নিজে নিজে কিছু বলে। কারণ এটি পুলিশের দায়িত্ব। পথে-ঘাটে বা কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলেও একই রকম। কেউ চাইলে রাষ্ট্রীয় কয়েকটি নম্বরে কল করে শুধু জানিয়ে দিতে পারে। এরপর সব ব্যবস্থা রাষ্ট্রের।

আপনার কী হয়েছে না হয়েছে, টাকা আছে কি নেই, এ দেশি না বিদেশি, কাজ করেন, না বেকার সেটি প্রধান নয়। সর্বাগ্রে আপনার সেবা ও সুচিকিৎসা। তারপর অবস্থাভেদে হিসাব-নিকাশ, দেন-দরবার, দেনা-পাওনা ইত্যাদি। 

ভবঘুরেদের ব্যাপারে আসি। ভবঘুরে বলতে দূর থেকে যা বুঝি—'সংসার যন্ত্রণা ও ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে বের হয়ে অথবা নানা কারণে উদ্দেশ্যহীনভাবে যারা নিজের মতো করে জীবনযাপন করে, ঘুরে বেড়ায়।’ জানি না তারা এসব কারণে করে কিনা? তবে আমার মনে হয়, অনেকে আরো বিচিত্র কারণে নিজের ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় এ পথে। তবে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের জন্যও সব ধরনের সুব্যবস্থা রয়েছে।  নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে না থাকলেও রয়েছে খাওয়া-গোসল, চিকিৎসা, বস্ত্রের আয়োজন। তবে তারা স্থায়ীভাবে না থেকে এভাবে থাকাটাকে উপভোগ করে বলে মনে হয় দূর থেকে দেখলে। কিন্তু তাদের মনের বেদনা শুধু তারাই জানে। চর্ম চক্ষে তাকালে মনে হয়, এরা পাগল! কিন্তু কথা বললে, শুনলে বেশ শেখার-জানার ও বোঝার আছে তাদের অনেকের থেকে। আমার মতো করে আমি তাদের বুঝে নিয়েছি, ভাষাগত দুর্বলতার কারণে তা প্রকাশ করতে পারছি না!

তবে, ভবের এ পাগলদের সকলেই প্রকৃত পাগল নয়! তাদের অনেকেই ছিলেন উচ্চতর ডিগ্রিধারী, পেশাজীবী ও নানা ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল। হয়তো কোন এক কারণে নিজের পরিশ্রান্তির এ উপায় অবলম্বন! সবাইকে, এমনকি নিজেকেও ফাঁকি দিয়ে অনেকটা মনস্তাত্বিক শান্তি খুঁজে ফিরছে। স্বেচ্ছাসেবামূলক সংগঠন ‘La Rue Toune’র সঙ্গে কয়েক বছর যাবত কাজ করে আসছি। এ কাজের অভিজ্ঞতায় অনেক ভবঘুরেদের সঙ্গে ভাবের আদান-প্রদানে এমনটাই আমার হৃদয়পটে প্রতিফলিত হয়েছে যে, পারিবারিক সঠিক শিক্ষা, বন্ধন, পরিচর্যা ও সান্নিধ্যহীনতা এবং সামাজিক কোনো দায়বদ্ধতা না থাকাই দায়ী তাদের আজকের এ জীবনের জন্য।

লেখক: ফ্রান্সে শিশু তত্ত্বাবধান করার একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi-Americans eager to help build new Bangladesh

July uprising and some thoughts of Bangladeshi-Americans

NRBs gathered in New Jersey showed eagerness to assist in the journey of the new Bangladesh forward.

12h ago