ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে ও পক্ষপাতমূলক: রাবি উপাচার্য
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে একপেশে ও পক্ষপাতমূলক বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আবদুস সোবহান।
আজ রাবির শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন উপাচার্য।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক আবদুস সোবহান বলেন, আমার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ যথাযথ হলে তা তদন্তে সম্মতি আছে। তবে সেই তদন্ত হতে হবে যথাযথ প্রক্রিয়া, আইনসিদ্ধভাবে গঠিত পক্ষপাতহীন তদন্ত কমিটির মাধ্যমে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন একপেশে এবং পক্ষপাতমূলক। সুতরাং আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’
নিজের মেয়ে ও জামাতাকে নিয়োগ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও রাবি শিক্ষক সমিতির অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই শিক্ষক নিয়োগ নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই এই নীতিমালাকে কোনোভাবেই উপাচার্যের মেয়ে ও জামাইকে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে, এমন বলার সুযোগ নেই।
সব অভিযোগ অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে উপাচার্য বলেন, শুধুমাত্র উপাচার্য পদে বসার জন্যই একটি মহল এ ধরনের অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি ৬২ জন শিক্ষক এবং দুজন চাকরি প্রার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত সম্বলিত ৩০০ পৃষ্ঠার একটি অভিযোগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও ইউজিসিতে দাখিল করে। এতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, অবৈধ নিয়োগের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
পরে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অভিযোগগুলো তদন্তে ইউজিসি একটি কমিটি গঠন করে।
তদন্ত শেষে গত বুধবার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে সুপারিশসহ সর্বমোট ৭৩৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি।
তদন্তে উপাচার্যসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যদের বিরুদ্ধে ২৫টি অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে বলে জানায় ইউজিসি। তার মধ্যে, উপাচার্য ইচ্ছাকৃতভাবে শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে তার কন্যা ও জামাতাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, এই অভিযোগের সত্যতা থাকার কথাও উল্লেখ করা হয়।
শিথিল করা এই নিয়মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে যে ৩৪ জন অপেক্ষাকৃত কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়োগ বাতিলের সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।
এছাড়া উপাচার্য আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ করে ইউজিসি।
তদন্তে অসহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুল বারীকে অপসারণের সুপারিশ করা হয়।
Comments