সন্তানসম্ভবা মা ও তাদের শিশুদের অপেক্ষায় ১৪০টি ভূতুড়ে কেন্দ্র!

প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবার অস্তিত্ব নেই। যেখানে আছে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সেখানে পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। ফলে জরুরি অবস্থায় রোগীদের সময়মতো চিকিৎসা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। সন্তানসম্ভবা নারী এবং নবজাতকের যত্নের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সত্য। সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, সন্তানসম্ভবা মায়েরা কাছে কোনো চিকিৎসাসেবা না পাওয়ায় কী পরিণতি ভোগ করেন সেই চিত্র। কয়েক মাইল দূরে থাকা নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায় এবং এই পথও পারি দিতে হয় ঝুঁকিপূর্ণ যানবহনে। এই মা ও শিশুদের জন্য সারা দেশে প্রায় ১৫৯টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে সরকার। এসব কেন্দ্র থেকে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা। তাহলে আর সমস্যা কী?

বিস্ময়করভাবে সমস্যাটি হলো এই কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ১৪০টিতে কোনো চিকিৎসক বা কর্মচারী নেই। বেশ কয়েক বছর আগেই এই ১৪০টি কেন্দ্র তৈরি হয়ে গেলেও চিকিৎসক ও কর্মচারীর অভাবে এগুলো চিকিৎসা কেন্দ্র না হয়ে পড়ে আছে ভূতুড়ে কেন্দ্র হয়ে।

উদাহরণ হিসেবে দেখা যায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল সুনামগঞ্জের ধর্মপাশার কথা। সেখানে এমন দুটি নতুন কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু, তারপরও সন্তানসম্ভবা নারীদের প্রয়োজন হলে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রা করে যেতে হচ্ছে নিকটতম সরকারি হাসপাতালে। গত এক মাসে অন্তত তিন জন সন্তানসম্ভবা মায়ের প্রসবজনিত জটিলতা হওয়ায় তাদের যেতে হয়েছে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আর এর জন্য তাদের যাত্রা পথে নৌকায় পাড়ি দিতে হয়েছে বেশ দীর্ঘ পথ।

ধর্মপাশার রাস্তাগুলো সংকীর্ণ এবং নিকটস্থ হাসপাতালে যাওয়ার পথ মাত্র দুটি, মোটরসাইকেল ও নৌকা। একজন সন্তানসম্ভবা নারীর পক্ষে মোটরসাইকেলে যাত্রা করা সম্ভব না। আর জরুরি অবস্থায় ধীরগতির বাহন নৌকায় করে নিয়ে কীভাবে চিকিত্সা দেওয়া সম্ভব? প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অভাবের কারণে এই প্রত্যন্ত গ্রামগুলোর অধিবাসীরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য জটিলতা এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিতেও রয়েছেন।

প্রতিবেদন থেকে আমরা জেনেছি যে ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাধ্যমে সারা দেশে এমন ১৫৯টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে, এর মধ্যে কোনো কর্মী না থাকায় অকার্যকর ১৪০টি। এমন পরিস্থিতি কী করে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? আমাদের কি পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং অন্যান্য কর্মী নেই যারা এখানে সেবা দিতে পারেন?

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চিকিৎসক নিয়োগের জন্য বেশ কয়েক বছর আগেই আবেদন দেওয়া হয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে (পিএসসি)। কিন্তু, এখন পর্যন্ত নিয়োগ হয়নি। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসক নিয়োগের মতো এমন জরুরি ও অত্যাবশ্যক বিষয়ে পিএসসির উদাসীনতায় আমরা অবাক হয়েছি। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরকে অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে যে তাদের তৈরি কেন্দ্রগুলোতে কেন মেডিকেল কর্মী নেই। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অবহেলা করার জন্য পিএসসিকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে। চিকিত্সক, নার্স, মিডওয়াইফ ও অন্যান্য কর্মীদের অনতিবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে।

সরকারের মূল্যবান সম্পদ কীভাবে নষ্ট হয় এবং কেবল সদিচ্ছার অভাবে হাজারো মানুষ কীভাবে মৌলিক অধিকার চিকিৎসাসেবার অভাবে ভোগেন, এটি তার একটি বড় উদাহরণ। এই কেন্দ্রগুলো মা ও শিশুর কল্যাণে করা। এর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে?

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

6h ago