প্রবাসে

প্রবাসে দুর্গাপূজা ও বাঙালির মিলনমেলা

করোনার অতিমারীতে থমকে গেছে বিশ্ব, কিন্তু থেমে নেই ঋতুর পরিবর্তন। শারদীয় এই কাল মাতৃশক্তি বন্দনার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার।
দুর্গাপূজার নবমীর দিনে বাঙালির মিলনমেলা। ছবি: লেখক

করোনার অতিমারীতে থমকে গেছে বিশ্ব, কিন্তু থেমে নেই ঋতুর পরিবর্তন। শারদীয় এই কাল মাতৃশক্তি বন্দনার, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার।

পূজার এই দিনগুলো পরিবার ও প্রিয়জনদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করার মধ্যেই পূর্ণতা পায়। কিন্তু আমরা যারা প্রবাসে নিজেদের পরিবার থেকে দূরে, তারা আনন্দ খুঁজে নিই অন্য বাঙালিদের সাথে প্রিয় বাঙালিয়ানায়।

ছোটবেলায় পড়েছিলাম, নিজের অন্তরের গভীরের ভালোবাসা সমর্পণ করাকেই পূজা বলে। আর তাইতো দূর পরবাসে দেশের মতো আনন্দ আয়োজন না পাওয়া গেলেও অন্তরের গভীর থেকে মাকে শ্রদ্ধা জানানোর কোন কমতি থাকে না।

আমাদের বাঙালি চেতনায় প্রতিটি ধর্মীয় উৎসব ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার সাথে সামাজিকতায় অনন্য। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার শেষে আমরা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সামাজিক আনুষ্ঠানিকতায় একে-অপরের সাথে ভাতৃত্বে মিলিত হই। আমাদের বাঙালিদের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে পৃথিবীর  যেখানেই যাই না কেন, নিজের আনন্দ অনুভূতি প্রকাশে সবার আগে আরেকজন বাঙালি খুঁজে নিই কিংবা নেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্যে মিশে আছে অসাম্প্রদায়িকতার সুন্দর এক মানবিক অনুভূতি। আর তাইতো দেশের বাইরে পূজা কিংবা ঈদে জাতি-ধর্ম সবকিছুর ঊর্ধ্বে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই বসে বাঙালিদের  মিলনমেলা। যেখানে প্রতিটি অনুষ্ঠানে বাঙালিয়ানার কোন কমতি থাকে না কখনোই।

এবার দক্ষিণ কোরিয়ায় বেশ কয়েক জায়গায় পূজার আয়োজন হলেও গোয়াঞ্জু শহরের আয়োজন ছিল দারুণ এক মিলনমেলা।

চুন্নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ প্রফেসর তিতাস পালের বাসায় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দুই বাংলার অনেকের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে অনন্য করে তুলেছে। ৪০-৫০ জন বাঙালির এই অনন্য আয়োজনে মুখ্য ভূমিকায় ছিল সৌমিত্র কুন্ডু দাদা। শক্তি দা, মুশফিক ভাই কিংবা দুর্জয় ভাইয়ের সাথে আরও অনেকের পরিশ্রমে নবমীর দিনটি অন্যতম স্মরণীয় করে তুলেছে।

বাচ্চাদের হইচই আর সবার হাসিমুখে একখণ্ড অসাম্প্রদায়িক বাংলার ছবি। লুচি-পায়েশ ছাড়াও আয়োজনে ছিল নানারকম মুখরোচক খাবার। পেটপূজোর পর আড্ডায়, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছিল সবাই।  

এবারের মাতৃবন্দনায় স্বপ্ন দেখি অতিদ্রুত কেটে যাক এই করোনার অতিমারী। জগত-সংসার আবারো ফিরে আসুক স্বাভাবিকতায়। হিংসা-বিদ্বেষের বিপরীতে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসায় ভরে উঠুক পৃথিবী। প্রিয় কবি কাজী নজরুলের কথায় বলতে ইচ্ছে করে-

“মোরা এক জননীর সন্তান সব জানি

ভাঙব দেয়াল, ভুলব হানাহানি।”

লেখক: বিকাশ রায়, পিএইচডি গবেষক, দক্ষিণ কোরিয়া। সহকারী অধ্যাপক, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago